January 29, 2018 | 7:16 pm
বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম থেকে
মুখ থেকে এখনো কৈশোরের আভা যায়নি। একহারা শরীরে এখনো স্কুলব্যাগ চাপিয়ে দেওয়া যাবে চাইলেই। তবে নাঈম হাসানকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের মেঠো পথ থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ত রাজপথে চলে আসতে হচ্ছে হুট করেই। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ক্রিকেটার যে টেস্টে ডাক পেয়ে যাবেন, তা তো ভাবনাতেই ছিল না!
অফ স্পিনটাই ভালো করেন, সঙ্গে ব্যাটিংটাও মন্দ না। এখন পর্যন্ত মাত্র আটটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। তবে নির্বাচকেরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। অভিষেক হচ্ছে কি না এখনও বলা যাচ্ছে না, তবে ১৪ জনের দলে ডাক পাওয়াটাই তো তার কাছে ছিল বিশাল কিছু।
প্রচারমাধ্যমের সামনে কথাবার্তায় এখনও খুব একটা সড়গড় হতে পারেননি । মাথার টুপিটা ঠিক করে দেওয়া, এসবই বলে দিতে হলো পাশ থেকে। নাঈম শুধু অল্প করে জানালেন, এত দ্রুত ডাক পাওয়াটা আশা করেননি।
নিউজিল্যান্ডে চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলেই ছিলেন নাঈম। টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার সুযোগ পেয়ে উড়ে এসেছেন বাংলাদেশে। ভারতের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হারে মন খারাপ ছিল, ডাক পাওয়ায় সেই মেঘ কেটেছে অনেক খানি। এটুকু বলার পর নাঈম যোগ করলেন, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সিনিয়র মেহেদী হাসান মিরাজকেই মেনেছিলেন আদর্শ হিসেবে, ‘আমার ইচ্ছা ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর মিরাজ ভাইয়ের মতো ডাক পাব। এখন আগে পেয়েছি। তবে, এতো আগে পাব সেটা ভাবিনি।’
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি এটাই প্রথম নয়। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ঠিক আগে চট্টগ্রামে একটা অনুশীলন ক্যাম্প করেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে দলের সঙ্গে রাখা হয়েছিল নাঈমকেও। অনুশীলন ম্যাচে দুইটি উইকেটও নিয়েছিলেন। তখন বাংলাদেশের ওই সময়ের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বেশ প্রশংসা করেছিলেন তার। সেটি এখনো মনে আছে নাঈমের, ‘তখন উনি (হাথুরু) বলেছিলেন, এখন যা আছে সবই ঠিক আছে। চেষ্টা করবে নিজেকে প্রতিদিন একটু হলেও উন্নতি করার। আজকে একটু করব, কালকে একটু করব। স্পেসিফিক কিছু বলেনি।’
তবে তখনকার ড্রেসিংরুম আর এখনকার ড্রেসিংরুম তো আর এক নয়। এখন তিনিও আর সবার মতো দলের একজন সদস্য, শ্রীলঙ্কা-বধের ছকে তাকে রাখা হচ্ছে আর সবার মতো। দুই সময়ের পার্থক্যের কথাও ধরা পড়ল নাঈমের চোখে, ‘আগে অস্ট্রেলিয়ার সময় ক্যাম্পে ছিলাম। তখন একরকম ছিল এখন অনুভূতিটা অন্যরকম। সবাই অনেক হেল্পফুল। তখনও সবাই হেল্পফুল ছিল, এখন সবাই অভিনন্দন জানিয়েছে। তখন তো শুধু দলের সঙ্গে ছিলাম।’
অভিষেক হলে সেটা অবশ্য অন্যরকমই হবে। চট্টগ্রামই তার নিজের শহর, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম তো নিজেরই মাঠ। তার চেয়েও বড় কথা, এই মাঠেই জাতীয় লিগ, বিসিএল এমনকি বিপিএলেও অভিষেক হয়েছে। নাঈম নিজেই সেটি মনে করিয়ে দিলেন। অভিষেকের রোমাঞ্চটা যে তাকে পেয়ে বসেছে, তাও তো বোঝা গেল ভালোমতোই!
অফ স্পিনে নিজের মূল শক্তি মনে করেন উইকেট থেকে বাড়তি বাউন্স। আর টার্ন তো আছেই। অথচ তার নাকি স্পিনারই হওয়ার কথা ছিল না। শুরুতে পেস বোলিংই করতেন। ওই সময় উচ্চতায় খাটো ছিলেন বলে স্পিন করা শুরু করেন কোচের পরামর্শে। ভাগ্যিস করেছিলেন, নয়তো তাকে নিয়ে এই গল্প লেখা নাও হতে পারত!
সারাবাংলা/এএম/এমআরপি