বিজ্ঞাপন

ত্রাণের টাকা বাজার করতে শেষ, খোলা আকাশের নিচে বসবাস

May 22, 2019 | 6:26 am

মো. আতোয়ার রহমান মনির, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

লক্ষ্মীপুর: ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হানার দু-সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার অভাবে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ত্রাণ সহায়তা যেটুকু পেয়েছিল তা শেষ হয়ে গেছে বাজার খরচের জন্য। ফলে ঘর-বাড়ি মেরামত করতে না পেরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের।

বিজ্ঞাপন

অনেক পরিবারে অভিযোগ, ঝড়ের পর সাহায্য হিসেবে শুধু শুকনো খাবার ছাড়া আর কিছু পাননি। বর্ষার আগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও উৎকণ্ঠা দেখা গেছে অনেকের মধ্যে।

তবে জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল জানান, ইতোমধ্যে শুকনো খাবারসহ ৭০ বান্ডেল ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে। তা ছাড়া উপজেলা পর্যায়ের ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্ধ পাওয়ার পর পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে বিধ্বস্ত হয় লক্ষ্মীপুরে রামগতির চরআলগী, চরআবদুল্লাহ ও চররমিজসহ বিভিন্ন এলাকার তিন শতাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে নিজেদের অর্থে ভাঙা ঘরবাড়ি কিছুটা মেরামত করলেও অনেকেই সরকারি এক বান্ডেল ঢেউটিন ও ২০ কেজি চাউলসহ নগদ ৩ হাজার টাকা সংসারের খরচ মেটাতে ব্যয় করেছেন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফণীর আঘাতে জেলার ১২০টি ঘর সম্পূর্ণ ও ২৮৭টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলোর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়া অর্ধশত পরিবার এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে রামগতির চরআলগী ইউনিয়নের চর নেয়ামত এলাকার আব্দুল হাকিমের স্ত্রী আল্পনা জানায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে তার ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে। এখন পর্যন্ত এক ভ্যান ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা ও কিছু শুকনো খাবার পেয়েছেন। তবে তার ঘর ঠিক করতে আরও টাকার প্রয়োজন এখনো ঘর-বাড়ি মেরামত করতে পারেননি। সরকারের দেওয়া ৩ হাজার টাকা বাজার করতে শেষ হয়ে গেছে।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ সোহেল জানান, অনেকের মতো আমার ঘরটা হয়তো পুরোপুরি ভাঙেনি তবে টিনের চাল একেবারেই দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা পাননি।

ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়া চর নেয়ামত এলাকার জমির আলীর স্ত্রী রুনা আক্তার জানান, ১৪ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হচ্ছে তাদের। সরকারের পক্ষ থেকে যে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়েছে, তা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০ কেজি চাল ও এক বান্ডিল টিন দিয়ে এক চালা একটি ঘরও দাঁড় করানো যায় না।

বিজ্ঞাপন

রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ জানান, অনেকের ঘর ভেঙে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে সামান্য সাহায্য ছাড়া বড় ধরনের কোনো সহযোগিতা পাননি কেউ। আর্থিক সংকটের কারণে তারা ঘর মেরামত করতে পারছেন না। যাদের ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে প্রয়োজন হবে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকার। ইতোমধ্যে সরকারি যে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে তা তাদের জন্য কোনো কাজে আসছে না।

জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল  বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের জন্য আরও সাহায্য চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে রামগতিতে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ঢেউটিন, শুকনো খাবার, চালসহ নগদ ৩ হাজার টাকা করে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতার  চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন।’

সারাবাংলা/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন