বিজ্ঞাপন

‘কৃষকের সমস্যার সমাধান না করে ধান কাটার নাটক চলছে’

May 23, 2019 | 3:02 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবিতে চট্টগ্রামে মানববন্ধন এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রান্তিক কৃষকেরা এসে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে কৃষক সমিতি, চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা। রোদ ও গরমের তীব্রতা উপেক্ষা করে কৃষকরা মিছিল নিয়ে আসেন কর্মসূচিতে।

মানববন্ধনে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি আব্দুল নবী বলেন, ‘সদ্য ঘরে তোলা বোরো ধানের দাম পাচ্ছে না কৃষক। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। দাম না পেয়ে জমিতেই পাকা ধান পুড়িয়ে দিচ্ছে কৃষক। সরকার ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। কিন্তু ক্রয় কেন্দ্রের দূরত্ব ও কর্মচারিদের দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে কৃষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়া সিন্ডিকেটের কাছে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষক সমিতির সহ-সভাপতি তাজুর মুল্লুক বলেন, ‘দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছে কৃষক। অথচ তাদের ঘরে ভাত নেই। তাদের পকেটে টাকা নেই। তাদের উৎপাদিত ফসলের টাকায় ধনী হচ্ছে রাইস মিল মালিকরা। সরকার মুনাফালোভী রাইস মিল মালিকদের সুরক্ষা দিচ্ছে। কৃষক যখন প্রতিবাদ করছে, তখন দলে দলে শাসকগোষ্ঠীর লুটপাটের অংশীদাররা মাঠে নেমে কৃষকের ধান কেটে দেওয়ার নাটক করছে। আজ কৃষকদের হাসি-ঠাট্টার পাত্র বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। অথচ কৃষকদের সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে না।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি কামাল সাত্তার বলেন, ‘সরকার ধান কেনার ঘোষণা দিয়েছে। অথচ ধান সংরক্ষণের জায়গা নেই। দেশে চালের কোনো সংকট নেই। অথচ চাল আমদানি করা হচ্ছে। আজ দেশে কৃষকের যে দূরবস্থা, তার জন্য সরকারই দায়ী। এই সরকার কৃষকবান্ধক সরকার নয়। লুটপাটকারী সিন্ডিকেটবান্ধব সরকার।’

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা। তিনি বলেন, ‘যারা এসি রুমে বসে রাষ্ট্র চালায় তারা কিন্তু মাঠে নামে না। যারা টেলিভিশনে বড় বড় বক্তৃতা দেয়, তারা কিন্তু মাঠে নামে না। যে কৃষক গায়ে-গতরে খেটে ফসল ফলায়, তাদের কষ্ট এসি-রুমের শাসকদের বোঝার কথা নয়। দীর্ঘসময় ধরে শোষক-লুটপাটকারীদের প্রতিনিধিত্ব করা শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার কারণে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের আজ চোখ-কান-মগজ হারিয়ে গেছে। এই রাষ্ট্র কৃষকের রক্ত পানি করা শ্রমের মূল্য দিতে জানে না।’

অশোক সাহা বলেন, ‘এই শাসকগোষ্ঠী গণবিরোধী শাসক। এই শাসক কৃষক-শ্রমিকের অধিকারবিরোধী। কত কষ্ট থেকে একজন কৃষক তার ফলানো ফসলে আগুন দেয়, সেটা এই সরকারের মন্ত্রীরা বোঝেন না। এই গণবিরোধী শাসকের বিরুদ্ধে কৃষক-শ্রমিক, গরীব-মেহনতি মানুষ সবাইকে এক হতে হবে। গণবিরোধী লুটপাটতন্ত্র ভেঙ্গে দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বক্তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চালু করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দামের ক্ষেত্রে কৃষকের যাতে লাভ থাকে, সেভাবে মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঘোষিত দেশব্যাপী ‘কৃষক বাঁচাও সপ্তাহ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই মানববন্ধনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক পুলক দাশ ও সহ-সম্পাদক অনুপম বড়ুয়া পারু এবং সংহতি জানিয়ে জেলা ছা্ত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আতিক রিয়াদ এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শাহরিয়ার জাহান রাফি বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধন শেষে কৃষকরা মিছিল নিয়ে নগরীর জামালখানের প্রেসক্লাব চত্বর থেকে আদালত ভবনসংলগ্ন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। সেখানে তারা বিক্ষোভ করেন।

সারাবাংলা/আরডি/জেএএম

বিজ্ঞাপন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন