অস্বস্তির ম্যাচে মুশফিক-লিটনের ব্যাটে স্বস্তি

বিশ্বকাপ ডেস্ক

পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়ানোর আগেই পরিত্যক্ত হয়েছিল, তাই তো ভারতের বিপক্ষেই নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার একমাত্র সুযোগ পায় টাইগাররা। বোলাররা টিম ইন্ডিয়াকে আটকে রাখতে না পারলেও টাইগারদের ব্যাটিংটা বেশ ভালোই হলো। যদিও স্কোরবোর্ড বলছে বাংলাদেশ হেরেছে ৯৫ রানের ব্যবধানে।

বিশ্বকাপের মূল মঞ্চের লড়াই শুরুর আগে দ্বিতীয় এবং শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩৬০ রানের বিশাল টার্গেট ছুঁড়ে দেয় ভারত। জবাবে, ৪৯.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ২৬৪ রান। ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন মুশফিক। দারুণ ব্যাটিং করেছেন লিটন দাস। ওপেনিংয়ে লিটন-সৌম্যর জুটিটাও বেশ ভালোই হয়েছে।

তামিম ইকবাল ছিলেন বিশ্রামে। তামিম ছাড়া ওপেনিং জুটিতে লিটন দাস-সৌম্য সরকার ৪৯ রান তুলে নেন। দশম ওভারে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে আউট হওয়ার আগে সৌম্য ২৯ বলে ৩ চার আর একটি ছক্কায় করেন ২৫ রান। পরের বলেই বোল্ড হন সাকিব। দলীয় ১৬৯ রানের মাথায় বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস। মুশফিকের সঙ্গে জুটি গড়েন ১২০ রান। ৩২তম ওভারে চাহালের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিদায়ের আগে লিটন ৯০ বলে ১০ বাউন্ডারিতে করেন ৭৩ রান। পরের বলেই এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন মোহাম্মদ মিঠুন।

১৯১ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন ৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশ পঞ্চম উইকেট হারায়। ২১৬ রানের মাথায় বিদায় নেন ৯০ রান করা মুশফিক। কুলদীপ যাদবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মুশফিক ৯৪ বলে আটটি চার আর দুটি ছক্কা হাঁকান। আগের দুবারের মতো এবারো পর পর দুটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মুশফিকের বিদায়ের পরের বলেই মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না হতেই জাদেজার বলে বোল্ড হন ৭ রান করা সাব্বির রাহমান।

৪৯তম ওভারে যুভেন্দ্র চাহালের তৃতীয় শিকারে বিদায় নেন সাইফউদ্দিন। তার আগে ২৫ বলে ১৮ রান করেন এই পেস অলরাউন্ডার। মেহেদি হাসান মিরাজ ৩০ বলে ২৭ রান করেন। রুবেল হোসেন ০ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ৩৫৯ রান। সেঞ্চুরি করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং লোকেশ রাহুল।

ওয়েলসের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর কথা থাকলেও বৃষ্টিতে সঠিক সময়ে নামা হয়নি দুই দলের। পরে বৃষ্টি থেমে গেলে ৯ মিনিট পর শুরু হয় ম্যাচটি। মোস্তাফিজের করা প্রথম ওভারের দুটি বল হতেই আবারো বৃষ্টি শুরু হয়। বিনা উইকেটে ৪ রান তোলে ভারত। পরে দুই দলই মাঠ থেকে উঠে যায়।

বৃষ্টির পর আবারো মাঠে নেমে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে। এলবির ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ৯ বলে ১ রান করা ধাওয়ান। দলীয় ৫ রানেই প্রথম উইকেট হারায় ভারত। এরপর দলীয় ৫০ রানে ১৯ রান করা রোহিত শর্মাকে বোল্ড করেন রুবেল হোসেন। দলীয় ৮৩ রানের মাথায় বিদায় নেন দলপতি বিরাট কোহলি। ৪৬ বলে ৫টি বাউন্ডারিতে ৪৭ রান করেন কোহলি। ভারতীয় দলপতিকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। ২২ ওভারের শেষ বলে রুবেলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তোলেন বিজয় শঙ্কর। মুশফিক সহজেই ক্যাচটি তালুবন্দি করেন।

১৬৪ রানের জুটি গড়েন লোকেশ রাহুল এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। ইনিংসের ৪৪তম ওভারে সাব্বির বিদায় করেন রাহুলকে। সাব্বিরের বলে বোল্ড হওয়ার আগে রাহুল করেন ১০৮ রান। তার ৯৯ বলের ইনিংসে ছিল ১২টি চার আর ৪টি ছক্কার মার। দলীয় ২৬৬ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় ভারত। ৪৭তম ওভারের তৃতীয় বলে সাকিবের বলে মারতে গিয়ে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন হার্দিক পান্ডিয়া। আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ২১ রান করেন তিনি।

মহেন্দ্র সিং ধোনি ইনিংসের ৪৯তম ওভারে আবু জায়েদ রাহিকে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। শেষ ওভারে সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেন ১১৩ রান। ধোনির ৭৮ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল ৮টি চার আর ৭টি ছয়। দীনেশ কার্তিক ৭ এবং রবীন্দ্র জাজেদা ১১ রানে অপরাজিত থাকেন।

রুবেল হোসেন (৮ ওভারে ৬২ রান) এবং সাকিব (৬ ওভারে ৫৮ রান) দুটি করে উইকেট পান। একটি করে উইকেট পান মোস্তাফিজ (৮ ওভারে ৪৩ রান), সাইফ (৬ ওভারে ২৭ রান) এবং সাব্বির (৫ ওভারে ৩০ রান)। মিরাজ (৫ ওভারে ৪০ রান) এবং মাশরাফির (৬ ওভারে ২৩ রান) মতো উইকেট শূন্য ছিলেন রাহি (৩ ওভারে ৪১ রান), মোসাদ্দেকরা (৩ ওভারে ৩২ রান)।

বিশ্বকাপ মিশনে নামার আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। আর নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছে টাইগাররা। সেটিও আবার অপরাজিত থেকে। ব্যাটসম্যানদের ব্যাটেও আসছে ধারাবাহিক রান। সব মিলিয়ে মাশরাফির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আছে দুর্দান্ত ফর্মে।

ম্যাচটি কোনো সাবস্ক্রিপশন ফি ছাড়াই অনলাইনে দেখা যায় আইসিসির ব্রডকাস্টিং পার্টনার র‍্যাবিটহোলেবিডি’র নিজস্ব ওয়েবসাইটে। এজন্য পাঠককে ভিজিট করতে হয় www.rabbitholebd.com ঠিকানায়।

সারাবাংলা/এমআরপি