বিজ্ঞাপন

শপথ নেওয়ায় বিএনপিতে অনৈক্য, বললেন শীর্ষ নেতারা

May 29, 2019 | 3:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে হুট করে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেওয়ায় বিএনপির সব স্তরে অনৈক্য-বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে খোলামেলা আলোচনার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৯ মে) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা এ তাগিদ দেন। দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

আরও পড়ুন- বিএনপিতে এক ব্যক্তির কর্তৃত্ব, চাপা ক্ষোভ শীর্ষ পর্যায়ে

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনের পর দলীয়ভাবে আমরা ফল প্রত্যাখান করেছিলাম। সংসদকে অনির্বাচিত, অবৈধ সংসদ হিসেবে অভিহিত করেছিলাম। সে কারণে আমরা এই সরকারের অধীনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি নাই। যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন (প্রায় ২১০ জন), তাদের বহিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু হুট করে শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ায় আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই বিভ্রান্তি দূর করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারা জেল খেটেছে, আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। এমনকি মৃত্যুবরণ করেছে। হঠাৎ করে এই সংসদে যোগ দেওয়ায় সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিএনপির বর্তমান অবস্থান নিয়ে শত শত প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের দিত হবে। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে আমাদের ভুল-বোঝাবুঝি দূর করতে হবে।’

তবে এ ধরনের বিষয় নিয়ে দলে ক্ষোভ থাকা ভালো উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই বিভ্রান্তি যদি আমরা পরিষ্কার করতে না পারি, তাহলে জাতীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। আমাদের কোটি কোটি সমর্থক থাকবে, বাংলাদেশে আমাদের সর্ববৃহৎ সংগঠন থাকবে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করতে পারব না।’

বর্তমান সময়কে বিএনপির জন্য বড় ধরনের সংকটকাল উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী অসুস্থ এবং কারাবন্দি। তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। আমরাও তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় আট হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছেন। আর দেশে চলছে একদলীয় নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসন। তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে ঐক্য বজায় রাখা।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের আপনারা যারা নেতা বলেন, তারা যদি মনে করেন আমরা ব্যর্থ হয়েছি, তাহলে  নতুন নেতৃত্ব খোঁজেন। তারপরও দলকে শক্তিশালী রাখুন।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের কাছে চির স্মরণীয়। এই জন্যই মানুষ যখনই সুযোগ পায় ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে। সেই জন্যই আওয়ামী লীগের নেতারা জিয়াউর রহমান, তার পরিবার ও বিএনপিকে নিয়ে ভীত-আতঙ্কিত।’

তিনি বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আমাদের উপলব্দি করতে হবে তার আদর্শ কী ছিল, এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশি জাতীয়বাদের ভিত্তিতে তিনি কী উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটা আমাকে-আপনাকে ভালভাবে আত্মস্থ করতে হবে এবং সেই দর্শনকে সামনে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

‘গণতন্ত্র বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ডাইমেনশন। শহীদ জিয়া গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, বেগম জিয়া লড়াই করেছেন। এখন এই গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্ত করতে হলে বিএনপিকে লড়াই করতে হবে’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিজ্ঞাপন

বিএনপিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তার আগে আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি শুধু একটি কথা আপনাদের বলতে চাই, অনেকেই হতাশার কথা বলেন, আমি কখনও হতাশার কথা বলি না, বলতে চাই না, বিশ্বাসও করি না। আমি মনে করি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে আদর্শ, তার যে দর্শন, তার যে চিন্তা-চেতনা—তা কখনও ব্যর্থ হবে না। খালেদা জিয়ার যে অবদান, তার যে ত্যাগ স্বীকার— তা কখনও ব্যর্থ হবে না। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপিকে ভালবাসে, জিয়াউর রহমানকে ভালবাসে, দেশনেত্রীকে ভালবাসে। অবশ্যই তারা রুখে দাঁড়াবে, বিএনপি রুখে দাঁড়াবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করবে।’

তিনি বলেন, ‘আজ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় সরকার। তাই আজকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমাদের এই শপথ নিতে হবে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমরা বিভক্তির চিন্তা করব না, আমরা বিভাজনের চিন্তা করব না। আমরা জিয়াউর রহমানের রাজনীতি অনুসরণ করে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করব এবং বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন