বিজ্ঞাপন

যেভাবে ছিঁচকে চোর থেকে ডাকাত সরদার

November 24, 2017 | 2:25 pm

সারাবাংলা প্রতিবেদক

বিজ্ঞাপন

ডাকাত সরদার বিল্লাল হোসেন সেলিম বিকেলে গ্রেফতার হওয়ার পর গভীর রাতে খিলগাঁও থানা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, ডাকাত সরদারকে নিয়ে অভিযানে গেলে বন্দুকযুদ্ধে বিল্লাল নিহত হন।

গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টায় মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ডাকাত সরদার বিল্লালকে নিয়ে সহকারী কমিশনার নাদিয়া জুইয়ের নেতৃত্বে খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমানসহ পুলিশের একটি দল খিলগাঁও থানার শেখের জায়গা নামক ( মাঝির ঘাট বলেও পরিচিত) স্থানে বাকি ডাকাত সদস্যদের ধরতে অভিযানে যায়। সেখানে আগে থেকে ওঁতপেতে থাকা ডাকাত সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। বাধ্য হয়ে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এসময় বিল্লাল হোসেন সেলিম গুলিবিদ্ধ হন। একই সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। আর অন্য ডাকাত সদস্যরা পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ সেলিমকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি শর্টগান ও ৫ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। ডিসি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে অত্যাধুনিক এই শর্টগানটি অন্য কোথাও থেকে চুরি করেছে। তবে তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।

তিনি আরো বলেন, সেলিমের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার নলুয়া বাজার চেয়ারম্যান বাড়ীর পাশে। তার বাবার নাম মৃত সৈয়দ আলী ওরফে আলী হোসেন ভাঙ্গারী। মায়ের নাম কুলসুম বেগম। ২০০৮ সালের দিকে গাড়ি চুরিতে নাম লেখানোর মধ্য দিয়ে অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন। এরপর সে চোর চক্রের লিডার হয়ে যান। ২০০৯ সালে মোহাম্মদপুর থানায় তার নামে চুরির মামলা (১০৯/৩) হয়। ২০১০ সালে কাফরুল থানায় (৬১/৭) একটি ও রমনা থানায় (১২/৯) একটি মামলা হয়। ২০১১ সালে চট্টগ্রাম পাহাড়তলী থানায় (৬/১২) একটি ও ২০১২ সালে চট্টগ্রাম জেলার কোতয়ালী থানায় (৫২/১) একটি মামলা হয়। ২০১৩ সালে মিরপুর থানায় (৬৮/১২) একটি মামলা হয়। ২০১৪ সালে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা (৩৯/২) ও নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি মামলা (৩৪/৩) হয়।  ২০১৪ সালে ওয়ারী থানায় আরো একটি মামলা (১৬/২) হয়। সবশেষ তার নামে ২০১৭ সালের অক্টোবরে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা (৪৮/১০) হয়। মোট ১০টি মামলার বেশির ভাগই ডাকাতি সংঘটিত হওয়ার মামলা। মামলা ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে জানা যায়, বিল্লাল একজন ডাকাত সরদার। প্রায় সারাদেশেই তার অপরাধের জাল বিস্তৃত রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার শিবলী নোমান সারাবাংলাকে বলেন, বিল্লাল হোসেন সেলিম এমন একজন ডাকাত সরদার। যাকে ডাকাত তৈরির কারখানা বলে থাকে তার সহযোগীরা। তার কৌশল হলো, একটি দলের কেউ ধরা পড়লে নতুন আরেকটি ডাকাত দল গঠন করে। যাতে কোনোভাবেই ডাকাতি করা বন্ধ না থাকে।

তার বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে যত গাড়ি চুরি হতো প্রত্যেকটির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। পরে সে চুরি ছেড়ে ডাকাতিতে নাম লেখায়। তবে ওই সময় বিল্লাল পুলিশের কাছে বলেছিল, গাড়ি চুরি করা সহজ ও ঝুঁিক কম। ঝামেলা নেই বলতেই চলে। আর চুরি করা গাড়ি সহজেই বিক্রি করা যায়। তাই বাসা বাড়ি চুরি করতো না। কারণ বাসা বাড়িতে চুরি করতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়।

খিলগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, গত অক্টোবর মাসে খিলগাঁওয়ের একটি বাসায় ঢুকে তিন মাসের শিশুকে জিম্মি করে ডাকাতি করে কয়েকজন ডাকাত। এমনকি পিকাপ ভ্যান ঢুকিয়ে বাসার সকল মালপত্র নিয়ে যায়। ঘটনার পর পুলিশ দুই ডাকাতকে গ্রেফতার করে। রিমান্ডে দুই ডাকাত বিল্লাল হোসেন সেলিমসহ আরো বেশ কয়েকজনের সম্পৃক্ত থাকার কথা বলেন। এরপর তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ঘটনা তদন্তে পুলিশ জানতে পারে বিল্লালের জীবন কাহিনী। ২৩ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে তাকে নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় থেকে গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

ওসি বলেন, ছিঁচকে চুরি থেকে বিল্লাল ডাকাত সরদার হয়ে ওঠে। বহু বছর থেকেই এলাকা ছাড়া সে। বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজ করতেন।

ওসির ভাষ্য অনুযায়ী, ডাকাত সরদার বিল্লালের সহযোগীরা হলেন রফিকুল ইসলাম, শফিক রহমান, সিদ্দিক, হান্নান, হাবিল, আলমগীর হোসেন, সাগর, লিংকন, রনি, বেলায়েত, ফেদু, মামুন, হেল্লাল, বাবুল হোসেন, সজীব, সুমন, রাসেল, আমির, শাহিন, বিশাল, আসাদুল, জুয়েল, নজরুল, মিরাজ, পারভেজ, রাজ, সিরাজ, রফিক, মোস্তাফিজুর রহমান প্রিন্স, তৌফিকুল ইসলাম ওরফে রন্টি, ফয়সাল ওরফে তন্ময়, আশিকুর রহমান, সেলিম ওরফে সালাম, জামাল উদ্দিন, আল বাহার, রাজিব মোল্লা, সবুজ, জহির নুরুন নবী, মইন উদ্দিন ওরফে মইন, মাহবুব, হাফেজ বাবুল মিয়া, চাঁদপুরের ইকবাল হোসেন, দিনাজপুরের আলমগীর হোসেন, জামালপুরের জাকিউল ইসলাম, কর্ণফুলী থানার দক্ষিণ শাহজীপুরের শুক্কুর ও শাহজাহান, আনোয়ারা গহিরা এলাকার আব্দুল আজিজ ও ফটিকছড়ির মহিউদ্দিন।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন