বিজ্ঞাপন

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৭ শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু

July 16, 2019 | 11:14 pm

জাহিদুল ইসলাম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা এবং বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু।

বিজ্ঞাপন

সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নৌকা ডুবে চার শিশুসহ পাঁচজন এবং বন্যার পানিতে ডুবে তিনশিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নতুন অনন্তপুর এলাকায় নৌকা ডুবে চার শিশুসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, নৌকায় থাকা আরও দুইজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা জানান, নতুন অনন্তপুর গ্রামের কয়েকজন নারী ১৪ থেকে ১৫ শিশুকে নিয়ে একটি ডিঙ্গি নৌকায় পাশের বিলে যান। অতিরিক্ত ভারে নৌকাটি ডুবে যায়। স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের উদ্ধার করে। এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কয়েকজনকে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ সময় পথেই দুইজনের মৃত্যু হয়।

তারা আরও জানান, নৌকা ডুবে যাওয়া পরে রুনা বেগম (৩৫) তার শিশু সন্তানকে ভাসিয়ে রেখেছিলেন। স্থানীয়রা সাঁতরে শিশুটিকে উদ্ধার করে। তবে দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বাকি চার শিশু হলো, মনছুর আলীর ছেলে মোরসালিন সুমন (১০), একই গ্রামের মহসিন আলীর মেয়ে রুপা মনি (৮), আয়নাল হকের ছেলে হাসিবুল (৭) এবং রাশেদের মেয়ে রুকু মনি (৭)। তাদের সবার বাড়ি অনন্তপুর গ্রামের ব্যাপারীপাড়ায়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও নাগেশ্বরী উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় দুই যুবক। এদের মধ্যে এক যুবকের মরদেহ পাওয়া গেলেও অন্যজন নিখোঁজ। মরদেহ উদ্ধার ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

এরা হলেন, রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২৩) ও নাগেশ্বরী উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের মাদাইখাল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ.ন.ম মুসার ছেলে আল মামুন (৪০)।

নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন কবির সারাবাংলাকে জানান, মাদাইখাল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আ.ন.ম মুসা সোমবার (১৫ জুলাই) তার বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মুসার বড় ছেলে আল মামুন নাগেশ্বরী উপজেলা শহর থেকে তাকে নিতে বাড়িতে আসছিলেন। পথে বন্যার পানির স্রোতে মাদাইখালে তলিয়ে যান। অনেক খোঁজার পরে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তার মরদেহ উদ্ধার করে।

বিজ্ঞাপন

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মো. দিলওয়ার হাসান ইনাম জানান, রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ী এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে। আজ (মঙ্গলবার) সকালে সাইফুল বাড়ির কিছু জিনিসপত্র কলা গাছের ভেলায় নিয়ে নিরাপদে রাখতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পানিতে পড়ে যায়। এরপর পরে তাকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মরদেহ উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা অভিযান চালাচ্ছে।

এর আগে গত রোববার ও সোমবার দু’দিনে পানিতে ডুবে চিলমারীতে দুইজন এবং উলিপুরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম সারাবাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি কিছুটা কমেছে। এখনো পানিবন্দি রয়েছে নয়টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের ৪০৭টি গ্রাম।

বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষ। চরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, নয়টি উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ৫শ’ মেট্রিক টন চাল, দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন করে এক হাজার মেট্রিক টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ৮৫টি মেডিকেল টিম বন্যার্তদের স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে।

কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলা এবং সোনাহাট স্থল বন্দরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে রৌমারী উপজেলার চাক্তাবাড়ী এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের প্রায় দেড়শ ফুট ধসে গেছে। এতে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ৩০টি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৩৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানাচ্ছে, প্রায় নয় হাজার ৯৪২ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমের সবজি, বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে।

সারাবাংলা/এটি

Tags: , , , , , , , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন