বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারকে ১৬ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গাদের তালিকা দেবে বাংলাদেশ

February 6, 2018 | 9:21 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে । ওই বৈঠকে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের তালিকা ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিডোকে দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ। একাধিক সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক মঙ্গলবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তো চাচ্ছি অনেক কিছু করতে। দেখি তিনি (মিয়ানমারের মন্ত্রী) আসুন, আসলে দেখা যাবে।’

জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির অন্য একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে জানান, ১০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে, মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সেটি দেওয়ার কাজ করছি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, মঙ্গলবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বে ঢাকায় থাকা জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়। এতে চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতির জন্য দুইটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শরণার্থী শিবিরের রোহিঙ্গাদের তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের জন্য গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানকে। মাঠ পর্যায়ে প্রত্যাবাসন কাজের তদারকির জন্য গঠিত কমিটির প্রধান হচ্ছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি। প্রতিটি কমিটিতে ছয় থেকে আটজন করে সদস্য থাকছেন বলে পরারাষ্ট্র সচিব এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। আজকালের মধ্যে কমিটি দুটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসন ফ্রম রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা হয়। ওই চুক্তি অনুষ্ঠানে দুই মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারির মধ্যে রোহিঙ্গ প্রত্যাবাসন শুরুর বলা হয়েছিল। কিন্তু জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিয়ানমারের সময়ক্ষেপণের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘সরকার চাইলে আমরা চেষ্টা করব। দ্রুত কাজ করার চেষ্টা করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তালিকা দেব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কত সংখ্যক রোহিঙ্গার তালিকা দিতে পারব সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমরা চাচ্ছি প্রক্রিয়াটা শুরু করতে। আশা করি সফল হতে পারব।’

বৈঠকে অংশ নেওয়া জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে তালিকা দেওয়ার পর মিয়ানমার সেটা যাছাই-বাছাই করবে। এ সময় মাঠ পর্যায়ের কমিটির সদস্যরা রাখাইন সফরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য সে দেশের সরকারের কার্যক্রম দেখে আসবেন, এমন চিন্তা রয়েছে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের।’

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জানুয়ারি পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক এ সংগঠনটি যে পারিবারিক ইউনিট অনুযায়ী শরণার্থীদের সাহায্য দিচ্ছে সেটির তালিকা সরকারকে দিয়েছে। সে অনুযায়ী পাসপোর্ট অধিদফতরের করা বায়োমেট্রিক ক্রসচেক করছে সরকার। এর পরপরই চূড়ান্ত তালিকা করে মিয়ানমারের কাছে দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

এক প্রশ্নের জবাবে বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন যুগ্মসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা তালিকা দিলে তারা যেমন সেটা যাছাই-বাছাই করবে তেমনি, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তারা রোহিঙ্গাদের জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটাও দেখতে যাব।’

এর কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা মারাত্মক একটা নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। আমরা মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাই ফেরত যাওয়ার পর তারা যেন মানবিক মর্যাদা পান সেটার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে টেকসই সমাধানের বিকল্প কোনো পথ নেই।’

মেরামত হচ্ছে পাঁচ ক্যাম্প:

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের যে পাঁচটি ক্যাম্প ব্যবহার করা হবে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো ১৯৯২ সালের তৈরি করা। টেকনাফের গুনধুম, আঞ্জুমান পাড়া, নয়া পাড়া, ধুমধুমিয়া এসব ক্যাম্প দীর্ঘ দিন অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। তাই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই এসব ক্যাম্প সংস্কার করা হচ্ছে।

ক্যাম্পে যাওয়ার সময় প্রত্যেক ব্যক্তি সাত দিন খেতে পারেন এমন খ্যাদ্য সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যেই তাদেরকে বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের তুংপাই লেভিয়া ও লগা খেইয়া ক্যাম্পে পাঠানো হবে।

আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রথমেই বাংলাদেশ অংশের পাঁচটি ক্যাম্পের সবগুলো মেরামত করতে অনেক সময় লাগবে। তাই প্রথম দিকে দুইটি ক্যাম্প মেরামত করে প্রত্যাবাসন কাজটি শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে বেশি আকারে প্রত্যাবাসন শুরু হলে অন্য ক্যাম্পগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হবে।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ঢাকায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি মিয়ানমারের নেপিডোতে গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের পক্ষে ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্টের দুটি কমিটি হওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরও একধাপ অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

গণকবরের ওপর বুলডোজার চালাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী:

মিয়ানমারের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি দল রাখাইন যেতে চাইলে মিয়ানমার তাতে রাজি হতে পারে। আর একারণেই মিয়ানমারের গণকবর ও পুড়িয়ে-গুড়িয়ে দেওয়া বাড়ি ঘরগুলোর নিশানা নিশ্চিহ্ন করতে সেখানে বুলডোজার চালিয়ে সমতল করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে ঘাস লাগিয়ে বা কৃষি জমির মতো অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টির কাজ করছে সে দেশের সেনাবাহিনী।

গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অবর্ননীয় নির্যাতন শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে নামে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঢল শুরু হয়। নতুন করে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ইতোমধ্যে প্রায় সাত লাখে পৌঁছেছে। এর আগে থেকে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১১ লাখ মানুষ রয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গ নির্যাতনকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা গণহত্যা বলে অভিহিত করেছেন।

আন্তর্জাতিক সমাজের তীব্র সমালোচনার মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত নভেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে মিয়ানমার। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাহানা দেখিয়ে সময়ক্ষেপন করছে দেশটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থণের কারণে মিয়ানমার এখনো ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে।

সারাবাংলা/জেআইএল

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন