বিজ্ঞাপন

৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে সাধারণে আতঙ্ক-উদ্বেগ

February 7, 2018 | 9:50 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: বৃহস্পতিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায়। এরই মধ্যে রায়ের দিনটিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ রয়েছে সতর্ক অবস্থায়। সব মিলিয়ে এক ধরনের প্রস্তুতি। যেনো কোনও অঘটন ঘটতে চলেছে ৮ ফেব্রুয়ারি। আর এসব প্রস্তুতি ও নির্দেশনায় ঢাকাসহ সারাদেশে সাধারণের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি কী হতে যাচ্ছে!

বুধবার দিনভর ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

মতিঝিল রুপালি ব্যাংকে চাকরি করেন তানজিমুল হক। মধ্যবয়সী এই ব্যাংকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে সরকার কী করতে যাচ্ছে তা বোঝা মুশকিল। একজন ব্যাংককর্মী হিসেবে এটুকু বলতে পারি, পরিস্থিতি মোটেই ভালো মনে হচ্ছে না।’

ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরি করেন অপূর্ব হাসান। তার সঙ্গেও কথা হয় মতিঝিলে। তিনি বলেন, ‘সবার মধ্যেই সংশয় কাজ করছে। কী হবে আগামীকাল। এরইমধ্যে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, যানবাহন চলাচলে সব বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাসও নাকি তেমন চলবে না। সব মিলিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিবার থেকেও সাবধানে চলতে বলা হয়েছে। কয়েকদিন আগেও তো এরকম আতঙ্ক ছিল না।’

সরকারি দলের দোষারোপ করে নোমান গ্রুপের কর্মকর্তা আলী আকবর বলেন, ‘খালেদার জিয়ার বিরুদ্ধে রায় হবে এতে তার অনুসারীরা তো মাঠে নামবেই। প্রতিক্রিয়া তো থাকবেই। সেটাতো শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও হতো। কিন্তু সরকারি দল মাঠে নামার ঘোষণা দেওয়াতেই মূলত নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একটি দলকে ঠেকাতে পুলিশসহ অন্যান্য সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে নামছে। আর এতেই যত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দেশটাকে সবাই নিজের সম্পত্তি মনে করে।’

বিজ্ঞাপন

যে আদালতে খালেদার জিয়ার রায় ঘোষণা করা হবে, বকশীবাজারের সেই আলিয়া মাদ্রাসার আশেপাশের বাসিন্দারাও অতীতে কখনো এতো পুলিশি নিরাপত্তা দেখেনি।

চকবাজার এলাকার হাজী মোর্শেদ আলী বলেন, ‘আমরা এই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে উদ্বিগ্নতায় ভুগছি। আমাদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এলাকার দোকান, হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কাল কী যে হবে আল্লাহই জানেন।’

শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী তবারক হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বিএনপি মারামারি করবে, আর আমরা ঘর থেকে বেরোতে পারব না। এটাই হয়ে আসছে। সব দোষ আমাগো। ২০১৪-১৫ সালে ব্যবসায় লোকসান খাইছি, হেই সময় আবার আইছে। এহন আবার লোকসান খামু। এইসব বন্ধ কইরা মানুষের কথা ভাবন দরকার।’

একই মার্কেটের নারী উদ্যোক্তা শারমিন পলি বলেন, ‘সবাই আমাদের মারতেই পরিকল্পনা করে। এখন খালেদাকে জেলে পাঠাবে। কেউ পেট্টোলবোমা মারবে। কেউ মরবে, কেউ মারবে। কোন দেশে যামু। এভাবে একটি দলকে শেষ করে দিলে গণতন্ত্র বলতে কিছু থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

ফার্মগেটে জুতা সেলাই করেন অর্ণব। তিনি বলেন, ‘সবাই বলতেছে খালেদার নাকি জেল হবে। সাংবাদিকরা তো আগেই জানেন। তা বলেন তো, খালেদাকে কোন জেলে রাখবে।’

এরপর তিনি হেসে বলেন, ‘কাল এই জায়গাতে বসতে মানা করেছে। না বসলে বউ বাচ্চারে খাওয়ামু কী!’

মোহাম্মদপুর রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক সানজিদা খানম সুমি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যা হয় হোক, শুধু পরীক্ষা যাতে বন্ধ না করা হয়। রাস্তার নিরাপত্তা যাতে ঠিক থাকে। তারপরও মনে সংশয় থাকে, কখন কী ঘটে যায়। এর আগে দেখেছি, এসএসসি পরীক্ষার্থীর ওপর পেট্টোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যেকোনো কর্মসূচি দিলেই পারে।’

পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার এলাকার একটি বাসার নিরাপত্তারক্ষী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সবখানে ধরপাকড় চলছে। এতে বিএনপির কিছুই হবে না। খালেদা জিয়া মাথা নত করবে না। জুলুম নির্যাতন করে একটি বড় দলকে শেষ করা যায় না।’

পুরান ঢাকার বাসিন্দা শোয়েব আক্তার ও তার স্ত্রী মৌমিতা খন্দকার জানান, সরকার ঠিক কাজটাই করছে। কারণ মানুষের জানমাল রক্ষার সব দায়িত্ব সরকারের। এটি রক্ষা করতে না পারলে তখন সাধারণ মানুষজনই সরকারের ওপর দায় চাপাবে।

এদিকে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ‍পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশিনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেছেন, নৈরাজ্য ঠেকাতে ও নগববাসীর জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ যেকোনো ধরণের পদক্ষেপ নেবে।

অন্যদিকে পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, নাগরিকদের যেকোনো সমস্যায় পুলিশের সহায়তা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে পাশ্ববর্তী থানা পুলিশ কিংবা ৯৯৯ হেল্পলাইনে সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।

নিরাপত্তা রক্ষায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মোট ৪৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশ ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, যে কোনো ধরণের পরিস্থিতি এড়াতে সারাদেশে র‌্যাবের ১৪টি ব্যাটালিয়ন মাঠে থাকবে।

সারাবাংলা/ইউজে/এনএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন