বিজ্ঞাপন

সকালের হাসির শেষে বাংলাদেশের বিষাদের বিকেল

February 8, 2018 | 5:02 pm

মোসতাকিম হোসেন, মিরপুর থেকে

বিজ্ঞাপন

 

সকাল দেখেই নাকি বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে। কথাটা সব সবসময় সত্যি নয়। অন্তত আজ হলো না।

বাংলাদেশ সকালটা যে আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল, দিনের শেষে তার অনেকটুকুই মিলিয়ে গেছে হতাশায়। ঢাকার উইকেট প্রথম বল থেকেই সতর্কঘণ্টা বাজাচ্ছিল, এখানে ব্যাটসম্যানদের দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। শ্রীলঙ্কা ২২২ করার পর তারা কত জিপিএ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, সেটা বোঝা কঠিনই ছিল। তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছে, তারা জিপিএ ফাইভই পাবে। শেষ সেশনেই যখন ৫৬ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ, ম্যাচের প্রথম দিনের হাসি কার সেটা আর বলে দিতে হয় না।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অবশ্য নিজেদেরই দুষতে পারেন শুধু। এই উইকেটে রাজ্জাকদের উইকেট নিতে যতটা খাটতে হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বোলারদের তো বলতে গেলে ব্যাটসম্যানরাই উইকেট দিয়ে এসেছেন। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এমন উইকেটে তামিম ইকবালের ব্যাটই ছিল সবচেয়ে চওড়া। সেই তামিম লাকমলের প্রথম ওভারে অন ড্রাইভে চার মারার পরেই আবার সেই শট খেলতে গেলেন। ফলাফল, ব্যাটে-বলে ঠিকমতো না হওয়ায় রিটার্ন ক্যাচে আউট। বাংলাদেশ ৪ রানে হারাল প্রথম উইকেট।

একটু পরেই সেটা হয়েছিল দুই উইকেট। আর সেটার জন্য মুমিনুল হকের কাছ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ চাইতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। পেরেরার বলটা ঠেলে দিয়ে সিঙ্গেল নিতে দৌড়েছিলেন ইমরুল। কিন্তু ক্রিজে ঢোকার আগে মুমিনুল কী মনে করে যেন ব্যাটটা মাটিতেই ছোঁয়ালেন না। ওদিকে থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে উল্লাস করে দিয়েছেন ডিকভেলা। পাড়ার ক্রিকেটেও এভাবে আউট হয় কি না সন্দেহ, মুমিনুল শুন্য রানে আউট হয়ে নিজেকেও নিশ্চয় ক্ষমা করতে পারবেন না।

মুশফিকও কি পারবেন? পুত্রভাগ্যে আজ ভাগ্যদেবীও তার দিকে তাকিয়ে আছে বলে মনে হচ্ছিল। ১ রানে একবার সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গেলেন, আর এলবিডব্লিউ হয়ে রিভিউ নিয়ে পার পেয়ে গেলেন। কিন্তু লাকমলের বলটা কী বুঝে ছেড়ে দিলেন তার ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারবেন। গুড লেংথের চেয়ে একটু খাটো হয়ে এসে বলটা স্টাম্পের ওপরে গিয়ে লাগল। অথচ তার আগের কয়েকটা বলেই এভাবে ছেড়ে দিয়ে একটুর জন্য বেঁচে গেছেন মুশফিক। ১২ রানেই বাংলাদেশ হারাল তিন উইকেট। ইমরুল ও লিটন দিনটা যখন পার করে দেবেন বলে মনে হচ্ছিল, তখনই আঘাত শ্রীলঙ্কার। হেরাথের বলে ইমরুল এলবিডব্লিউ হলেন ১৯ রানে, রিভিউ নিয়েও পার পাননি। দিন শেষে ২৪ রানে অপরাজিত আছেন লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট করছেন ৫ রানে।

বিজ্ঞাপন

অথচ গল্পটা তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। আবদুর রাজ্জাকের ফেরার দিনে তো তাঁকে নিয়েই লেখা হতে পারত প্রশস্তিগাথা। চার বছর পর ফিরেছেন টেস্টে, শুরুটা এর চেয়ে আর স্মরণীয় করে রাখতে পারতেন না। প্রথম সেশনেই পেয়েছেন তিন উইকেট, পেয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগও। সেটা আর পাওয়া হয়নি, তবে চার উইকেট নিয়ে ৩৫ বছর বয়সে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ঠিকই হয়ে গেছে।

সকালে প্রথম সাফল্যের জন্য রাজ্জাককে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি। শ্রীলঙ্কার ১৪ রানেই দিমুথ করুনারত্নে গেছেন স্টাম্পড। এরপর কুশল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা প্রতি আক্রমণে খানিকটা কোণঠাসা করে রেখেছিলেন মিরাজদের। মিরপুরের উইকেট প্রথম ঘন্টা থেকেই দেখাল টার্ন আর বাউন্স। সেই টার্ন আর বাউন্সের যুগলবন্দিতেই তাইজুল পেলেন নিজের প্রথম আর বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেট। দারুণ এক বলে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন স্লিপে। ৬১ রানে শ্রীলঙ্কা হারাল দ্বিতীয় উইকেট।

মনে হচ্ছিল, ওই দুই উইকেট নিয়েই সেশন শেষ করবে বাংলাদেশ। কিন্তু রাজ্জাক ভেবেছিলেন অন্য কিছু। ২৮তম ওভারে তাঁর প্রথম বলেই ব্যাকফুটে পাঞ্চ করতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ তুলে দিলেন গুনাতিলকা। মুশফিক দারুণ এক লাফে ক্যাচটা ধরতে ভুল করেননি, রাজ্জাক পেলেন দ্বিতীয় উইকেট।

তবে সেশনের সেরা মুহূর্ত জমিয়ে রেখেছিলেন পরের বলের জন্য। দীনেশ চান্ডিমাল মুখোমুখি প্রথম বলেই পেলেন টার্ন আর বাউন্সের সাথে বাড়তি পেস। তাতেই পরাস্ত হলেন, বল ভেঙে দিল তাঁর স্টাম্প। রাজ্জাক তখন হ্যাটট্রিকের সামনে। সেটা আর পাওয়া হয়নি। ১০৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে গেছে শ্রীলঙ্কা।

বিজ্ঞাপন

খানিক পরেই সেটা হয়ে গেছে ১১০ রানে ৬ উইকেট। কুশল মেন্ডিস দারুণ খেলছিলেন, এই উইকেটেও শুরু থেকে আগ্রাসী ছিলেন। প্রথম সেশনে তাঁর ব্যাটেই শ্রীলঙ্কা প্রতিআক্রমণ করছিল সুযোগ বুঝেই। লাঞ্চের পর পরেই মেন্ডিস বোল্ড রাজ্জাকের দারুণ এক ডেলিভারিতে। গুড লেংথে বলটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেঙে দিল মেন্ডিসের স্টাম্প, ৯৮ বলে ৬৮ রান করে আউট হয়ে গেলেন মেন্ডিস। পরের ওভারেই তাইজুলের নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড ডিকভেলা। তখন মনে হচ্ছিল, ১৫০ ও শ্রীলঙ্কার জন্য অনেক দূর।

কিন্তু রোশন সিলভা ও দিলরুয়ান পেরেরা ভাবছিলেন অন্য কিছু। দুজন মিলে সপ্তম উইকেটে যোগ করলেন ৫২ রান, এর মধ্যে অবশ্য ১৮ রানে দ্বিতীয় স্লিপে পেরেরার ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন সাব্বির। পেরেরা শেষ পর্যন্ত ৩১ রান করে আউট হয়েছেন, এই উইকেটে এই কটি রান যে মহামূল্যবান হয়ে উঠতে পারে, বোঝাই যাচ্ছিল।

শ্রীলঙ্কার টেল এন্ডার অবশ্য তার আগেই ভালোই ভুগিয়ে গেছেন। রোশেন পরে আকিলা দনঞ্জয়াকে নিয়ে যোগ করেছেন ৪৩ রান, শ্রীলঙ্কা পার হয়ে গেছে ২০০। শেষের লেজের কাঁটা পরে সামলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান, ফিরিয়ে দিয়েছেন ধনঞ্জয়া ও হেরাথকে। আর রোশেনকে ৫৬ রানে আউট করে তাইজুল পেয়েছেন নিজের চতুর্থ উইকেট। ২২ রান যে বেশি হয়ে গেছে, তা বোঝাই যাচ্ছিল। কিন্তু সেটা যে এতোটা বেশি হয়ে যাবে, দিন শেষের আগে তা বোঝা যায়নি।

সারাবাংলা/এএম/ এসএন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন