বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশকে ‘মিশন ইম্পসিবলের’ সামনে দাঁড় করিয়ে দিল শ্রীলঙ্কা

February 9, 2018 | 12:34 pm

মোসতাকিম হোসেন, মিরপুর থেকে

বিজ্ঞাপন

 

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে কয়েকটা অনুসিদ্ধান্তে সম্ভবত চলে আসা যায়

– এই টেস্টে জিততে হলে বাংলাদেশকে অলৌকিকের চেয়েও বেশি কিছু লিখতে হবে

বিজ্ঞাপন

– মিরপুরে চতুর্থ দিনে খেলা দেখার জন্য সম্ভবত কেউ থাকছে না

দ্বিতীয় দিন শেষে এর মধ্যেই শ্রীলঙ্কার লিড হয়ে গেছে ৩১২ রান। হাতে আছে এখনো ২ উইকেট। চতুর্থ ইনিংসে মিরপুরে এমনকি ৪০০ও করারও কীর্তি আছে বাংলাদেশের। কিন্তু এখানে ২০৯ রানের বেশি জেতার রেকর্ড নেই কারও। এই উইকেটে ২০০ মানে অন্তত ৪০০ রান, সেই হিসেবে বাংলাদেশের লক্ষ্যটা এভারেস্টসমই।

অবশ্য সেটার জন্য বাংলাদেশ শুধু নিজেদেরই দায়ী করতে পারে। শ্রীলঙ্কাই তো দ্বিতীয় ইনিংসে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এই উইকেটেও হিসেব কষে ব্যাটিং করে রান পাওয়া যায়। যে আট উইকেট হারিয়েছে , তার মধ্যে শুধু ডিকভেলাকেই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায় একটু। বাকিদের সবার উইকেটই পরিশ্রম করে নিতে হয়েছে বোলারদের।

বিজ্ঞাপন

শুরুতে সাফল্যটা অবশ্য দ্রুতই পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আগের ইনিংসে কুশল মেন্ডিস শুরু থেকে চড়াও হয়ে রান করেছিলেন। আজ সেই সুযোগটা পেলেন না, রাজ্জকের হুট করে ভেতরের ঢোকা বলে তাঁর আসলে কিছু করারও ছিল না। ৭ রানেই ফিরে গেলেন মেন্ডিস।

ধনঞ্জয়া ডি সিলভা প্রথম বল থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, আক্রমণই এই উইকেটে ব্যাট করার সবচেয়ে ভালো দর্শন। ২৪ বলে ২৮ রানের ইনিংসেই রান রেট অনেকটা বাড়িয়ে নিয়েছেন। তাইজুল আর রাজ্জাককে সুযোগ দেননি থিতু হওয়ার। ২৪ বলে ২৮ রানের ইনিংসটা শেষ হয়েছে তাইজুলের দারুণ এক বলে। লেংথ বলে টার্নে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হয়েছেন ধনঞ্জয়া।

ধনঞ্জয়া যেখান থেকে শেষ করেছিলেন, গুনাতিলাকা সেখান থেকেই শুরু করলেন। ২৭ বলে ১৭ রান করে শ্রীলঙ্কার লিড আরও বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর ইনিংসও শেষ হয়েছে মুস্তাফিজের ভেতরের দিকে ঢোকা এক বলে। করুনারত্নে অবশ্য তখনও ছিলেন, একমাত্র তাঁর ব্যাটিং দেখেই মনে হচ্ছিল এই ইনিংসে রক্ষণও করা যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিরাজের বুদ্ধিমত্তার কাছেই হার মানলেন। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দেখে পায়ের ওপর বল দিয়েছিলেন মিরাজ। মিড অনে ইমরুলের দারুণ ক্যাচে শেষ হয়েছে করুনারত্নের ১০৫ বলে ৩২ রানের ইনিংস। শ্রীলঙ্কা ৯২ রানে হারিয়ে বসেছে ৪ উইকেট।

বাংলাদেশের তখনও সুযোগ ছিল দ্রুত কিছু উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরানোর একটু আশা জাগানোর। কিন্তু দীনেশ চান্ডিমাল ও রোশেন সিলভা মিলে ঠিক করলেন, আরও বেশ কিছুক্ষণ হতাশ করে যাবেন বাংলাদেশকে। পঞ্চম উইকেটে দুজন যোগ করলেন আরও ৫১ রান। শেষ পর্যন্ত ৫৪ বলে ৩০ রান করে আউট হয়ে গেলেন চান্ডিমাল।

বিজ্ঞাপন

এরপর শুরু বাংলাদেশের ক্যাচ মিস অধ্যায়ের। নিরোশান ডিকভেলা ১০ রান করে আউট হয়েছেন, কিন্তু তার আগেই আউট হতে পারতেন দুই বার। ৪ রানে একবার রাজ্জাক ছেড়েছেন সহজ ক্যাচ, আর নয় রানে তানভীর হায়দার সহজ ক্যাচটা সামনে এগিয়ে ধরতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১০ রান করে তাইজুলের বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়েছেন।

এরপরেই শুরু মুস্তাফিজের শেষ বিকেলের আলোর। প্রথমে স্টাম্পের পেছনে দিলরুয়ান পেরেরার দারুণ এক ক্যাচ ধরলেন লিটন, পরের বলে দনঞ্জয়াও ক্যাচ দিলেন আবার লিটনকেই। হ্যাটট্রিকটা পেতে দিলেন না লাকমল, কিন্তু আউট হতে পারতেন তার পরের বলেই। স্লিপে সহজ ক্যাচটা ধরতে পারেননি সাব্বির। তবে তিন উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজই ছিলেন সফলতম, ভাগ্য পক্ষে থাকলে অন্তত উইকেট পেতে পারতেন আরও দুইটি। শেষ পর্যন্ত রোশেন সিলভা আর লাকমল মিলে বাকি দিন পার করে দিয়েছেন। কে জানে, শ্রীলঙ্কা অলআউট হলে আজই হয়তো আবার উইকেট হারিয়ে ফেলত বাংলাদেশ!

কিন্তু শ্রীলঙ্কা এই ২০০ রান যতটা সংগ্রাম করে তুলেছে, বাংলাদেশের ১১০ রান করতে তার সিকিভাগও করতে হয়নি। বিশেষ করে আজ শেষ ৫ উইকেট যেভাবে দিয়ে এসেছে, সেটার জন্য বিপর্যয়, ধস এসবও আসলে কম হয়ে যায়। বরং সুনামির মতো প্রলয়ঙ্কর কিছু বলা যেতে পারে। দুঃস্বপ্নের কয়েকটা মিনিটে ৩ রানেই ৫ উইকেট হারাল বাংলাদেশ।

অথচ সকালের শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ আশা দেখাচ্ছিলেন। সকালে মিরাজ শুরু করেছিলেন চার-ছয় মেরে। উইকেটেও এমন কোনো জুজু ছিল বলে মনে হচ্ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশকে যে নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসতেই হবে! সুরাঙ্গা লাকমল কাল দুই উইকেট নিয়ে ছিলেন মূল ঘাতক। লিটন আজ তাঁর বলটা ছেড়েই দিতে পারতেন। কিন্তু জায়গায় দাঁড়িয়ে শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে টেনে নিয়ে এলেন স্টাম্পে। ৭৩ রানে বাংলাদেশ হারাল পঞ্চম উইকেট।

মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ তারপরও ছিলেন। দুজন মিলে ১০০ও পার করে ফেললেন। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশ যখন ভালো কিছুর আশা দেখাচ্ছে, তখনই হন্তারক হয়ে এলেন আকিলা ধনঞ্জয়া। শুরুটা হলো মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে। বাড়তি টার্ন করা বলটা বুঝতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ড্রাইভের জন্য খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হয়ে যান। ১০৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারাল বাংলাদেশ।

কিন্তু সেটা কেবল শুরু। সাব্বির রহমানের জন্য এই টেস্ট ছিল অনেক কিছু প্রমাণের। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, উইকেটে খুব বেশিক্ষণ থাকবেন না। মাত্র তিন বল খেলেই আলসে এক অন ড্রাইভে ক্যাচ তুলে দিয়ে এলেন শর্ট মিড অনে। রাজ্জাক এক রান করেই ধনঞ্জয়ার বলে ক্যাচ দিলেন ফিরতি। তাইজুল শুন্য রানেই ফিরতে পারতেন, কিন্তু ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে গেলেন।

দিলরুয়ান পেরেরার পরের ওভারেই অবশ্য আউট হয়ে গেলেন। শট খেলতে গিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, মেন্ডিসের দারুণ থ্রো ভেঙে দিয়েছে স্টাম্প। মুস্তাফিজ পেরেরার প্রথম বলেই এলবিডব্লু, ১১০ রানেই অলআউট বাংলাদেশ। যেটার জন্য বাংলাদেশ শুধু নিজেদেরই দায়ী করতে পারে।

 

সারাবাংলা/ এএম/এসএন

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন