বিজ্ঞাপন

১২ দিনেও আটক হননি বাসচালক, মা হারা মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা

September 16, 2019 | 9:33 pm

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। চালকের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সবকিছু পুলিশের কাছে রয়েছে। অথচ গত ১২ দিনেও মামলার প্রধান আসামি কাকলী পরিবহনের সেই চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ১৫ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন বাবা নাজমুল হাসান। চালক গ্রেফতার না হওয়ায় স্ত্রী হত্যার বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

মহাখালীর আমতলীতে গাড়িচাপায় ফারহানাজ হত্যা মামলার বাদী স্বামী নাজমুর হাসানের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা যায়।

নাজমুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর আমার স্ত্রীকে কাকলী পরিবহনের একটি বাস চাপা দেয়। গাড়িচালক ওইদিন থেকেই পলাতক রয়েছেন। তার ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভারস লাইসেন্স পেয়েছে পুলিশ। বাসটিও জব্দ করে থানায় রাখা হয়েছে। অথচ বাসের চালককে এখনও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারছে না। বনানী থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আফজাল হোসেনকে ফোন করলেও শুধু বলেন, ‘আমরা আসামি ধরতে চেষ্টা করছি। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ধৈর্য্য ধরতে হবে।’

নাজমুল হাসান আরও বলেন, ‘১৫ মাস বয়সী একমাত্র মেয়ে ইসরাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তার চাহনি, আচরণ আর কান্নায় মনে হচ্ছে, সে এখনও মাকেই খুঁজছে। তার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। পরিবারের এতবড় একটি ক্ষতি হয়ে গেল বাসচালকের জন্য, অথচ কোনো কিছুই হচ্ছে না। এখন ন্যায়বিচার পাব কি না সেটাই সন্দেহ করছি। আসলে কী করব বুঝতে পারছি না। আমার স্ত্রী যদি রাস্তা পার হতে গিয়ে চাপা পড়ত তাহলে বলার কিছু ছিল না। আমার স্ত্রী ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিল, সেখানে চালক বাস উঠিয়ে দিয়েছে এবং চাপা দিয়ে হত্যা করেছে।’

বিজ্ঞাপন

১২ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। এরপরও বাসের চালককে কেন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাসচালক শামীম মিয়াকে গ্রেফতার করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে আসামির গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের সখিপুরে অভিযান চালানো হয়েছে। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করা হচ্ছে। তার মোবাইল নম্বর এখন বন্ধ রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। শিগগিরই আসামি শামীম মিয়াকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে এসআই আফজাল হোসেন জানান।

এদিকে বনানী থানার পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালক শামীম মিয়াকে গ্রেফতারে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। উল্টো গাড়ি ও চালকের কাগজপত্র ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য একটি প্রভাবশালী মহল থানায় যাতায়াত করছে। যেহেতু মামলা হয়েছে এবং এই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাই সহজেই গাড়ি ও কাগজপত্র পুলিশ দিতে পারছে না।’

গাড়িচাপায় আগের হত্যাকাণ্ডগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে উপপরিদর্শক আরও বলেন, ‘ঢাকা শহরে দেখেন কতজন মানুষ গাড়িচাপায় মরেছে। অথচ দেখেন কারও কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। বছরের পর বছর মামলার কার্যক্রম চলছে। শেষে দেখা যাবে সবাই খালাস পেয়েছে। মামলার সবশেষ অবস্থা কী হয় সেটিও অনেকে জানতে পারেন না।’

বিজ্ঞাপন

কাকলী পরিবহন বাসগুলো ওই বনানী থেকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে কচুক্ষেত পর্যন্ত চলাচল করে। ঘটনার দিন গাড়িটিতে কোনো যাত্রী ছিল না। বনানীতে যাত্রী নামিয়ে মহাখালী দিয়ে ঘুরিয়ে আবারও কচুক্ষেতের দিকে যাচ্ছিলেন চালক। বেপরোয়াভাবে চালাতে গিয়ে গাড়িটি আমতলীতে ফুটপাতে উঠিয়ে দেয় চালক। সেখানে ফারহানাজ দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এছাড়া গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে উত্তরার তুরাগ এলাকায় সঙ্গীত শিল্পী ও পরিচালক পারভেজ রবকে ভিক্টর পরিবহনের বাস চাপা দিলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বাসটিকে আটক করা হলেও চালককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুরিশ। এর দুইদিন পর ৭ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরে সুইস গেট এলাকায় ভিক্টোর পরিবহনের আরেকটি বাস পারভেজ রবের ছেলে আলভী ও তার বন্ধু ছোটনকে চাপা দেয়। এতে ছোটন মারা গেলেও আলভী এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এ ঘটনায় বাস জব্দ ও চালক রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রফিকুল রিমান্ডে জানিয়েছে, ভারি যানবাহন চালানোর কোনো লাইসেন্স তার ছিল না। হালক যান চালানোর লাইসেন্স দিয়েই তিনি ভারি যান চালাতেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/ইউজে/একে

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন