বিজ্ঞাপন

ধর্মের কল বাতাসে উড়ছে: মির্জা ফখরুল

September 20, 2019 | 2:11 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিরুদ্ধে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ধর্মের কল বাতাসে উড়ছে।’

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল এ মানববন্ধন আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা আছে, ধর্মের কল বাতাসে ওড়ে। আজকে আওয়ামী লীগের যে দুঃশাসন, আওয়ামী লীগের যে দুর্নীতি, আওয়ামী লীগের যে নির্যাতন-নিপীড়ন, তা অন্য কাউকে বলতে হচ্ছে না। নিজে নিজেই বাতাসে কল নড়তে শুরু করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে সারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের লোকেরা, যুবলীগের নেতারা, ছাত্র লীগের নেতারা প্রমাণ করছেন, তারা বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে নিয়েছেন। কয়েকদিন আগে প্রথমে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক ধরা পড়ল ফেয়ার শেয়ার নিতে গিয়ে। সেই ফেয়ার শেয়ার এক দুই কোটি টাকা নয়, ৮৬ কোটি টাকা!’

বিজ্ঞাপন

‘মজার ব্যাপার হচ্ছে- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর— যার কথোপকথন মোবাইলে বের হয়ে গেল, তিনি এরইমধ্যে এক কোটি টাকা ছাত্র নেতাদের দিয়েছেন। অর্থাৎ আজকে কী অবস্থায় দেশকে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। এই ভাইস চ্যান্সেলর— যাদেরকে আমরা সম্মান করি, মাথার ওপর রাখি, তারা এখন ঘুষ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন’— বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। কারণ, সেখানে ছাত্র ভর্তি হচ্ছে বিনা পরীক্ষায়। অর্থাৎ এখানেও দুর্নীতি চলছে। ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক সবাই রাস্তায় নেমে গেছে। তারাও আন্দোলন করছে। গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং শিক্ষকেরা আন্দোলন করছে। কারণ, ভাইস চ্যান্সেলর অনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ দেশের মানুষ যাবে কোথায়? ভাইস চ্যান্সেলররা— যাদেরকে সবাই সম্মান করে, তারাও যদি এই পর্যায়ে। এদেরকে কারা নিয়োগ দিয়েছে?— এই সরকার। বেছে বেছে, সব চাইতে খারাপ ধরনের লোকদের ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগ দিয়েছে। ফলে সাধারণ ছাত্ররাই আজ বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।’

বিজ্ঞাপন

ক্যাসিনো:

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকা শহরের ৬০টি ক্যাসিনো চালাচ্ছে কে? যুবলীগের নেতারা, আওয়ামী লীগের নেতারা। আজকে প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই দেশ দুর্নীতিতে ভরে গেছে এবং সরকার সেখানে মদদ দিচ্ছে, আওয়ামী লীগ সেখানে মদদ দিচ্ছে। আজকে প্রমাণিত হয়ে গেছে, এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ। আজকে প্রমাণিত হয়ে গেছে গত ১২ বছরে এই দেশকে লুটপাট করে তারা একটা শ্মশানে পরিণত করেছে।’

প্রসঙ্গ খালেদা:

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ ১৭ মাস ধরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি এখন হাঁটতে পারেন না, সাপোর্ট নিয়ে উঠতে হয়, চলতে হয়। বার বার আমরা বলেছি তাকে সুচিকিৎসার জন্য মুক্তি দিতে হবে। আমরা তাদের কাছে দয়া ভিক্ষা করছি না। আমরা তাদের কাছে আইনগত ন্যায্য প্রাপ্য জামিন চাচ্ছি। আদালতের কাছে জামিন চাচ্ছি। কিন্তু আদালতের কাজে বাঁধা দিচ্ছে সরকার। যাতে তিনি বের হতে না পারেন। এই অন্যায়, এই অবিচার জনগণ মেনে নেবে না। জনগণ আজকে জেগে উঠতে শুরু করেছে, জনগণ আজকে বুঝতে শুরু করেছে। এই সরকার যতদিন থাকবে, ততোদিন আইন থাকবে না, বিচার থাকবে না। ন্যায় বিচার থাকবে না, মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিষ্কার কথা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোনো দলের নেতা নন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই দেশের ১৬ কোটি মানুষের নেতা। তিনি এই দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করেছেন এবং এখন তাকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজন হলে এ দেশের মানুষ আবার সম্মিলিত হয়ে তাকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসবে।’

সরকার ব্যর্থ:

তিনি বলেন, ‘আজকে এই সরকার কোন দিক থেকে সফল? কথায় কথায় বলে, আমরা উন্নয়ন করছি। বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দিলাম। বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি বেকার। প্রায় চার কোটি শিক্ষিত বেকার। কৃষক ধানের দাম পায় না। তাদের দুধ ফেলে দেয়। পাটের দাম পায় না। এই নিদারুণ একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ বাস করছে। কোথাও আইনের শাসন নেই। যাকে যখন খুশি তুলে নিয়ে যায়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১০ লাখের ওপরে রোহিঙ্গা এ দেশে বসে আছে ২ বছর ধরে। মাদার অব হিউম্যানিটি (শেখ হাসিনা) ২ বছরে একজনকেও ফেরত পাঠাতে পারেন নাই। উপরন্তু আরও বিপদ। আসামে যে নতুন নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হয়েছে, সেখানে আরও ১৯ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে। তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আসামে যা খুশি তাই হোক। তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু তাদের মন্ত্রীরা যখন বলেন, এরা বাংলাদেশি, এদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে হবে। তখন নিশ্চয়ই আমাকে সেটা ভাবতে হয়।’

‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি আমাদের কোনো মানুষ ১৯৭১ সালের পরে ভারতে যায় নাই। কেন যাবে? আমাদের অর্থনীতি ওদের চেয়ে ভাল। আমাদের লোক ভারতে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না’— বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আমরা কারও আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমাদের সমস্যা যেন না হয়, সেই কথাই বলতে চাই। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কথা বলছে না, শুধু বলছে এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু আমরা তো দেখছি, ভারতের নেতারা বলছেন বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে, সে ব্যাপারে একটা ব্যখ্যা তো দিতে হবে।’

যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দীন টুকুর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

সারাবাংলা/এজেড/জেএএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন