বিজ্ঞাপন

মায়াবতী: আনন্দের সাথে দেখার ছবি

September 26, 2019 | 6:26 pm

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

মামুলি, তুচ্ছতাসর্বস্ব, অবিন্যস্ত আমাদের চলচ্চিত্রের বাজার। সেই বাজারে মাঝে মাঝে উপস্থিত হন নাগরিক সমাজ থেকে আসা কিছু পরিচালক। যেমন এসেছেন অরুণ চৌধুরী তার ‘মায়াবতী’ নিয়ে। মায়া নামের এক কিশোরীকে বাল্য বিয়ে থেকে বাঁচাতে তার মা বিশ্বাস করে তুলে দিয়েছিল এক প্রতিবেশীর হাতে, যাকে মায়া মামা ডাকত। কিন্তু সেই মামা বিশ্বাস ভঙ্গ করে মায়াকে বিক্রি করে দেয় যৌন পল্লীতে।

বিজ্ঞাপন

মায়া সেখান থেকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি, তবে তাকে শরীরও বেঁচতে হয়নি। মা’র শিখিয়ে দেওয়া গানে মুগ্ধ সংগীত গুরু খোদা বক্স সেখানে মায়াকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন শিল্পী হিসেবে। আর মায়ার গানের  প্রেমে পড়ে এক ব্যারিস্টার পুত্র যার পরিবারেও আছে ভাঙ্গন। মা’র কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মায়া যৌন পল্লীতে বড় হয়ে ওস্তাদজীর গান ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেনি। গেরস্ত বাড়ির ছেলের প্রেমে সাড়া দিয়েও দিতে পারেনা মায়া, কারণ সে সমাজ বাস্তবতার কথা জানে।

কিন্তু গান করার বায়নাতেই একবার শহরে গিয়ে একসময় ভয়ংকর খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে মায়া। মায়ার জীবনে শুরু হয় নতুন গল্প। নতুন সংগ্রাম। তারপর যে পরিবার থেকে বেরিয়া এসেছিল ব্যারিস্টার পুত্র, আবার সেই ত্যাগ করা বাবাকেই সে অনুরোধ করে মায়ার পক্ষে আইনী লড়াই চালাতে। এবং ঘটনার শেষ হয় সত্যের জয়, মায়ার নিরঙ্কুশ মুক্তিতে এবং শিল্পী হিসেবে তার স্বীকৃতিতে।

মায়া চরিত্রে স্বাবলীল অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। নায়কের চরিত্রে খারাপ করেননি ইয়াশ রোহান। বরাবরের মতই চমৎকার অভিনয় করেছেন ফজলুর রহজান বাবু গানের ওস্তাদের চরিত্রে। তবে ব্যারিষ্টারের চরিত্রে, কোর্টরুমে রাইসুল ইসলাম আসাদের অভিনয় মন কাড়েনি। ছবিতে প্রথিতযশা আরও যারা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে আছেন মামুনুর রশীদ, দিলারা জামান, আফরোজা বানু, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, আব্দুল্লাহ রানা, অরুণা বিশ্বাস, তানভীর হোসেন প্রবাল ও আগুন।

বিজ্ঞাপন

চলচ্চিত্র হিসেবে মায়াবতী কেমন হয়েছে সেটা বলার চেষ্টা করছিনা। কিন্তু এই ছবি থেকে কিছু বার্তা এসেছে সমাজে। সমাজে জোর করে, বল প্রয়োগ করে নারীর অসন্মান করার যে সংস্কৃতি বিরাজমান তার বিরুদ্ধে এই ছবি। ‘না মানে না’ – নারী এ কথা বলবে, তা সে যেখান থেকেই উঠে আসুক, যে পরিস্থিতিতেই থাকুক।

নারী পাচার ও যৌনপল্লীর গল্পে আছে কেমন করে থাকে সেখানকার মেয়েরা, কেমন হয় সেখানকার পরিবেশ। আঠার বছর না হলে স্কুলে যেতে হয়, আর এসব দেখার জন্য আছে এনজিও – এমন তথ্যই বা কয়জন জানে? পরিচালক এক সময় নিজে সাংবাদিক ছিলেন বলেই এমনটা আনতে পেরেছেন। এই ছবিতে পরিচালক দেখাতে চেয়েছেন কোন অন্যায় সমাজে ঘটলে, কারও প্রতি অবিচারের প্রচেষ্টা চললে তারুণ্য কিভাবে রুখে দাঁড়ায় সামাজিক মাধ্যমে।

ছবির প্রযোজক আনোয়ার আজাদ একজন অনাবাসী বাঙালি। মায়াবতী ছবি সুপার ডুপার হিট ছবি হয়তো নয়, কিন্তু ভাল ছবি, পরিচ্ছন্ন ছবি। বস্তাপচা কাহিনী, দুর্বল নির্মাণ, সম্পাদনা সব মিলিয়ে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, অনেক দিন আগেই ‘ভদ্রলোক পাবলিক’ হলে যাওয়া ছেড়েছে। ফ্যামিলি নিয়ে কেউ আর যায় না সিনেমা দেখতে।  মায়াবতী পরিবার নিয়ে আনন্দের সাথে দেখার ছবি। তাই এই ছবির সাফল্যে ভবিষ্যতে আরো প্রবাসী বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাণ  আসবেন বলে আশা করা যায়। এই ছবির বড় পাওয়া অনন্যা নামের এক শিল্পীর চমৎকার গানের গলা।

বিজ্ঞাপন

ঢাকাই ছবির সংকট কাল চলছে অনেকদিন ধরে। মায়াবতীর মত ছবি চলচ্চিত্র অঙ্গনে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। চলচ্চিত্র হলো একটি জাতির সৃজনশীল বহিঃপ্রকাশ। বলা হয় আমাদের ভাল ছবি হয়না, কারণ ভাল গল্পের অভাব। কিন্তু গল্পতো সমাজে আছে, নিতে জানতে হয়। সমাজ থেকেই গল্প নিয়েছেন অরুণ চৌধুরী। জনগোষ্ঠিই শিল্পের সবচেয়ে বড় বিচারক। সিনেমা মানুষের। সিনেমার উৎসব মানুষের।

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন