বিজ্ঞাপন

রাত পোহালেই মহালয়া, দুর্গোৎসবের প্রস্তুতিতে সন্তুষ্ট আয়োজকরা

September 27, 2019 | 10:01 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাত পোহালেই শুরু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন মহালয়া। পুরাণমতে এদিনেই আবির্ভাব ঘটে দেবী দুর্গার। শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই পরিচিত মহালয়া হিসেবে। মহালয়া মানেই আর মাত্র ছয় দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজো শুরু হওয়ার। আর তাই এই দিনকে ঘিরে ব্যস্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সব মণ্ডপে ব্যস্ত শেষ সময়ের প্রস্তুতির সফল রূপ দিতে। রাজধানীসহ সারাদেশের মণ্ডপ তাই ব্যস্ত মহালয়ার আগমনী বার্তা ও পুজোর সকল প্রস্তুতি নিয়ে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে মহালয়ার অনুষ্ঠান শুরু করা হবে। এই চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা ও দেবীর প্রশস্তিগাঁথা। এই দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। পিতৃ-মাতৃহীন সন্তানেরা এই তিথিতে তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে অঞ্জলি দেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। সনাতন ধর্মানুসারে এই দিনেই প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠানো হয়। আর প্রয়াতদের আত্মার যে সমাবেশ তাকে বলা হয় মহালয়। মহালয় থেকে মহালয়া, পিতৃপক্ষের শেষ দিন।

৪ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত মহালয়া থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দেবী দুর্গার আগমন ধ্বনি শুনতে পান। আর তাই এই দিনটি ঘিরেই ব্যস্ত সব পূজা মণ্ডপের সঙ্গে জড়িত আয়োজকরা। ভোরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মন্দিরে মহালয়া উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে বিশেষ আয়োজন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহালয়া উদ্বোধন করা হবে। পঞ্চপ্রদীপ জ্বালিয়ে এই মহালয়া উদ্বোধন করবেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ।’

পূজার প্রস্তুতি নিয়ে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। গতবছরের তুলনায় এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। পূজোর নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা খুশি সবকিছু মিলিয়ে।’

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রীবাস রয় অপু সারাবাংলাকে বলেন, ‘শারদ আবহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে দোলা দিচ্ছে সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী সুর। আবহমানকালের এই ঐতিহ্য মিশে আছে বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গেও। আর এই দুর্গোৎসবের শুরু হয় মহালয়ার মাধ্যমে। আমাদের পূজামণ্ডপে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামীকাল ভোরে এখানে মহালয়া পালনের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। মায়ের আরাধনা, প্রসাদ বিতরণসহ নেওয়া হয়েছে নানা আয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর উত্তরায় প্রতিবছর দুর্গাপূজা ১১নং সেক্টরের মাঠে অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা হচ্ছে ৩নং সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে। তবে তাতে প্রস্তুতির কোনো কমতি রাখতে চাচ্ছেন না আয়োজকরা।

উত্তরা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন পাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘পূজার স্থান পরিবর্তন হলেও সেটা আয়োজক ও ভক্তদের উৎসাহে কোনো ভাটা ফেলেনি। আমরা প্রস্তুত পূজার সকল কিছু সফলভাবে আয়োজনের জন্য। মহালয়া এবার আমরা খুব বেশি কিছু করছি না। চণ্ডীপাঠ ও প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সবকিছু মিলিয়ে পূজার আয়োজন আমাদের এবার প্রায় সম্পন্ন। আশা করছি এবারও মায়ের আরাধনায় কোনো কমতি থাকবে না।’

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজারী বরুণ চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মা আসছেন এবার ঘোড়ায় চড়ে, মা বিদায়ও নিবেন ঘোড়ায় চড়ে। যুগে যুগে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির পক্ষে শান্তি স্থাপন করেন মা। এবারও আমরা মায়ের আরাধনায় কোনো কমতি রাখবো না।’

বিজ্ঞাপন

রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এবারও পূজা উদযাপনে থাকছে নানা আয়োজন। এছাড়াও গুলশান-বনানী পূজা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বনানী মাঠ, কলাবাগান মাঠ, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশনসহ বিভিন্ন স্থানে এই উৎসবের প্রস্তুতি চলছে।

প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকেই। এখন সেখানে দেওয়া হচ্ছে শেষ মুহূর্তের ছোঁয়া। ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রায় ২৩৬টি মণ্ডপে তাই প্রস্তুতি চলছে বিরামহীন ভাবে, একই সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে সুনিপুণ কারুকাজের মণ্ডপ ও তোরণ।

উল্লেখ্য, বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত দেবী। তিনি মহামায়া যিনি অসীম শক্তির উৎস। হিন্দু পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। সেই মহিষাসুর বধের যাকে শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা হত্যা করতে পারবে না। বর পেয়ে অসীম ক্ষমতার অধিকারী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে। একসময় মহিষাসুর অধীশ্বর হতে চায় সমগ্র বিশ্বের। আর সেই সময়েই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের সম্মিলিত শক্তিতে মহামায়ার রূপে অমোঘ নারীশক্তির সৃষ্টি হয়। দেবী সজ্জিত হয় দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে সিংহবাহিনী নিয়ে। আর তা নিয়ে নয়দিন ব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করে মর্ত্যে শান্তি স্থাপনা করেন দেবী দুর্গা।

ফিচার ছবির মডেল: শারমিন ইতি, অভিনেত্রী
ফটো: টাবুল (কলকাতা)
লোকেশন: কুমারটলি ও মায়ের ঘাট, কলকাতা

সারাবাংলা/এসবি/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন