বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ ও সৌহার্দ্যে ৪ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

October 4, 2019 | 9:15 pm

সারাবাংলা ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়াকে সংঘবদ্ধ, বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিমূলক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে এই অঞ্চলের বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে পারস্পরিক বৈশ্বিক কল্যাণে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, গত কয়েক দশকে আমরা অনেক মহৎ আঞ্চলিক বিভিন্ন ধারণা ও উদ্যোগ দেখেছি। এগুলোর মধ্যে কিছু সফল হলেও অন্যগুলো সফল হয়নি। আগামী কয়েক দশকের দিকে দৃষ্টি রাখলে আমি মনে করি, এক্ষেত্রে আমাদের কিছু নীতিমালা মেনে চলা উচিত হবে। আমি বলতে চাই— একটি সংযুক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।

আরও পড়ুন- রাধুনিকে রান্নায় পেঁয়াজ দিতে না করেছি, দিল্লিতে শেখ হাসিনা

শুক্রবার (৪ অক্টোবর) নয়া দিল্লিতে হোটেল তাজ প্যালেসে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ইন্ডিয়া ইকোনোমিক সামিটের সমাপনী অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমত, সমাজের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যুগ যুগ ধরে বহুত্ববাদ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি। এর মাধ্যমে আমরা ধর্ম, জাতি ও ভাষাগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যের উদযাপন করতে পারে। এটি হচ্ছে মৌলিক বিষয়।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধির সময়ে সমাজে যেন বৈষম্য আরও বেড়ে না যায়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদ হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং তা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। স্বল্পোন্নত সম্প্রদায় বা দেশ পেছনে পড়ে থাকবে না। আমাদের তরুণদের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন- বাংলাদেশ-ভারতের ব্যবসায়ীদের পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করার আহ্বান

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা তার তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’— এই নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অব্যাহত অবদান রেখে চলছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে সহায়তা করছে। ১৯৯৬ সালে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানিবণ্টনের সমাধান করেছি, আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ করেছি। আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এ ধরনের সহযোগিতাপূর্ণ সংস্কৃতি প্রয়োজন।

চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অবশ্যই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের জনগণের স্বার্থে ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক বাস্তবতার আমরা প্রশংসা করব। আমরা স্বল্প মেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি স্বার্থ বন্ধ করে দিতে পারি না।

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন, জনগণকে ভালোবাসতেন। তিনি উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিরে এসে তিনি কলকাতায় ঘোষণা দেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং আমাদের জনগণের স্বার্থে গঠনমূলক নীতিমালা প্রণয়নে আমরা সহযোগিতা করব। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা বিমসটেক, সার্ক, বিবিআইএন ও বিসিআইএমের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

বিজ্ঞাপন

সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সংযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ে প্রতিষ্ঠাতেও ভূমিকা রাখছে। দারিদ্র্যকে এই অঞ্চলের অভিন্ন শত্রু অভিহিত করলেও এই অঞ্চলের সবার এর বিরুদ্ধে লড়াই করার সামর্থ্য আছে উল্লেখ করে সবাইকে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ি কিট  দারিদ্র্য বিমোচন ও সহযোগিতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে আরও শক্তিশালী করার জন্য একযোগে কাজ করতে শেখ হাসিনার ধারণার প্রশংসা করেন।

ডব্লিউইএফ সভাপতি বোর্জে ব্রেন্ডে’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট ছিলেন— সিঙ্গাপুরের উপপ্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ি কিট, সেকুইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেন্দ্র সিং, অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজের নির্বাহী সহসভাপতি শোবানা কারমিনেনি ও বুকিং ডট কমের চেয়ারওমেন জিলিয়ান টানস। বাসস।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন