বিজ্ঞাপন

‘কৃষক বাড়ি’তে কৃষক লীগের সম্মেলন, কৃষিবান্ধব নেতৃত্বের প্রত্যাশা

November 6, 2019 | 12:28 am

নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কৃষি ও কৃষকবান্ধব নেতৃত্ব তুলে আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সংগঠনে স্বচ্ছ নেতৃত্ব প্রত্যাশায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষক লীগের দশম জাতীয় সম্মেলন। আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে কৃষক বাড়ির আদলে সেজেছে সম্মেলনস্থল। উদ্বোধনী পর্ব শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লাকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজাকে সদস্য সচিব করে গঠিত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত ১৩টি উপকমিটি এ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ১০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির শেষ সভা এবং ১৯ অক্টোবর বর্ধিত সভা করেছে সংগঠনটি।

আরও পড়ুন- কড়া নাড়ছে কৃষক লীগের সম্মেলন, আলোচনায় যারা

১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির কার্যক্রমে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে বিশেষ মাত্রা দিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই এ সংগঠনের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর হওয়ার কথা থাকলেও এবার সাত বছরেরও বেশি সময় পর সংগঠনের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে। এ কারণে পদপত্যাশীদের মধ্যে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার আবহ তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, সরকারের একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে এবার সহযোগী সংগঠনগুলোতে নেতৃত্ব নির্বাচনে গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সংগঠনটির আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচনে বিভিন্ন মারফতে পদপ্রত্যাশীদের খোঁজখবরও রাখছেন তিনি।

কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সৎ ও কৃষক দরদী— এরকম নেতৃত্ব আসুক। পাশাপাশি নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে চলমান অভিযান পরিচালনা করেছেন, এটাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। আমরা চাই, দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব নেত্রীর হাতকে আরও শক্তিশালী করুক। যাদের নামে তিল পরিমাণ কলঙ্ক নেই, এমন নেতৃত্ব আসুক— এটাই প্রত্যাশা করি।’

আরও পড়ুন- সম্মেলন ঘিরে চাঙ্গা কৃষক লীগ

বিজ্ঞাপন

কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা জানান, আমাদের কারও প্রার্থী হওয়ার কোনো নিয়ম নেই। আমাদের নেত্রীর ওপর পুরো আস্থা আছে। তিনি যাকেই নেতৃত্ব দেবেন, তার সঙ্গেই আমরা কাজ করব। তবে আমাদের সবার প্রত্যাশা কৃষক ও কৃষিবান্ধব নেতৃত্ব। চলমান শুদ্ধি অভিযানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষক লীগেও শুদ্ধদেরই স্থান হবে, এটিও চাই আমরা।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেন কৃষক বাড়ি

কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে এখন নতুন সাজে সেজেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সম্মেলনকে ঘিরে আলোকসজ্জা ও সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। মূলমঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে কৃষকের কাচারি ঘরের আদলে। এর জন্য ৯০ ফুট দীর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রস্থ সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যা কৃষকের কাচারি ঘরের আদলের মতোই জৌলুস ছড়াচ্ছে। মঞ্চের পাশে রাখা হয়েছে ‘আমার বাড়ি-আমার খামার’র একটি মডেল। এতে কৃষকের উৎপাদিত ফসলাদি বাজারে বিক্রি করার আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক স্তরে নিরাপত্তা বলয় থাকবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে পথে গাড়িবহর থেকে নেমে হেঁটে মঞ্চে আসন নেবেন, সেই পথটি মোড়ানো হয়েছে সবুজ ঘাসে। রাস্তার চারপাশে লাগানো হয়েছে বাঁশবাগান, ফলদ ও ঔষধি গাছ। মোদ্দাকথা, কৃষক লীগের সম্মেলনে কৃষকের বাড়িতে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা— সেভাবেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সম্মেলনস্থলের মূল প্যান্ডেলের পাশে পাঁচশ ছোট ছোট প্যান্ডেলে কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। আরেকটি প্যান্ডেলে ছোট করে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ আদলে কারিগরি প্রদর্শনী রাখা হয়েছে। ডান পাশে একটি মঞ্চ করা হয়েছে। সেখান থেকে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিববেশন করা হবে। সম্মেলন প্যান্ডেলে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামনের কাতারে বসবেন আগত অতিথি ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এছাড়াও সম্মেলনে দু’জন বিদেশি অতিথি থাকবেন।

বুধবার ভোরের মধ্যে বেশিরভাগ কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা ঢাকায় উপস্থিত হবেন। সকাল ৯টা থেকে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করার অনুমতি রয়েছে।

কমিটি নিয়ে অভিযোগ

এদিকে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার অনুমোদন করা কমিটি কাউকে না দেখিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কাউকে কাউকে এক পদ থেকে সরিয়ে আরেক পদে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন এবং কিছু নাম বাদ দিয়ে বিভিন্ন পদে অন্য লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেন। কৃষক সমাজের বিভিন্ন ন্যায্য দাবি দাওয়া ও সুযোগ-সুবিধার অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও সংগঠনটি কেবল দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নিয়ে সময় পার করে। এমনকি কেন্দ্রীয় নেতাদের ইশারায় বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ম বিহর্ভূতভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজদেরও এবার কাউন্সিলর করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি ক্যাসিনো কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি সফিকুল ইসলাম ফিরোজ নিজেকে কৃষক লীগ নেতা পরিচয় দেওয়ার পর কৃষক লীগ সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা এক বিবৃতিতে জানান, তিনি কৃষক লীগের কেউ নন। অথচ এই ফিরোজকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিভিন্ন বৈঠক এবং কৃষক লীগের একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান নেতৃত্বের অধিকাংশ নেতা সাংগঠনিক কর্মসূচিতে ব্যস্ত না থাকলেও তাদের অনেকেই খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, মৎস্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরসহ বিভিন্ন কৃষি দফতরে টেন্ডার বাণিজ্য ও তদবির বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন।

গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসছে

কৃষক লীগের এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘আমার বাড়ি আমার খামার’। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় কৃষকদের দুরাবস্থা বিবেচনায় ‘কৃষক বাঁচাও-দেশ বাঁচাও’ স্লোগানটি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘কৃষকরা ভালো আছেন’ বিবেচনায় ‘সুখী কৃষক-সুখী দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই স্লোগানটি অন্তর্ভুক্ত করতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১১১ সদস্যের জায়গায় ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভা হয় কৃষক লীগের।

এবার গঠনতন্ত্র সংশোধনের যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ১৫১ জন করার পাশাপাশি সহসভাপতির পদ ১৬ থেকে ২১, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিন থেকে পাঁচ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাত থেকে ৯ জন করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া ও যুব বিষয় সম্পাদক, কৃষি উপকরণ বিষয়ক সম্পাদক, কৃষি পণ্য পরিবহণ বিষয়ক সম্পাদক, কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকীয় পদ নতুন যোগ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি পদের নামও পরিবর্তন করার প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে সমবায় সম্পাদকের পরিবর্তে কৃষি সমবায়, কুটির শিল্পের পরিবর্তে কৃষি শিল্প বাণিজ্য, মৎস্য ও পশুর পরিবর্তে মৎস্য ও প্রাণি, কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিবর্তে কৃষি বিজ্ঞান ও আইসিটি সম্পাদক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পরিবর্তে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করার প্রস্তাব রয়েছে।

গঠনতন্ত্রে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সাল ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল সংযোজন করা হবে, যা বর্তমান গঠনতন্ত্রে নেই। নারী নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রত্যাক সাংগঠনিক স্তরে মহিলা সম্পাদকের সঙ্গে সহ-মহিলা সম্পাদক পদও বাড়ানো হবে। এদিকে, বর্তমান কমিটি দেশের বাইরে কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ থেকে সংগঠনকে রক্ষা করতে বিদেশের কমিটি দেওয়া নিয়ে গঠনতন্ত্রে সংশোধন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রস্তবনায় ও সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনসাপেক্ষে বিদেশে কমিটি দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা

এবারের সম্মেলনে সংগঠনের শীর্ষ পদে আলোচনায় একাধিক নেতা থাকলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তিনটি মানদণ্ড ধরে এবার প্রবীণ ও তরুণ নেতৃত্ব উপহার দিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনীতিতে কোন প্রার্থীর কী সক্রিয় ভূমিকা ছিল, তা বিশ্লেষণ করে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে প্রার্থীদের পছন্দের তালিকায় বিবেচনায় রেখেছেন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তরুণ নেতৃত্ব রয়েছে পছন্দের শীর্ষে। দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, এ ক্ষেত্রে সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ও ছবি বিশ্বাস এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ, বিশ্বনাথ সরকার বিটু ও সাখাওয়াত হোসেন সুইট রয়েছেন আলোচনায়। তাদের মধ্য থেকেই হয়তো নতুন নেতৃত্ব পাবে কৃষক লীগ।

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন