বিজ্ঞাপন

টি-টোয়েন্টিতেও দুর্দশা কাটছে না বাংলাদেশের

February 15, 2018 | 8:48 pm

মোসতাকিম হোসেন, মিরপুর থেকে

বিজ্ঞাপন

ডাউন দ্য উইকেটে এসে মোস্তাফিজুর রহমানের বলটা সীমানার বাইরে আছড়ে ফেললেন দাসুন শানাকা। মিরপুরের গ্যালারি তখন খালি হতে শুরু করেছে অনেকটাই, সর্বনাশের আশায় বসে থেকে লাভ নেই সেটাও যেন বোঝা হয়ে গেছে। ওয়ানডে, টেস্টের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও কাটছে না বাংলাদেশের দুর্দশা, প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেল ৬ উইকেটে।

ফর্ম না হোক, ইতিহাস তো বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। মিরপুরের উইকেটে ১৭৯ রানের বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল না এর আগে। বাংলাদেশ নিজের সর্বোচ্চ স্কোর করেছে, মুশফিক-সৌম্য করেছেন ক্যারিয়ারসেরা স্কোর। কিন্তু সেই রানটাই মামুলি বানিয়ে ফেলল শ্রীলঙ্কা, জিতে গেল মাত্র ১৬.৪ ওভারেই। ইতিহাসও গড়া হয়ে গেল, এটাই শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড।

যেভাবে বাংলাদেশ হেরেছে, তার পর আসলে কোনো অজুহাত চলে না। বোলিংয়ে কখনোই তারা এক প্রান্ত থেকে চাপ দিয়ে যেতে পারেনি। যেভাবে শুরুটা দরকার, শ্রীলঙ্কা ঠিক সেটাই করেছিল। প্রথম ৬ ওভারে চলে এলো ৬৭ রান, এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা হারাল শুধু এক উইকেট। ৪.৫ ওভারেই ৫৩ রান তুলে ফেলেছিলেন দুই ওপেনার, এদের মধ্যে গুনাতিলাকাকেই বেশি বিপজ্জনক মনে হচ্ছিল। সেই গুনাতিলাকাই নাজমুল হোসেন অপুর বলে স্টাম্পড হয়ে গেছেন ১৫ বলে ৩০ রান করে।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু শ্রীলঙ্কা এক মুহূর্তের জন্যও বাংলাদেশকে চেপে বসতে দেয়নি। মেন্ডিস শুরুতে একটু সতর্ক ছিলেন, কিন্তু মোস্তাফিজের বলে পর পর তিন চারে যেন হঠাৎ করেই খুঁজে পেলেন ছন্দ। ২৬ বলে পেলেন নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি। আফিফকে এরপর মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন, ৯০ রানে দুই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। দুই রানের মধ্যে থারাঙ্গাকেও ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশ একটু আশা দেখছিল। কিন্তু দাসুন শানাকা ঠিক করলেন, ম্যাচটা শেষ করে আসবেন। চতুর্থ উইকেটে নিরোশান ডিকভেলাকে নিয়ে যোগ করেন ৩৭ রান, এর মধ্যে ডিকভেলার অবদান ১১। বাংলাদেশের এরপর যে আশাটুকু ছিল, সেটাও এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন শানাকা ও পেরেরা। দুজন অবিচ্ছিন্ন ৬৫ রানের জুটি গড়েই ম্যাচ শেষ করে এসেছেন। শানাকা ২৪ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত ছিলেন, পেরেরা মাঠ ছেড়েছেন ১৮ বলে ৩৯ রান করে।

এক নাজমুল অপু ছাড়া বাংলাদেশের বাকি সবার বোলিং ফিগার ছিল ভুলে যাওয়ার মতো, অভিষেকে ২৫ রানে দুই উইকেট নিয়ে অপুই ছিলেন যা একটু উজ্জ্বল।

বাংলাদেশ অবশ্য আফসোস করতে পারে, রানটা আরেকটু বেশিও হতে পারত। প্রথম ১০ ওভার শেষে যখন ১ উইকেট হারিয়ে রান ১০০, ৯ উইকেট হাতে থাকলেও পরের ১০ ওভারে রান উঠেছে ৯৩।

বিজ্ঞাপন

অথচ প্রথম ৬ ওভারেই ৭১ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। শুরুতে ভাগ্য একটু প্রসন্ন ছিল বাংলাদেশ, প্রথম ওভারেই আউট হতে পারতেন জাকির। সৌম্যও টপ এজে সিক্স হয়ে একবার বেঁচে গেছেন, পরে একবার ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি গুনাতিলাকা। ৪০ এর ঘরে চলে গিয়েছিলেন মাত্র ২০ বলেই, কিন্তু এরপরেই হঠাৎ করে যেন খোলসে ঢুকে যান। শেষ পর্যন্ত ৩০ বলে পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি, তার পরেই আম্পায়ারের একটা বিতর্কিত সিদ্ধান্তে হয়ে গেছেন আউট।

তবে মুশফিকুর রহিম যেন পণ করে নেমেছিলেন, টি-টোয়েন্টিতে নিজের হতশ্রী রেকর্ডের একটা জবাব দেবেন। আজ ফিফটি পেয়ে গেছেন মাত্র ৩৭ বলে, সৌম্য চলে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ব্যাট করার সময় বাংলাদেশের স্কোর ২০০ খুবই সম্ভব মনে হচ্ছিল। কিন্তু ৭৩ রানের জুটির পর ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ করতে পারে ১৯৩। ৪৪ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৬৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক, কে জানত ইনিংসটা শুধু সান্ত্বনাই হয়ে থাকবে?

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৯৩/৫ (২০ ওভার) (সৌম্য ৫১, মুশফিক ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ৪৩; জীবন মেন্ডিস ২১/২)
শ্রীলঙ্কা: ১৯৪/৪ (১৬.৪ ওভার) (কুশল মেন্ডিস ৫৩, গুনাতিলাকা ৩০, শানাকা ৪২*, থিসারা পেরেরা ৩৯*; নাজমুল অপু ২৫/২)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী (সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে)
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুশল মেন্ডিস

সারাবাংলা/এএম/এমআরপি

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন