বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ-মিয়ানমার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে যা যা থাকছে

February 15, 2018 | 10:14 pm

এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: পাঁচটি ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে ঢাকা সফররত মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। মিয়ানমারের মন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছয়-সাত হাজারের তথ্য তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি শেষ করেছে বাংলাদেশ।

বৈঠকে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফট্যানেন্ট জেনারেল কাউ সুই সে দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। কাউ সুই বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় এসে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

কক্সবাজারের শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি বৈঠকে যোগ দিকে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকায় এসেছেন।

বিজ্ঞাপন

কমিশনার আবুল কালাম এনডিসি মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছয়-সাত হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করেছি। সরকার চাইলে শুক্রবারের বৈঠকে মিয়ানমারের মন্ত্রীর কাছে দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ছাড়াও মিয়ানমারের মন্ত্রীর সফরে আরও অনেক বিষয় আছে। এই জন্য আমরা একটি ছোট তালিকাও চূড়ান্ত করেছি।’

তিনি জানান, বৈঠকে দুই দেশের শূন্য রেখায় অবস্থানকারী প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে যেন মিয়ানমার সরাসরি ফিরিয়ে নিয়ে যায় সে বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দিবে ঢাকা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তিনজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবারের বৈঠকে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার শরণার্থীর তথ্য তুলে ধরার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে তালিকা চূড়ান্ত করতে গিয়ে কিছু কারিগরি সমস্যা দেখা দেয়। এতে বড় সংখ্যক রোহিঙ্গার তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

তবে, টোকেন এক্সচেঞ্জ হিসেবে যাতে কিছু শরণার্থীর তালিকা দেওয়া যায় সেই চেষ্টা করেছে ঢাকা। এমনিতেই  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ঢিলেমি করছে মিয়ানমার। তার উপর যদি ভুল তালিকা যায় সেটা বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই মিয়ানমারের কাছে যে তালিকাই দেওয়া হচ্ছে সেটা খুব সতর্কতার সঙ্গে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হচ্ছে।

দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকে আরও যেসব বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রতিদিন কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। মিয়ানমার যেন এই বিষয়টি সম্পূর্ণ বন্ধ করে।

ইয়াবার চালান যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সে ব্যবস্থা করা। দুই দেশের মধ্যে বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস (বিএলও) স্থাপনের বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা। সীমান্ত সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে সমাঝোতা করা।

বিজ্ঞাপন

দুই দেশের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ের পারস্পরিক প্রশাসনিক যোগাযোগের পথ খুঁজে বের করা। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিতে টেকসই সমাধানের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ইতিবাচক সাড়া আশা করছে বাংলাদেশ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন বিষয়ে আগেই মিয়ানমারের সঙ্গে কথা হয়েছে। এবার এটি চূড়ান্ত হতে পারে।

বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস হচ্ছে উভয় দেশের সীমান্তে খুব কাছাকাছি পয়েন্টে অফিস স্থাপন। যাতে সীমান্ত সংক্রান্ত যে কোনো ছোট-খাট বিষয়ে এসব অফিস তাৎক্ষণিক আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রায় দুই শ’ কিলোমিটারের মতো সীমান্ত আছে। এর মধ্যে তিনটি লিয়াজোঁ অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। মিয়ানমারের সঙ্গে মোট পাঁচটি দেশের স্থল সীমান্ত আছে। এর মধ্যে লাওস ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে মিয়ানমারের বিএলও আছে।

দুই দেশের স্থানীয় প্রশাসনিক পর্যায়ে যাতে পারস্পরিক যোগাযোগ-বৈঠক নিয়মিত হয় সে বিষয়েও গুরুত্ব পাবে মন্ত্রীদ্বয়ের আলোচনায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এখনো দুই দেশের যোগাযোগ মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যায়ে। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সমস্যার বিষয়টি রাখাইন রাজ্যকেন্দ্রিক। তাই ছোট-খাট সমস্যার সমাধানে রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশের বিভাগীয় বা জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এতে অনেক বিষয় স্থানীয়ভাবে কম সময়ে সমাধান করা সম্ভব হবে।

আলোচনায় অন্যতম গুরুত্বের বিষয় থাকবে ইয়াবা পাচার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন এবং গত বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিয়ানমার সফর করে এসেছেন এমন একজন কর্মকর্তা জানান, ইয়াবা নিয়ে মিয়ানমারের পক্ষে উদ্বেগ আছে। আমাদের সফরের সময় এ বিষয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কি নিজেও বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে ইয়াবা উৎপাদন ও পাচার রোধে কীভাবে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এর বাইরে দুই দেশের সীমান্তে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকা সশস্ত্র কোনো গ্রুপ যাতে কোনো দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের আশ্রয় না পায় সে বিষয়ে আগের মতো আগামী দিনে সক্রিয় থাকার অঙ্গীকার করবে দুই দেশ।

তিন দিনের সফরে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  : মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফট্যানেন্ট জেনারেল কাউ সুই বৃহস্পতিবার দুপুরে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসেন। তার সঙ্গে সে দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব উ টিন মিন্টসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন। ঢাকায় পৌঁছার পর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদী ভ্রমণের পর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

শুক্রবার বিকাল তিনটায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এ আরও দুটি বৈঠক শেষে মন্ত্রীদ্বয় যৌথ ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে। আগামী শনিবার সংসদ ভবন পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের। এ দিন দুপুরের তারা ঢাকা ছেড়ে যাবেন বলে তাদের সফরসূচি সূত্রে জানা গেছে।

সারাবাংলা/জেআইএল/আইজেকে

আরও পড়ুন: মিয়ানমারকে ১৬ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গাদের তালিকা দেবে বাংলাদেশ

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন