বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গাদের হাতে এনআইডি, ইসিকর্মীর জবানিতে এলো কর্মকর্তার তথ্য

November 21, 2019 | 8:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম ব্যুরো: রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেওয়ার মামলায় গ্রেফতার চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহায়ক নাজিম উদ্দিন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নাজিমের জবানবন্দিতে রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আব্দুল লতিফ শেখ নামে একজন নির্বাচন কর্মকর্তা জড়িত থাকার তথ্য এসেছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের আরও এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম জবানবন্দিতে এসেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুল আমীনের আদালতে নাজিম দায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ১৮ নভেম্বর দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর লাভ লেইনে জেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে নাজিমকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এ সংক্রান্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত নাজিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। দুইদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার নাজিমকে আদালতে হাজির করা হয়।

বিজ্ঞাপন

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুইদিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নাজিম আদালতে হাজির করা হয়েছিল। তিনি জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।’

জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে কিছুই বলতে রাজি হননি পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া।

তবে এনআইডি কেলেঙ্কারির ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনকে গ্রেফতারের পর তিনি নাজিমের বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে তথ্য দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জয়নাল-নাজিমসহ নির্বাচন অফিসের একটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাইয়ে দেওয়া শুরু করেন। তখন নগরীর পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন কর্মকর্তা ছিলেন আব্দুল লতিফ শেখ। নাজিম ছিলেন তার অধীনে অফিস সহায়ক। আব্দুল লতিফ শেখের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দাপট ছিল নাজিমের। ২০১৭ সালে কক্সবাজার দিয়ে যখন রোহিঙ্গা ঢল শুরু হয়, এরপর জয়নাল ও নাজিম মিলে গণহারে রোহিঙ্গাদের ভোটার করেন এবং এনআইডি পাইয়ে দেন। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত তাদের সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই জালিয়াতি করে যান।

আব্দুল লতিফ শেখ বর্তমানে পাবনা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

উল্লেখ্য, লাকী নামের এক নারী গত ১৮ আগস্ট স্মার্ট কার্ড তুলতে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গেলে তার হাতে পুরনো এনআইডিতে ১৭ ডিজিটের নম্বর দেখে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে জেরার মুখে লাকী নিজের প্রকৃত নাম রমজান বিবি এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পর টেকনাফের মুচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছিলেন বলে স্বীকার করেন। ওই রোহিঙ্গা নারী ভুয়া ঠিকানা দিয়ে তৈরি করিয়েছেন ওই জাল এনআইডি। অথচ ওই ভুয়া পরিচয়পত্রের তথ্যও নির্বাচন কমিশনের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে।

এই ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ও এনআইডি পাইয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজতে অভিযান শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন জেলা নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা। বাকি দুজন হল- জয়নালের বন্ধু বিজয় দাশ ও তার বোন সীমা দাশ ওরফে সুমাইয়া। জয়নালের হেফাজতে থাকা নির্বাচন কমিশনের লাইসেন্সকৃত একটি ল্যাপটপও উদ্ধার করা হয়, যেটি বিজয় ও সীমার কাছে রেখেছিলেন জয়নাল। রাতেই ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পল্লবী চাকমা বাদি হয়ে কোতোয়ালী থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলায় নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ের কর্মী শাহনূর মিয়া, অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুক, মো.শাহীন , মো.জাহিদ হাসান এবং পাভেল বড়ুয়া এবং চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও মীরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেন ও সর্বশেষ নাজিমসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

সারাবাংলা/আরডি/একে

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন