বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস আংশিক বন্ধ

November 27, 2019 | 1:13 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নৌযান শ্রমিকদের ডাকা কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে নৌপথে পণ্য পরিবহন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজ) থেকে পণ্য খালাস আংশিক বন্ধ আছে। ধর্মঘট পালন করা শ্রমিকরা বর্হিনোঙ্গরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধের দাবি করলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু জাহাজে খালাস অব্যাহত আছে।

বিজ্ঞাপন

তবে কর্ণফুলী নদীর ১৭ ঘাটে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য উঠানামা পুরোপুরি বন্ধ আছে। নদীতে অলস বসে আছে প্রায় দেড় হাজার লাইটারেজ জাহাজ। একইভাবে পণ্য নেওয়া ও খালাসের অপেক্ষায়ও বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে বসে আছে বেশকিছু মাদার ভ্যাসেল। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে পুরোপুরি স্বাভাবিক থাকলেও সার্বিকভাবে পণ্য পরিবহন ও উঠানামায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।

বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ রুটে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১১ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ১২টা থেকে দেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু করেছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক লাইটারেজ জাহাজগুলোর কার্যক্রমে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গরে বর্তমানে অবস্থান করছে বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ৭৫টি মাদার ভ্যাসেল। এর মধ্যে ৪৬টি জাহাজ থেকে আজ পন্য খালাস হওয়ার কথা ছিলো। আর বাকি ২৯টি জাহাজও পন্য খালাসের শিডিউলের অপেক্ষায় আছে।

বিজ্ঞাপন

লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) ধর্মঘট শুরুর আগে যেসব লাইটারেজ জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে গেছে, সেগুলোতে কাজ হচ্ছে। সেগুলো ফেরত আসেনি। ৫০টার মতো লাইটারেজ জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে আছে যেগুলো পণ্য খালাস করছে। তবে আজ (বুধবার) কোনো লাইটারেজ জাহাজ বর্হিনোঙ্গরে যাবার জন্য বুকিং দেয়নি। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে বৃহস্পতিবার থেকে হয়ত খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা খবর নিয়ে জেনেছি, আউটারে কিছু মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে। লাইটারেজ জাহাজ যেগুলো আউটারে যেতে পেরেছে, সেগুলো কাজ বন্ধ রাখেনি। তবে বন্দরের ভেতরে জেটিতে পণ্য খালাসে কোনো সমস্যা নেই। এখানে তো লাইটারেজ শ্রমিকদের কোনো কাজ নেই। বর্হিনোঙ্গরে পণ্য উঠানামা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে মাদার ভ্যাসেলগুলোর ওপর ওয়েটিং চার্জ আরোপ হবে। এখন পর্যন্ত অবশ্য সমস্যা নেই। তবে ২৪ ঘন্টা পার হওয়ার পর পরিস্থিতি অবনতির দিকে দিকে যেতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকদের মধ্যে দুইটা গ্রুপ হয়ে গেছে। এক গ্রুপ ধর্মঘট করলেও আরেক গ্রুপ কাজ করছে। তারা আবার ধর্মঘট ডেকেছে ৩০ নভেম্বর থেকে। গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার পর থেকে কোনো লাইটারেজ জাহাজ আউটারে যেতে পারেনি শ্রমিকদের বাধার কারণে। এর আগে যেগুলো গেছে সেগুলোতে খালাস হচ্ছে।’

‘তবে কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমাদের মালিকপক্ষের কোন সমস্যা নেই। আমরা তো জাহাজ চালানোর জন্য রেডি। কিন্তু শ্রমিকরা কাজ না করলে কিভাবে সম্ভব ? ১২০০ থেকে ১৫০০ টন পণ্য নিয়ে আসা একটি মাদার ভ্যাসেলের একদিনের ডেমারেজ আসবে ১২ থেকে ১৪ হাজার ডলার। এই ধর্মঘটে আমাদের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, মাদার ভ্যাসেলগুলোর এজেন্টরাও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’

লাইটার জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রামের যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহজাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আউটারে খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু সুবিধাভোগী, দালালচক্র আছে, তারা আউটারে খালাস চলছে বলে বানোয়াট তথ্য দিচ্ছে। শ্রমিকদের সর্বাত্মক সমর্থনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট চলছে। চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে লাইটারেজ জাহাজ কোথাও যাচ্ছে না।’

এদিকে বুধবার সকালে কর্ণফুলী নদীর মাঝিরঘাটসহ আশপাশের এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। নদীর ১৭ ঘাটে কাজ বন্ধ করে দিয়ে শ্রমিকরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘একবছর ধরে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় আমাদের কথা শোনেনি। এজন্য আমরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছি।’

সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন