বিজ্ঞাপন

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারে ধস

November 27, 2019 | 4:22 pm

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিরুপ প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বিশেষ করে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণের কারণে পুঁজিবাজারে এই খাতের শেয়ারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সর্বশেষ পিপলস লিজিং অবসায়নের পর আর্থিক খাতের শেয়ারে দরপতনের মাত্রা আরো বেড়েছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে ৩০টি ব্যাংক ও ২৩টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টি ব্যাংক ও ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুর নীচে লেনদেন হচ্ছে। মূলত আর্থিক খাতের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে এই খাতের শেয়ারে দরপতন হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

বিজ্ঞাপন

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজার শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। পুঁজিবাজারের তারল্য প্রবাহের বিষয়েও ব্যাংকগুলোকে ভূমিকা রাখতে হয়। আবার অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন। একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের দুরবস্থার কারণে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের শেয়ারে বড় রকমের ধস হলে সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারেও ধস নামবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হবে। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ও তারল্য সঙ্কট দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে পিপলস লিজিং অবসায়নের খবরে পতনের মাত্রা আরো বেড়েছে।

ডিএসই সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা। এই অভিহিত মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম যোগ করে বেশিরভাগ কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে সাতটি ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যর নীচে লেনদেন হচ্ছে। আর ২৩ ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে অভিহিত মূল্যর চেয়েও কম দামে।

বিজ্ঞাপন

অভিহিত মূল্যের নীচে ১৭ ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার: গত ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত যে ১০টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অভিহিত মূল্যর নীচে লেনদেন হচ্ছে সেগুলো হলো, বিআইএফসি (২.৫০ টাকা), ফারইস্ট ফাইন্যান্স (২.৭০ টাকা), ফার্স্ট ফাইন্যান্স (৩.৮০ টাকা), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (৫.৪০ টাকা), ইউনিয়ন ক্যাপিটাল (৬.২০ টাকা), প্রিমিয়ার লিজিং (৬.৩০ টাকা), প্রাইম ফাইন্যান্স (৬.২০ টাকা), এফএএস ফাইন্যান্স (৬.৭০ টাকা), বিডিফাইন্যান্স (৯.৩০ টাকা)। এছাড়া অবসায়ন হওয়া পিপলস লিজিংয়ের সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৩ টাকা।

অন্যদিকে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে সাতটি ব্যাংকের শেয়ার অভিহিত মূল্যর নীচে লেনদেন হচ্ছে। সেগুলো হলো, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (৩.২০ টাকা), এবি ব্যাংক (৭.৭০ টাকা), ন্যাশনাল ব্যাংক (৮.৩০ টাকা), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (৮.৪০ টাকা), আইএফআইসি ব্যাংক (৯.৫০ টাকা) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (৯.৭০ টাকা), এক্সিম ব্যাংক (৯.৯০ টাকা)।

অন্যদিকে, পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুঁজিবাজারের একটা সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অবসায়নের কারণে এই খাতের সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম পড়ে গেছে। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক খাত দুর্বল হয়ে পড়ায় পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে।

ব্যাংক খাতের দুরবস্থা: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। এটি বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৬৯। খেলাপি ঋণের কারণে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১০টি ব্যাংক। এর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত খাতের ৬টি ব্যাংক রয়েছে। বাকি চারটি ব্যাংকের মধ্যে ৩টি বেসরকারি এবং একটি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। সম্মিলিতভাবে দশটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৮ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।

পিপলস লিজিংয়ের অবসায়ন: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অবসায়ন হতে যাচ্ছে পিপলস লিজিং। ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। যাত্রা শুরুর ২২ বছরের মাথায় চলতি বছরের জুলাই মাসে এটি অবসায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে আমানতকারীদের মোট ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আটকে পড়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা রয়েছে ৬ হাজার সাধারণ গ্রাহকদের আমানত। এছাড়াও আরো নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বর্তমান তারল্য সঙ্কটের কারণে আমানতকারীদের আমানত পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে পুঁজিবাজারেও এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জিএস/জেএএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন