বিজ্ঞাপন

‘মানুষ অজান্তেই নিজের শরীরে অসংক্রামক রোগের বাসা বানাচ্ছে’

November 28, 2019 | 12:15 am

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, মানুষ এখন নিজের শরীরের যত্ন নেয় না। চর্বি, তেল, চিনিযুক্ত খাবার বেশি খায়। শারীরিক ব্যায়াম করে না। সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করে না। ফলে নিজেদের অজান্তেই শরীরে অসংক্রামক রোগের বাসা বানাচ্ছে। এর ফলে রোগাক্রান্ত মানুষের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি তার পরিবার তথা দেশের সমান ক্ষতি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বলরুমে ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বহুখাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫’- শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ কর্মসূচির উদ্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তত্ত্বাবধানে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতে – তামাক সেবন, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, শারীরিক অলসতা, মদ্যপান ইত্যাদি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির অন্যতম কারণ। কারও জীবনাচরণে যদি এমন অভ্যাস থাকে, তবে তাদের এই রোগগুলো হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এই রোগগুলো দীর্ঘমেয়াদী। আর তাই একবার হয়ে গেলে তার প্রভাব থাকে সারাজীবন। সেজন্য রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে আমাদের রোগ প্রতিরোধের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘অসংক্রামক রোগের বিষয়ে ঝুঁকির কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ‘সকল নীতিতে স্বাস্থ্য’ এই মূলমন্ত্র ধারণ করে সরকারের সব বিভাগ, সংস্থা ও দফতরকে তাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মী, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব মিলে যদি একযোগে কাজ করে তবেই অসংক্রামক রোগের আসন্ন মহামারী মোকাবিলায় সফলতা লাভ করা সম্ভব।’

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচারের পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ন, ধূমপান, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের প্রসার, বায়ুদূষণ, মানসিক চাপসহ নানা কারণে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের সংখ্যা বাড়ছে। দেশে বর্তমানে অসংক্রামক রোগে দেশের শতকরা ৬৭ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হৃদরোগ, ফুসফুস, কিডনি রোগসহ নানা অসংক্রামক রোগ বা নন কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনডিসি) কারণে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।’

তিনি জানান, বাংলাদেশে আগে বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগের কারণে অনেক মানুষ মারা যেত। যেমন- কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এখানে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালে ৫২ শতাংশ ও ২০১৪ সালে ৫৯ শতাংশ মানুষ মারা গেলেও ২০১৭ সালে এই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৬৭ শতাংশে। বিভিন্ন কারণে বর্তমানে দেশে এই অসংক্রামক রোগ বাড়ছে।

অসংক্রামক রোগের বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের সচেতন করে তুলতে হবে। স্কুল পর্যায় থেকেই তাদের শারীরিক ব্যায়াম সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। এছাড়াও সবার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, উপযুক্ত প্রযুক্তি, মনিটরিং ও মূল্যায়ন এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করার ব্যবস্থাও থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন খাতের সমন্বয় ও প্রয়োজন হলে আইনের বাধ্যবাধকতাও থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অসংক্রামক রোগে প্রায় চার কোটি ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে বছরে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৩০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী প্রায় দেড় কোটি মানুষের মৃত্যু হয় । এর মধ্যে ‘অকালমৃত্যুর’ সংখ্যা ৮৫ শতাংশের বেশি।’

বিজ্ঞাপন

সভায় আলোচকরা জানান, বিশ্বের অন্যান্য স্থানের ন্যায় বাংলাদেশেও হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ ইত্যাদির মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মারাত্মক হারে বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে, যার ২২ শতাংশই হলো অকাল মৃত্যু।

এছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী অসংক্রামক রোগ ও তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার ফলে প্রতিবছর লক্ষাধিক লোক দারিদ্র সীমার নিচে চলে যায়। ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর সেজন্যই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অসংক্রামক রোগকে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে বলেও জানান বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কমিউনিটি স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। এছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন