বিজ্ঞাপন

‘আমি বলব— আমি সফল’

December 3, 2019 | 7:46 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দায়িত্ব গ্রহণের পর গত চার বছরের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সফল মনে করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে মেয়রের সফলতা-ব্যর্থতা বিচারের একমাত্র মালিক জনগণ বলে মনে করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

দায়িত্ব গ্রহণের চার বছরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নগরীর আন্দরকিল্লায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পুরাতন ভবনের কেবি আব্দুচ ছাত্তার মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র নাছির বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে যদি আমাকে বলতে হয়, আমি বলব- আমি সফল। তবে আমি কি বললাম, সেটা বড় বিষয় নয়। জনগণই বিচার করার মালিক। তারাই বিচার করবে, আমার সফলতা কতটুকু আর ব্যর্থতা কতটুকু। তবে সফলতা-ব্যর্থতা বিচার-বিশ্লেষণ করার আগে দেখতে হবে আমি এবং কাউন্সিলরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে নগরবাসী কতটুকু সেবা পেয়েছে এবং এখন কতটুকু পাচ্ছেন। এখন নগরবাসীর সেবার মান ও পরিধি কতটুকু বেড়েছে, এটা বিচার করতে হবে।’

‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সত্যকে মেনে নেওয়ার মতো সৎ সাহস যার আছে, তিনি নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অনেক উপাদান, যেগুলো আগে এই শহরে ছিল না, সেগুলো এখন নগরবাসী পাচ্ছেন অথবা পেতে যাচ্ছেন।’- বলেন আ জ ম নাছির।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম শহর ধূলার শহরে পরিণত হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। সেবা সংস্থাগুলো করছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমরাও করছি। নগরবাসীর অনেকেও নির্মাণকাজ করছেন। সমস্যা হচ্ছে, সবাই নির্মাণ সামগ্রী রেখেছেন উন্মুক্ত স্থানে। এজন্য বায়ু দূষণ বাড়ছে। এটা যাতে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, সেজন্য সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছি, সময় বেঁধে দিতে। এর মধ্যে যদি নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে না নেয়, তাহলে জরিমানা করব। আইন প্রয়োগ করা গেলে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসবে।’

‘ধূলা রোধে পানি ছিটিয়ে সমাধান দেখছেন না মেয়র’- এমন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন শুকনো মৌসুম। এক জায়গায় পানি ছিটালে ২০-২৫ মিনিটের জন্য রেজাল্ট আসবে অর্থাৎ ধূলা উড়বে না। এরপর আবারও উড়বে। যখন ধূলাবালি উড়ে, তখনই পানি ছিটানো দরকার। তখন তো যানবাহন চলে, যানজট হয়। সকালে ছিটালে রোদ উঠলে আবার একই অবস্থা। তখন আবার সবাই বলবে, সিটি করপোরেশন কাজ করছে না।’

তহবিল সংকট এবং শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে মশার ওষুধ ছিটানো থেকে বিরত থাকার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের মেয়র বলেন, ‘ব্যাপকভাবে মশার ওষুধ ছিটানো খুবই এক্সপেনসিভ। যে অর্থের প্রয়োজন, সে অর্থ আমাদের নেই। মশার ওষুধ যদি ব্যাপকভাবে ছিটানো হয়, শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। আমার ঘরে সেবক গিয়েছিল। তাদের মশার ওষুধ ছিটাতে দিইনি। কারণ আমার চাচাতো ভাইয়ের নবজাতক বাচ্চা আছে। বাচ্চার অসুবিধা হতে পারে। অনেক জায়গা আছে, অনেক বাড়ি আছে, ওষুধ ছিটাতে দেয় না। এটা আপনারা যাচাই করে দেখুন। যে কারণে আপনি আপনার ঘরে একটা কয়েল জ্বালান না। একটু স্প্রে মারেন। আপনার মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়? ওষুধটা বিষয় না। আমাদের সচেতন হতে হবে। মশার জন্ম যাতে না হয়, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে জোরদার করে মশা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে চাই।’

বিজ্ঞাপন

নগরীতে খেলার মাঠের সংকট এবং মেলাসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য মাঠ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন মেয়র নাছির। এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘নগরীতে খেলার মাঠের সংকট রয়েছে। যেসব মাঠ আছে সেগুলোকে মেলাসহ নানা অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ দিতে হয়। এমন এমন জায়গা থেকে মাঠ বরাদ্দের জন্য অনুরোধ আসে, বোঝাতে পারব না। মাঠের অনুমোদন না দিলে আমি কি চেয়ার থাকতে পারব? ইচ্ছের বিরুদ্ধে অনেক সময় মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দিতে হয়।’

মেয়র বলেন, ‘বিগত দিনে অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে নগরবাসী কষ্ট পাচ্ছে। নগরীতে এখন নতুন করে খেলার মাঠ করার কোনো সুযোগ নেই। নগরীর বিভিন্ন স্কুলের মাঠগুলো শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য খুলে দিতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দেয় না। স্কুলে পাঠদানের পর মাঠগুলো উন্মুক্ত করে দিতে পারে। আগামীতে এটি করার চেষ্টা করব।’

নগরীর কাজীর দেউড়িতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন শিশুপার্কটি নতুন করে গড়ে তোলাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘সেনাবাহিনী জায়গাটি শিশুপার্ক করার জন্য চসিককে দিয়েছিল। শিশুপার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চসিকের চুক্তিটা নবায়নযোগ্য। তাদের আধুনিক রাইডের শর্ত দিয়েছি। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তারা আধুনিক রাইড সংগ্রহ করছে। আগ্রাবাদ শিশুপার্ক নিয়ে মামলা চলছে। এ ছাড়া ৩৫০টি মামলা চলছে বিভিন্ন বিষয়ে।’

চার বছরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মেয়র জানান, নগরীতে ১ হাজার ৩৭৫টি খোলা ডাস্টবিন থেকে ৮২৫টি অপসারণ করা হয়েছে। চসিক ৯ লাখ বিন বিতরণ করেছে। ১৯৭২ জন পরিচ্ছন্ন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৯৫২ কিলোমিটার সড়ক আলোকায়নের আওতায় আনা হয়েছে। ১ হাজার ৩০৪ কিলোমিটার সড়কে ৬৪ হাজার ৬৮৩টি এলইডি বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মেয়র জানান, ১২৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ ফুট প্রস্থ ও ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

‘খালের জন্য জায়গা অধিগ্রহণের বিষয় আছে। ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা লাগবে। ৯০০ কোটি টাকার বেশি লাগবে ক্ষতিপূরণ। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আমাদের দিতে হবে। মন্ত্রণালয় টাকা দিয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে দিয়েছি। টেন্ডার হয়ে গেছে। এখন আমরা ঠিকাদার নিয়োগ দেব।’- বলেন মেয়র।

তিনি বলেন, ‘নগরীতে গণপরিবহন সংকট কাটাতে একটি শিল্প গ্রুপের মাধ্যমে তিন রঙের ১০০ এসি বাস চালু করা হচ্ছে। আশা করি জানুয়ারিতে ৩ রুটে এসব বাস চালু হবে। স্টপেজের জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে ‘

সংবাদ সম্মেলনে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমও ছিলেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন