বিজ্ঞাপন

‘অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের অগ্রপথিক ছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়’

December 10, 2019 | 5:55 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অধ্যাপক অজয় রায়ের মৃত্যুতে জাতি হারিয়েছে এক সূর্যসন্তানকে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের একজন অগ্রপথিক। একজন পদার্থবিদ হিসেবেই নয়, বাংলাদেশের জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তার মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি, বলে মন্তব্য করেছেন অজয় রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেশের বিশিষ্টজনেরা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে অজয় রায়কে শ্রদ্ধা জানান দেশের বিশিষ্টজনরা।

তাদের মাঝে কেউ ছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়ের সহযোগী, সহযোদ্ধা আবার কেউবা তার ছাত্র। সবারই চোখে স্বজন হারানোর বেদনা। সকলের মুখেই একটিই কথা আর তা হলো অধ্যাপক অজয় রায় আজীবন তার নিজের আদর্শে স্থির থেকে দেশের সেবা করে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, ‘অধ্যাপক অজয় রায় স্যার আমাদের শিক্ষক ছিলেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে থাকতাম। তিনি সেই হলের প্রভোস্ট ছিলেন। সে কারণে আমি স্যারের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলাম। উনার কাছ থেকে আমরা শিখেছি অনেক কিছুই। একজন মুক্তিযোদ্ধা, অসাম্প্রদায়িক আন্দোলনের অগ্রপথিক হিসেবে দেশ গঠনের কাজেও তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘৮০’র দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে উনার সাহসী ভূমিকা আমাদের প্রেরণা যুগিয়েছে। স্যারের মৃত্যুতে জাতি হারালো এক প্রতিভাবান গুণীসন্তানকে। এই অভাব অপূরণীয়। তার আদর্শ বাংলাদেশের প্রতিটা অসাম্প্রদায়িক চেতনাধারী মানুষের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্যার সবসময়েই মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধারণ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। অভিজিত হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি কষ্ট পেলেও লড়াই বন্ধ করে দেননি। আমৃত্যু তিনি তার আদর্শে অনড় ছিলেন। আমরা সেই আদর্শের মশাল ধারণ করে জাতি হিসেবে এগিয়ে যাবো বলে আশা করি।’

বিজ্ঞাপন

সাবেক ডাকসু ভিপি ও বর্তমান সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটা ক্ষেত্রে অবদান ছিল অধ্যাপক অজয় রায়ের। স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনের কাজেও তার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। উনার মতো একজন শিক্ষককে হারানো আমাদের জন্য এক বিশাল ক্ষতি। শুধুমাত্র শিক্ষকতাই নয়, নিজের অসাম্প্রদায়িক চেতনার আদর্শের লড়াইয়ের জন্যেও জাতি উনাকে সবসময় স্মরণ করবে। উনার মৃত্যুতে জাতি একজন প্রগতিশীল, মুক্তমনা ও স্বাধীনচেতা মানুষকে হারালো। জীবিত থাকাকালীন সময়ে উনি উনার সন্তান অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যেতে পারেননি। এটি দুঃখজনক। এটা আমাদের সমাজের সার্বিক ব্যর্থতার একটি চিত্র বলে মনে করি।’

রাজনীতিবিদ পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘পৃথিবীতে একজন বাবার সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো পুত্রের লাশ বহন করা। অধ্যাপক অজয় রায় সেই কষ্ট দিনের পর দিন পেয়ে গেছেন। তাও নিজের আদর্শে অটল ছিলেন তিনি। তার এই চলে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজে এক শূন্যতার সৃষ্ঠি করেছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অধ্যাপক অজয় রায় শুধুমাত্র একজন পদার্থবিজ্ঞানীই ছিলেন না, তিনি একজন ইতিহাসবিদও ছিলেন। শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসই নয়, আমাদের এই উপমহাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়েও তার দক্ষতা ছিল।’

বিজ্ঞাপন

অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘অধ্যাপক অজয় রায় মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই নয় শুধু তিনি সমাজের আলোকবর্তিতা হিসেবে কাজ করে গেছেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ নিয়ে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করতে অনেক সংগ্রাম করেছিলেন। তার এই মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘অধ্যাপক অজয় রায় যা বলতেন তা বিশ্বাস করতেন। নিজের জীবনের প্রতিফলন ছিলেন তিনি নিজেই। উনার আদর্শকে তিনি তার কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন। উনাকে হারানো আমাদের জন্য এক বিশাল ক্ষতি। তবে উনার অবদান ও আদর্শ যদি আমরা স্মরণ রাখি তবে জাতির মঙ্গল হবে।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব প্রবীণ অভিনেতা হাসান ইমাম বলেন, ‘অধ্যাপক অজয় রায় একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ছিলেন। আদর্শের লডাইয়ে তিনি ছিলেন আপসহীন একজন ব্যক্তি বাংলাদেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছিলেন অগ্রণী সৈনিক। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিপক্ষে তার কণ্ঠ সবসময়েই সোচ্চার ছিল। তার ছেলে অভিজিত মৌলবাদীদের হাতে হত্যা হলেও তিনি তার আদর্শের লড়াই ছাড়েননি। এমন আদর্শের লড়াই চালিয়ে যাওয়া মানুষ এখন খুব কম পাওয়া যায়। তার মৃত্যুতে জাতি হারালো এক সূর্যসন্তানকে।’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবেই শুধু নয়, তিনি কাজ করে গেছেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের জন্যেও। যে আদর্শের লড়াই তিনি চালিয়ে গেছেন তাতে এক বিশাল ক্ষতি হয়ে গেলো তার প্রয়াণে।’

উল্লেখ্য, সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান অজয় রায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ২৫ নভেম্বর জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

সারাবাংলা/এসবি/এমআই

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন