বিজ্ঞাপন

শত ফুল ফুটতে দাও: শেখ হাসিনা

December 7, 2017 | 8:36 pm

বিশেষ সংবাদদাতা

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রশ্ন নেওয়ার জন্য অপেক্ষাই করছিলেন। কিংবা জানতেনই যে, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করবেন। তবে লিখিত বক্তব্য শেষ করে স্বভাবসুলভ হাসিটি দিয়ে যখন বললেন, এইতো আর কী, এখন তবে যাই! তখন উপস্থিত সাংবাদিকরা তা মানলেন না। ফলে লিখিত বক্তব্যে সাম্প্রতিক কম্বোডিয়া সফরের বিষয়গুলো থাকলেও পরের প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জবাব দিলেন অর্ধ ডজনেরও বেশি প্রশ্নের। আর তাতে উঠে এল দেশের সমসাময়িক নানা বিষয়। উঠে এল জেরুজালেমকে একতরফা ইসরায়েলি রাজধানী ঘোষণায় শেখ হাসিনার স্পষ্ট বিরোধিতা। দেশের রাজনীতির প্রসঙ্গে তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, যতই কথা উঠুক না কেন বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য কোনো আলোচনায় তিনি যাচ্ছেন না, কিংবা উদ্যোগও নিচ্ছেন না। নির্বাচনী হাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সে কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী হলে তাতেই তো গণতন্ত্রের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়। আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফের নির্বাচিত হয়ে তার দল স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে চায় সে কথাও বলেছেন শেখ হাসিনা। আর দলের অনেকেই এমপি হতে চায়, এমন তথ্যে বলেছেন, শত ফুল ফুটতে দাও।

লিখিত বক্তব্য শেষে তখনো ঘণ্টাখানেক হাতে সময় ছিল, তাই প্রশ্ন নিতেও উত্তর দিতে বাধা নেই। সেভাবেই শুরু হলো। প্রশ্ন ছিল রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে। শেখ হাসিনা বললেন— ‘সকলেই চায় মিয়ানমারের এই নাগরিকরা দ্রুত তাদের দেশে ফেরত যাক। আমিও চাই। এটাও চাই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক সদ্ভাব বজায় থাকুক। যে জনগোষ্ঠী দেশের ভেতরে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে সেখানে এখনই তাদের ফিরিয়ে দেওয়া একটি মানবিকতার প্রশ্ন। আর সে কারণেই সরকার ভাসানচরে এই রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। যতদিন তারা ফেরত যেতে না পারে ততদিন যেন একটু ভালভাবে থাকতে পারে সে জন্যই এই ব্যবস্থা।’

আলোচনা দ্রুত গতিতে রাজনীতির দিকে ঢুকে পড়ে— বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই ক্ষমাকে তিনি কোন চোখে দেখছেন? —এই প্রশ্নে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ক্ষমা কীসের ক্ষমা? আর কে কাকে ক্ষমা করবে? একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা কি আমরা ভুলে যাব? আর খালেদা জিয়াকে আসলে ক্ষমা চাইতে হবে দেশবাসীর কাছে।’

বিজ্ঞাপন

এ সময় আশঙ্কা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে এরা যখনই এ ধরনের কথা বলে, তখনই বড় কোনো ঘটনা ঘটে। গ্রেনেড অ্যাটাক, বোমা পুতে রাখা, গুলি এমন অনেক ঘটনাই আমরা দেখেছি।

খালেদা জিয়া তার বিরুদ্বে করা মামলাগুলোয় পলায়নপর মনোবৃত্তি দেখাচ্ছেন, এমন উক্তি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত স্থগিতাদেশ, এত তারিখ পাল্টানোর সুবিধা কেন নিচ্ছেন তিনি?’

সৌদি আরবে অর্থপাচার আর সেখানে খালেদা জিয়ার পরিবারের শপিংমলের মালিকানা আর সে বিষয়ে সরকার কী করবে? —এমন প্রশ্ন এলে এবার সাংবাদিকদেরই এক হাত দিলেন শেখ হাসিনা। তিনি বললেন, ‘আচ্ছা বলুন তো, এমন একটি ঘটনার পর আপনারা কী করেছেন? আমি তো এ নিয়ে তেমন কোনো রিপোর্ট দেখলাম না। দুই-একটি টেলিভিশন দুটি সংবাদপত্র লেখালেখি করলেও অন্যরা চুপ। কেন? ওই শপিংমলে ফ্রি কেনাকাটার কার্ড পেয়ে গেছেন নাকি?’

বিজ্ঞাপন

বেশ অভিমানের স্বরেই বললেন, ‘এই অভিযোগ যদি  আমার কিংবা আমার পরিবারের কারো বিরুদ্ধে হতো, সংবাদপত্রগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ত। অথচ এই সংবাদমাধ্যমগুলোর অধিকাংশই আমার লাইসেন্স কিংবা অনুমোদন দেওয়া। খালেদা জিয়ার কোনো ঘটনায় এদের খুব একটা উচ্চবাচ্চ করতে দেখি না ‘

‘সবার মুখে বুঝি রসগোল্লা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে’ —ফের সাংবাদিকদের টিপ্পনী কাটলেন শেখ হাসিনা।

এবার প্রশ্ন এল আগাম নির্বাচন নিয়ে গুঞ্জন প্রসঙ্গে। শেখ হাসিনা তা সরাসরি নাকচ করে দিলেন। বললেন, ‘এমন কোনো দৈন্যদশায় পড়িনি যে এখনই নির্বাচন দিতে হবে।’ তবে এ-ও বললেন, ‘গণতন্ত্রে আগাম নির্বাচন আছে।’

বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও সাফ জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণতান্ত্রিক দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া গণতান্ত্রিক দায়িত্ব, এমন মত দিয়ে তিনি বললেন, ‘বিএনপি সে দায়িত্ব পালন করবে এটাই আশা করছি।’

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে তার দলের ফের জয় হবে সে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বললেন, ‘চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, এত স্বল্প সময়ে এত উন্নয়ন আর কেউ করতে পারেনি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা চাইলে দেশবাসীর আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।’

দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা করছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগে যদি অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হন, সেটা ইতিবাচক। আমরা শত ফুল ফুটতে দাও এই নীতিতে বিশ্বাসী। এর মধ্য থেকে যে ফুলগুলো সেরা সেগুলোই বেছে নিয়ে মনোনয়ন দেব।’

যারা এমপি হিসেবে রয়েছেন তাদের নিয়ে জরিপ চালানো হয়েছে এমন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘জরিপ অবশ্যই করতে হবে। আমাদের দেখতে হবে কে কীভাবে কাজ করছে। কার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সেটাও দেখা হচ্ছে। যাদের প্রয়োজন মনে হয়েছে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’ তবে কেউ ডেঞ্জার জোনে রয়েছে কি-না? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনা জানিয়ে দেন— তার হিসেবে রেড জোনে কেউ নেই।

নির্বাচন নিয়ে ফের আশাবাদিতা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের যে উন্নয়নসাধন করেছি তাতে নতুন নতুন আসনে জয়ী হব। দেশের মানুষ উন্নয়ন চাইলে আওয়ামী লীগকেই ভোট দিতে হবে।’

‘দেশ আগে ছিল ভিক্ষুক জাতি এখন হয়েছে উন্নয়নের রোল মডেল। এই সুনাম আমি দেশকে এনে দিতে পেরেছি। দেশের এই উন্নয়ন ধরে রাখবেন, নাকি অর্থপাচারকারীদের হাতে আবার দেশ তুলে দেবেন সেটা নির্ধারণ করবেন দেশের জনগণ’ —বললেন শেখ হাসিনা।

‘আমি উন্নয়ন করেই যাব, ভোট দিলে আছে, না দিলে নাই’ —বলেন শেখ হাসিনা।

একটি হিসাব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই বলেন স্বাধীনতার পর সাড়ে চার দশক। কিন্তু দেশ উন্নয়নের জন্য সময় ছিল মোটেই ১৭ বছর। বাকি ২৯ বছর দেশ ছিল লুটেরা আর দুর্নীতিবাজদের হাতে। যারা মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। আর আমাদের কাছে ক্ষমতা স্রেফ জনতার সেবা। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরাই দেশকে উন্নত করছি।’

প্রসঙ্গ ওঠে বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমানেরও। সে সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের মানি লন্ডারিংয়ের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই।’ তারেককে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি রয়েছে। একদিন তাকে দেশে ফিরে আসতেই হবে, আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।’

সাংবাদিকরা পরে আবারও যখন  খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা, আর বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কোনো প্রক্রিয়া রয়েছে কি না—  এমন প্রশ্ন ফের করলেন, শেখ হাসিনা তখন বললেন, ‘তাকে কী বরণডালা দিয়ে আনতে হবে?’

তিনি বললেন, ‘কার সঙ্গে আলোচনা, আর যাই হোক ভদ্রতাজ্ঞান নাই এমন কারো সাথে আলোচনা হতে পারে না।’ শেখ হাসিনা বললেন, ‘মনে রাখবেন আমি জাতির পিতার কন্যা, ঠিক সে কারণেই আমি তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। ছেলের মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাড়িতে তালা বন্ধ করে রাখা হলো।’

‘আমি তো প্রধানমন্ত্রী না কি?’ —বলেন শেখ হাসিনা।

এর পরেও সাংবাদিকরা কেন তাকেই আলোচনার উদ্যোগ নিতে বলেন, এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার ওপর এত জুলুম কেন?’

তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচন করতে চাইলে আসবে। আর জ্বালাও পোড়াও করলে এবার জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে এক তরফা ঘোষণা মুসলিম উম্মাহ মেনে নেবে না।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে জাতিসংঘের নেওয়া প্রস্তাবের সরাসরি লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে ফিলিস্তিনের অধিকার রয়েছে। আর তার প্রতিষ্ঠায় মুসলিম বিশ্বকে এক হতে হবে।’

কম্বোডিয়া সফরকে সফল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উঠে এসেছে।’ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ায় কম্বোডিয়া ভূয়সী প্রশংসা করেছে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন