বিজ্ঞাপন

রাজাকারের বিতর্কিত তালিকা স্থগিত

December 18, 2019 | 5:08 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: রাজাকারের সদ্য প্রকাশিত তালিকা স্থগিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। যাচাই-বাছাই করে আগামী ২৬ মার্চ নতুন তালিকা প্রকাশের চেষ্টা থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফের সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল থেকে অভিনন্দিত করা হয়েছে, আবার তালিকায় কিছু ভুল-ত্রুটির জন্য তীব্র সমালোচনাও হয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির মধ্যে যেন কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি না হয়, সেজন্য প্রকাশিত এই তালিকাটি স্থগিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

আরও পড়ুন- এই ভুলে প্রধানমন্ত্রীও আহত হয়েছেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ তালিকা যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছেন। কী প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ে দেশব্যাপী যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে এ তালিকা প্রকাশের চেষ্টা থাকবে।

এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সারাদেশে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে। তবে সেই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ স্বাধীনতার পক্ষের অনেকের নাম থাকা নিয়ে সারাদেশে বিতর্ক তৈরি হয়। শুধু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিই নন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং সরকারের গেজেটভুক্ত বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাও স্থান পেয়েছেন রাজাকারের তালিকায়। এর মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নামও।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘কারচুপি করে তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লেখা হতে পারে’

এমনকি তালিকা থেকে নাম প্রত্যাহার করতে আবেদন করতেও বলা হয় মন্ত্রণালয় থেকে। এ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয় দেশজুড়ে।

গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা প্রকাশের পর থেকেই সারাদেশ থেকে সমালোচনা শুরু হয়। পরে ১৭ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে আ ক ম মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেন। বলেন, ‘যাদের নাম অন্যায়ভাবে এসেছে, সেজন্য দুঃখপ্রকাশ করে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেব। আর যদি এ ভুলের পরিমাণ অনেক বেশি হয়, তাহলে পুরো তালিকা প্রত্যাহার করে নতুন তালিকা প্রকাশ করব। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেব।’

আরও পড়ুন- ‘রাজাকারের তালিকা সংশোধন করে প্রকাশের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর’

বিজ্ঞাপন

পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়। ‘রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধীর তালিকা বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর ব্যাখ্যা’ শীর্ষক ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধী ১০,৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কোনো তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা যেভাবে পাওয়া গেছে, সেভাবেই প্রকাশ করা হয়েছে।’

মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, এ তালিকায় বেশকিছু নাম এসেছে, যারা রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তিকমিটি ও স্বাধীনতাবিরোধী নন, বরং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বা মুক্তিযোদ্ধা। এ ধরনের কোনো ব্যক্তির নাম তালিকায় কিভাবে এসেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রকাশিত তালিকায় ভুলভাবে যদি কারও নাম এসে থাকে, আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই শেষে তার বা তাদের নাম এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এই প্রকাশিত তালিকায় অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এদিকে, তালিকা প্রণয়নের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকে ইঙ্গিত করলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, এই তালিকা থেকে কিছু নাম বাদ দেওয়ার জন্য নোট দেওয়া হয়েছিল। সেই নোট আমলে নেওয়া হয়নি।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) কৃষক লীগের এক আলোচনা সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আমাদের চিঠি পাঠিয়েছিল, আমাদের কাছে যেসব তথ্য আছে (রাজাকারের তালিকা বিষয়ক), সেগুলো যেন পাঠানো হয়। দালাল আইনে যাদের নামে মামলা হয়েছিল, আমরা প্রাথমিকভাবে সেই তথ্য ধরে তালিকা পাঠিয়েছিলাম। সেই তালিকায় আমরা মন্তব্য করে দিয়েছি, অনেকের নামের মামলা প্রত্যাহার (উইথড্র) করা হয়েছিল। সেটা তালিকায় যাথাযথভাবে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের রাজাকারের তালিকা নিয়ে আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত হবে।

সারাবাংলা/জেএএম

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন