বিজ্ঞাপন

‘আচরণবিধি ভেঙে’ নৌকার পক্ষে প্রচারণায় উপমন্ত্রী নওফেল

December 28, 2019 | 7:47 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বিরুদ্ধে। তবে নওফেল বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সুবিধা ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে তিনি কোনো প্রচারণা করেননি।

বিজ্ঞাপন

এর আগে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী আবু সুফিয়ান। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ভিত্তি করে উপমন্ত্রী নওফেলের বিরুদ্ধেও তিনি লিখিত অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর চশমাহিলে নিজ বাসভবনে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মোছলেম উদ্দিন আহমেদের পক্ষে নির্বাচনি মতবিনিময় সভা করেন নওফেল। এসময় তিনি মোছলেমের জয় নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন এবং কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান নওফেল।

মোছলেমকে বাবা প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘সহযোদ্ধা’ উল্লেখ করে নওফেল বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য তার সহযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমেদকে জিতিয়ে আনতে হবে। এজন্য যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর আর্দশের শক্তি। এ শক্তি কখনো নিশ্চিহ্ন হবে না। আমাদের মধ্যে ছোটখাটো মতভিন্নতা থাকতে পারে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৭৩ সালের পর থেকে চট্টগ্রাম-৮ আসনটি আওয়ামী লীগের ছিল না। আশা করি আগামী উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করে এই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতাকা ওড়াতে আমরা সক্ষম হব। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এ নির্বাচনি এলাকার জনগণের অনেক ঐতিহ্য আছে। এখানকার ভূমি সন্তানরা বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। তাদের রক্তের ঋণ শোধ করার আমাদের কাজ করে যেতে হবে।’

এসময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু তাহের, শ্রম সম্পাদক আবদুল আহাদ, কার্যনির্বাহী সদস্য হাজী মো. ইয়াকুব, মহব্বত আলী খান, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরশেদুল আলম বাচ্চুসহ সংসদীয় আসনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এ বলা হয়েছে- সরকারের সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন- প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে কোনো প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।

বিজ্ঞাপন

গত ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় এলাকার মধ্যে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার এ-ব্লকের ১ নম্বর সড়কে নৌকা প্রতীকের প্রধান নির্বাচনি কার্যালয় উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপর গত ২৫ ডিসেম্বর নগরীর লালখান বাজারে মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বাসায় নির্বাচনি মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামী লীগের দক্ষিণের কয়েকজন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে একটি বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হলে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান ২৫ ডিসেম্বর মেয়রের বিরুদ্ধে এবং ২৬ ডিসেম্বর সাংসদ নদভীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

জানতে চাইলে আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের মেয়র এবং একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এখন একজন উপমন্ত্রীও ঢাকা থেকে এসে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বলে শুনেছি। এটা স্পষ্টতঃ নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। যারা আইন বানাচ্ছেন, তারাই আইন ভঙ্গ করছেন। আমি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি লিখিত অভিযোগ দেব। সরকারি দলের নেতাদের আইন অমান্যের কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যথেষ্ঠ সংশয় তৈরি হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকারে তিনি এখন শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

বিজ্ঞাপন

দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নওফেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে- আমি যে এলাকায় নির্বাচন হচ্ছে সেখানে যাইনি। নিজের বাসায় বসে পতাকা এবং কোনো ধরনের প্রটৌকল ব্যবহার না করে ওই সংসদীয় এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছি। রাষ্ট্রীয় প্রটৌকল ব্যবহার না করে এই ধরনের সভা করার আইনসম্মত অধিকার আমার আছে। আমি আইন জেনেই বলছি, এ অধিকার আমার আছে। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে দাঁড়ানোর অধিকার আমার আছে, যদি না আমি পুলিশ ও পতাকা ব্যবহার না করি।’

তবে উপ-নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, মন্ত্রী-উপমন্ত্রী অথবা সংসদ সদস্য পদমর্যাদার কেউ ঘরোয়াভাবেও কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।’

গত ৭ নভেম্বর তিনবারের সাংসদ জাসদ নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদল মারা যাবার পর চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৩ জানুয়ারি ওই আসনে উপ-নির্বাচন হবে। উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং ধানের শীষ প্রতীকে একই জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন