বিজ্ঞাপন

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়াতে ২২০ কোটি টাকার প্রকল্প

December 30, 2019 | 5:14 pm

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে সরকার। এজন্য ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা জোরদারকরণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিরাপদ প্রাণীজ আমিষের উৎপাদনে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভেটেরিনারি ও সম্প্রসারণ সেবা ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মদক্ষতার উন্নয়ন হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটিতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের আগস্টে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। এটি অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, পুষ্টি নিরাপত্তা এবং দারিদ্র নিরসনে প্রাণিসম্পদের অবদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ একটি সম্ভাবনাময় ও লাভজনক শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সঙ্গে উপযুক্ত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ প্রাণিসম্পদ খাতকে আজ কর্মসংস্থান ও গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ারে পরিণত করেছে। দেশের বেকার জনগোষ্ঠি এবং নারীরা প্রাণিসম্পদ পালনে সম্পৃক্ত হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে।

উৎপাদনশীলতা, আয়বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষিখাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষিখাতের অবদান ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং মোট শ্রম শক্তির প্রায় ৫০ শতাংশ এ খাতে নিয়োজিত। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা কৃষির উপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞাপন

প্রাণিসম্পদ কৃষিখাতের একটি অন্যতম উপখাত। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান এক দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং সার্বিক কৃষিখাতে এ অবদান ১৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র নিরসনে প্রাণিসম্পদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছাড়াও দেশের মোট জনগোষ্ঠির অত্যাবশ্যকীয় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে এবং খাদ্য নিরাপত্তায় প্রাণিসম্পদ উপখাতের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের জনগণের পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য প্রাণিজ উৎস হতে দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ১৫০ লাখ ২৯ হাজার টন দুধ, ৭২ লাখ ১৪ হাজার টন মাংস এবং ১৭ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার ডিমের চাহিদার বিপরীতে যথাক্রমে ৯৪ লাখ ৬ হাজার টন দুধ, ৭২ লাখ ৬০ হাজার টন মাংস এবং ১ হাজার ৫৫২ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে মাংসের উৎপাদন মোট চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং দুধ ও ডিমের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ কৃষি পরিবার গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী পালন করে থাকে। দেশের জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণ ছাড়াও ভূমি কর্ষণ, গৃহস্থালী জ্বালানীর ব্যবহার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে প্রাণিসম্পদ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ফরেইন ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস (এফটিএস) অনুযায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ চামড়াজাত পণ্য থেকে ২০ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার টাকা, মাংস ও মাংসজাত উপখাত হতে ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, প্রক্রিয়াজাত তরল দুধ ও দুধজাত পণ্য ১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং প্রাণীজ উপখাত হতে ১ কোটি ২৬ লাখ ৮১ হাজার টাকাসহ মোট ২১ কোটি ৭৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।

বিজ্ঞাপন

খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায় প্রাণিসম্পদের গুরুত্ব অব্যাহতভাবে বাড়ছে। এ জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কাজের পরিধিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কাজের পরিধি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও সে অনুপাতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সাংগঠনিক জনবলের সংখ্যা, সদর দফতর, বিভাগীয় দফতর, জেল ও উপজেলা পর্যায়ে অবকাঠামোর এবং সেবা সেবা দেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি।

ঢাকাস্থ কেন্দ্রীয় প্রাণিসম্পদ ঔষাধাগার থেকে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ওষুধ, রোগ নির্নয় উপকরণ ও যন্ত্রপাতি নিজস্ব ট্রাকে করে সরবরাহ করতে হয়। কিন্তু প্রাণিসম্পদ ঔষধাগারের অফিস ভবন এবং ওষুধ ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাগারটি দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় এবং পরিবহণ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় জরুরি সরবরাহ সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সাভার ডেইরি ফার্ম সংলগ্ন অধিদফতরের নিজস্ব জমিতে নতুন অফিস ভবন ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টোর নির্মাণ এবং কুল চেইনসমৃদ্ধ যানবাহন সুবিধার ব্যবস্থা করা গেলে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম আরও গতিশীল করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে সরবরাহ করে ওষুধগুলো প্রতিটি জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে কিন্তু দেশের মাত্র ১৩টি জেলায় ওষুধগুলো ও টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু সেখানে যথাযথ তাপানুকূল ব্যবস্থা বিদ্যমান নেই। তাই দেশের সকল জেলার জন্য একটি করে মোট ৬৪টি কোল্ড রুমের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দাফতরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, প্রাণিসম্পদ সেবার গুণগতমান বৃদ্ধি সময় সাশ্রয়, জনবল বৃদ্ধি এবং কর্মপরিবেশের উন্নয়ন কল্পে পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নয়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এই সমস্যাগুলো সমাধান করে প্রাণিসম্পদ সেবার মান উন্নয়নের জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সদর দফতরে একটি ৯তলা ভবন, একটি বিভাগীয় অফিস, ৫৯টি জেলা অফিসের ঊর্ধমূখী সম্প্রসারণ ও কোল্ড রুম, একটি কেন্দ্রীয় আধুনিক স্টোর নির্মাণ, ফ্রিজ ও কুল ভ্যানসহ প্রয়োজনীয় যানবাহন সংগ্রহ, প্রশিক্ষণের সংস্থান ও সচেতনমূলক কর্মকাণ্ডের সংস্থান রেখে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৯১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সক্ষমতা জোরদারকরণ প্রকল্পটি পরিকল্পনাকমিশনে পাঠানো হযেছে। প্রকল্পটির ওপর চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ও চলতি বছরের ২৯ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সুপারিশে মোট ২২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা করা হয়।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে যার ফলশ্রুতিতে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীগণের কর্মপরিবেশ ও কর্মদক্ষতার মানের উন্নয়ন হবে যা প্রাণিজ আমিষের সরবরাহ বৃদ্ধি করে পুষ্টি নিশ্চয়তা দেওয়া ছাড়াও বেকার যুবকদের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। ফলে দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/জেজে/এমআই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন