বিজ্ঞাপন

ম্যাগনেটিক কয়েনের লোভে কোটি টাকা হারিয়েছেন সাবেক এমপি

February 10, 2020 | 4:42 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ম্যাগনেটিক রাইস কয়েনের লোভে পড়ে এক কোটি ২০ লাখ টাকা হারিয়েছেন সাবেক এক সংসদ সদস্য (এমপি)। তার নাম প্রকৌশলী এম তালহা। তিনি জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ছিলেন। কয়েনের লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় এমন একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (অর্গানাইসড ক্রাইম ইউনিটের ইকোনমিক ক্রাইম) মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

গ্রেফতার তিনজন হলেন- জসিম উদ্দিন (৪২), সুজন মিয়া (৩২) ও রিপন (৩৬)। জসিম ও রিপনের বাড়ি বরগুনার বেতাগী উপজেলায়। আর সুজনের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী এলাকায়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের এই তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়।’

বিজ্ঞাপন

বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বনানী থানায় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য এম তালহা একটি মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। এরপর তদন্তের এক পর্যায়ে এই তিন প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়।’

সাবেক এমপি প্রকৌশলী এম তালহার বরাত দিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতারক চক্রের সদস্যরা এমপিকে জানায়, তাদের কাছে বহু মূল্যবান ম্যাগনেটিক রাইস কয়েন আছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ আমলের এই ম্যাগনেটিক কয়েনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে অন্তর্জাতিক বাজারে। আমেরিকার স্পেস রিসার্চ সেন্টার নাসার (ন্যাশনাল অ্যারেনটিক্স অ্যান্ড স্পেস) কাছে সেটি কোটি টাকায় বিক্রি করা যাবে। কৌতুহলী হয়ে কথিত কয়েনটি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তালহা। এরপর ম্যাগনেটিক রাইস কয়েন কেনা ও বেচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত হন তিনি। প্রতারকরা শিল্পপতি তালহাকে জানায়, তাদের পূর্ব পরিচিত ইন্ডিয়ান খ্যাতনামা কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তিনি কয়েনগুলো কিনতে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। প্রতারক চক্রের সদস্যরা পরে ওই সংসদ সদস্যকে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে চক্রের আরেক সদস্য আমিনুল ইসলাম নিজেকে ইউরেনিয়াম এনার্জি লিমিটেডের সিনিয়র টেকনিশিয়ান হিসেবে পরিচয় দেয়। এ সময় তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি তার মাধ্যমে ম্যাগনেটিক কয়েনের ব্যবসা করেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিভিন্ন আলোচনায় সংসদ সদস্য তাদের কথায় আকৃষ্ট হয়ে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখান। এরপর প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্য বিভিন্ন সময়ে তার বাসায় আসেন। নানান ধরনের লোভনীয় কথা বলে তাদের সাথে ম্যাগনেটিক কয়েন ব্যাবসায় বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর কথিত কয়েনের সাজানো মালিকের কাছ থেকে কয়েনের ইউনিট ক্রয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে রিপোর্ট সংগ্রহ, প্যাকিং প্রক্রিয়া, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ব্যায়ভার বহন, বিক্রয়ে মধ্যস্থতাকারী এজেন্টের পাওনা অগ্রিম দেওয়াসহ বিভিন্ন কথা বলে সংসদ সদস্যের কাছ থেকে নগদ ৯০ লাখ ৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।’

বিজ্ঞাপন

‘দীর্ঘদিন প্রতারক চক্রটি সংসদ সদস্যকে রাইস কয়েন দিতে না পারায় টাকা ফেরত চাইলে আবারও টাকা দাবি করেন তারা। এরপর গত সেপ্টেম্বরে বনানী থানায় একটি মামলা করেন প্রকৌশলী তালহা। মামলার তদন্তকালে আবার ওই চক্রটি সাবেক এই এমপির কাছে টাকা দাবি করেন। এরপর গতকাল চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রকৌশলী তালহাও একজন সাধারণ মানুষের মতোই। তিনিও ব্যবসা করেন। অন্য আরেকজনের মতো তিনিও স্বাভাবিকভাবে লোভে পড়েছেন। ফলে তার কোটি টাকা চলে গেছে। আর প্রতারক চক্রের সদস্যরাও এমনভাবে তাকে বুঝিয়েছে যে, তিনিও টাকা দিতে এক প্রকার বাধ্য হয়েছেন।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন