বিজ্ঞাপন

বি‌ডিআর বিদ্রোহ, ইতিহাসের কালো দিন

February 24, 2018 | 10:57 pm

শামীম রিজভী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ফেব্রুয়ারির ২৫ ও ২৬ তারিখ, বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো দিন। ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে (বর্তমান বিজিবি) ঘটে মর্মান্তিক ও নৃশংস এক ঘটনা।

তখন সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। দরবার হলে চলমান বার্ষিক (দরবার) নির্ধারিত সভায় একদল বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক তাদের মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করেন। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে মহাপারচালকসহ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা ও তাদের পরিবারকে জিম্মি করে। পিলখানার চারটি মূল ফটকই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশপাশের এলাকায় গুলি ছুড়তে থাকে। জন্ম নেয় ইতিহাসের এক বীভৎস ঘটনার।

টানা ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান ঘটলেও ততক্ষণে বিদ্রোহী সৈনিকরা কেড়ে নেন ৫৭ জন দক্ষ সেনা কর্মকর্তার জীবন। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। ঘটনার পর পিলখানা থেকে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। যেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় হতবাক হয়ে যায় সারাদেশের মানুষ। মাত্র ৩৬ ঘণ্টার এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, দুইজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, নয় জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পর বা‌হিনী‌টির সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে। শুরু হয় বিডিআরকে পুনর্গঠনের কাজ। বিডিআর-এর নাম, পোশাক, লোগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বিষয় পুনর্গঠন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নামে নতুন নামকরণ করা হয়। সেই সঙ্গে পরিবর্তন করা হয় বিডিআর-এর পুরোনো আইন। নতুন আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর কারাদণ্ড ‌থে‌কে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করা হয়।

পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনায় ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক নবজ্যোতি খিসা। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর হয়। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআর-এর নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলার বিচার শেষে সারাদেশে ৫ হাজার ৯২৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়। পিলখানা হত্যা মামলার ২৩৩তম কার্যদিবসে ৬৫৪ জন সাক্ষী আদালতে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার ৪ বছর ৮ মাস পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লালবাগে অবস্থিত আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে এ হত্যা মামলার রায় দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৭১ জনকে খালাস দেওয়া হয়। ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২৬৬ জনকে।

বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টু এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীও পিলখানা হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আসামিদের মধ্যে ছয় জন ডিএডি রয়েছেন। ওই দিন ৮২৩ আসামির উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সরকারিভাবে এ দিনটিকে ‘পিলখানা হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এ দিবসটির স্মরণে দুই দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি পালন করবে বিজিবি। পিলখানায় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হ‌বে।

বিজ্ঞাপন

কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ মোহসিন রেজা সারাবাংলা‌কে জানান, ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতর, পিলখানায় বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডে শহীদের স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারি শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানাসহ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সকল অঞ্চল, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় বাদ ফজর খতমে কোরআন-এর আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিজিবির সকল মসজিদ ও বিওপি পর্যায়ের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

তি‌নি আরও জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯ টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিগণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সম্মিলিতভাবে তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও বিজিবি মহাপরিচালক।

এ ছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি বি‌কে‌লে পিলখানার বীর উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদের রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশ্যে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, বিজিবি মহাপরিচালক, শহীদের স্বজন, পিলখানায় কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও ‌বি‌ভিন্ন পদবীর সৈনিক উপস্থিত থাকবেন।

বর্ডার গার্ড বাংলা‌দে‌শের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডি‌জি) মেজর জেনারেল আবুল হোসেন ব‌লেন, পৃথিবীতে আমাদের নি‌য়ে এখন গর্ব করা হয়, ও তুমি বাংলাদেশী! আগে বলতো তুমি বাংলাদেশী না ইন্ডিয়ান? বিজিবির ২২২ বছরের ইতিহাসে চড়াই উৎরায় পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে। ২০০৯ সালের পর এ বাহিনীকে পূনর্গঠন করে বি‌জি‌বি করা হয়েছে। ২০১০ সালে আইন পূর্নগঠন করা হ‌য়ে‌ছে। বর্ডারে কোনো সমস্যা নেই, ডিসপিউট নেই। ‌বি‌জি‌বি এখন অ‌নেক সুশৃঙ্খল একটি বা‌হিনী। বি‌জি‌বি সদস্য‌দের কল্যা‌ণে অ‌নেক পদ‌ক্ষেপও গ্রহণ করা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে মন্তব্য ক‌রেন তি‌নি। ‌

সারাবাংলা/এসআর/এমআই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন