বিজ্ঞাপন

‘বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে’

February 20, 2020 | 8:59 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেছেন, ‘মিয়ানমারে সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। পানি সমস্যার সমাধান হয় না, সীমান্তে হত্যার বিচার হয় না, একটা কথা বলতে পারে না। আমরা এখান থেকে উঠে দাঁড়াতে চাই। অতীতে উঠে দাঁড়িয়েছি। এই সমস্যা শুধুমাত্র বিএনপির সমস্যা নয়। গোটা জাতির সমস্যা। সমগ্র জাতি আজকে পরাধীন হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের সবাইকে উঠে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। সোচ্চার হতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে, সমস্ত অর্জনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ড বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে চেতনার ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতাযুদ্ধ হয়েছিল, সেই চেতনা ধ্বংস করা হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যান্ত সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা, একনায়কতন্ত্র ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন সময় তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করার জন্য সংগ্রাম করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তরুণ সমাজ, ছাত্রসমাজ বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্যে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য ভাষা আন্দোলনের ৬৮ বছর পরে গণতন্ত্রের জন্য চিৎকার করতে হয়।’

‘মনে হয় এই ৬৮ বছর সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়নি, আমরা এই ৬৮ বছরে সংগ্রাম করতে করতে আমরা একটা রাষ্ট্র পেয়েছি, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। সেজন্য আমি বিশ্বাস করি, এদেশের মানুষ যারা লড়াই করে ভাষা প্রতিষ্ঠা করেছে, একটা স্বাধীন পতাকা নিয়ে এসেছে, তারা পরাজিত হবে বলে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি আজকে গণতান্ত্রিক যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সে আন্দোলন দেশনেত্রীর মুক্তির মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে,’— বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটাই ত্যাগের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছে। এখনো যে তিনি কারাগারে আছেন, সেটাও গণতন্ত্রের জন্যে। তাকে আজ অসুস্থ অবস্থায় অন্ধকার কারাগারে পড়ে থাকতে হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার পরিকল্পিতভাবে সকল অর্জন নস্যাৎ করে দিয়ে একটি অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আজকে অর্থনীতিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। দুর্নীতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, পত্রিকা খুললেই দেখি বেসিক ব্যাংকের এমডি ১১০ কোটি টাকা দিয়ে বাড়ি কিনেছেন। অথচ আজ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিচার হয়, সাজা হয় ২ কোটি টাকার একটা মিথ্যা মামলার জন্য। ১১০ কোটি টাকায় বাড়ি বানিয়েছেন, শত শত কোটি টাকা তিনি লুটপাট করে নিয়েছেন, দুদক তাকে দেখতে পায় না। তাকে এখন পর্যন্ত একটি নোটিশও করা হয়নি। এই হচ্ছে এই দেশের অবস্থা।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে না। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। আর গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন,  ‘বেগম জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার একসূত্রে গাঁথা। আমরা জামিনের জন্য আবেদন করেছি, জজ সাহেব বললেন এটা তো আমরা আগেই দেখেছি, আবার কেন এনেছেন? আমরা বললাম, গত দুই মাসে উনার কত অবনতি হয়েছে সেটা আপনাদের জানা দরকার। এখন তার অবস্থা অনেক খারাপ। এর আগে জামিন দেন নাই।  আমরা এখন নতুন গ্রাউন্ড নিয়ে এসেছি। আমরা শুনানি করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি এখনো আশা করি, সুপ্রিম কোর্ট নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে। আর যদি না দেন, তাহলে আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না। তখন আমাদের বাধ্য করা হবে একটা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে।’

বিজ্ঞাপন

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ব‌লে‌ন, ‘বাংলাভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে— এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। কিন্তু দেশনেত্রীকে জেলে রেখে, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে জেলে রেখে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে, আইনের শাসনকে হত্যা করে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হত্যা করে, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশকে কোনো দিনও আন্তর্জাতিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।’

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সাধারাণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন, মহিলা দলের যুগ্ন সাধারাণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীসহ অন্যরা।

সারাবাংলা/এজেডকে/এজেড/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন