বিজ্ঞাপন

নিজ ভুবনেই মূল্যায়ন হয়নি শওকত আলীর

February 25, 2018 | 8:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ছিলেন নিভৃতচারী। আত্মপ্রকাশে মগ্ন ছিলেন না কখনোই। নেপথ্যে থেকে সাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবকের কাজ করে গেছেন আমৃত্যু। তবে যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি তার। তাকে নিয়ে হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা। সমকালীনদের মধ্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হাসান আজিজুল হককে নিয়ে কিছু কাজ হলেও তাকে নিয়ে তেমন কিছুই হয়নি।

এমনকি মৃত্যুর পরও তাকে নিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে তেমন কোনো আলোচনা, লেখালেখি চোখে পড়েনি। মৃত্যুর এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের মূল ধারার লেখকরা তার জন্য কোনো আয়োজন করেনি। নিজ ভুবনেই মূল্যায়ন হয়নি তার।

বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব শওকত আলীর স্মরণ সভায় দেওয়া বক্তব্যে কথাগুলো বলেছেন বক্তারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে রোববার সন্ধ্যায় এ স্মরণসভা আয়োজন করে দিনাজপুর সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা।

বিজ্ঞাপন

মর্তুজা হায়দার লিটনের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন সমাজ কল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, কবি মুজতবা আহমেদ মুরশেদ, গবেষক শফিক মাহতাব, সাংবাদিক আশরাফুল কবির আসিফ, শওকত আলীর পুত্রবধূ ফারজানা কল্লোল প্রমুখ।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘শওকত আলীর মৃত্যুতে আমাদের যারা বিদগ্ধজন আছেন তাদের খুব একটা চিত্তবিকার ঘটেছে বলে আমার মনে হয়নি। কারণ, এত বড় একজন লেখকের মৃত্যু হলো এবং তিনি চলে  গেলেন আমাদের মাঝ থেকে নিঃশব্দে— এর মধ্যে বই মেলা হলো, বহু সাহিত্য আলোচনা হলো কিন্তু শওকত আলীকে নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার মনে হয় না।’

‘আমাদের দেশে সাহিত্য কর্মের মধ্যে যাদের অসাধারণ বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে উপন্যাসের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সামনের সারির ব্যক্তি তিনি (শওকত আলী)। কেবল তাই নয়, সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তিনি তার বিভিন্ন সাহিত্যের মধ্যে ‘সময়’কে নিয়ে এসেছেন। যেমন নিয়ে এসেছেন তার প্রথম দিকের কাহিনী— যখন ভাষা আন্দোলনের পরবর্তীকালের সময়টা। বিশেষ করে ষাটের দশকে বাংলাদেশের সমাজ মানসটা নতুন করে বিকশিত হয়েছে’ —বলেন রাশেদ খান মেনন।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমার সব সময় মনে হয়েছে, ষাটের দশকের বিশেষ সময়টাতে আমাদের সাহিত্যে তেমন কোনো কাজ হয়নি শুধুমাত্র আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ও শওকত আলী ছাড়া। যারা ষাটের দশকের উত্তাল দিনগুলো দেখতে চান তারা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কিংবা শওকত আলীর সৃষ্টির মধ্যে পাবেন। সুতরাং আমি বলব, শওকত আলী ব্যক্তি জীবনে খুব উচ্চকিত না হলেও সাহিত্য জীবনে তিনি খুবই উচ্চকিত এবং শক্তিধর একজন ব্যক্তি ছিলেন। তাকে উপেক্ষা করার মতো কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’

মেনন বলেন, ‘কিন্তু এটা সত্য, আমি খেয়াল করেছি, তার এই সাহিত্যকর্ম নিয়ে কথা-বার্তা খুব বেশি হয়েছে বলে আমি মনে করি না। আমি অনুভব করতে পারি, কিছুটা হলেও তার মনের মধ্যে দুঃখবোধ ছিল, যা তিনি কোনো দিনও প্রকাশ করেননি।’

তিনি বলেন, “আমি প্রথমে মুদ্ধ হয়েছিলাম ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ পড়ে। এই উপন্যাস যারাই পড়েছেন তারাই জানবেন, এই উপন্যাসে সেই যুগকে তুলে নিয়ে আসছেন এবং তার মধ্য দিয়ে সেই সময়কার প্রান্তিক মানুষদের লড়াই, সংগ্রাম, অভিব্যক্তি বেরিয়ে আসছিল এই উপন্যাসে। সব চেয়ে বড় কথা, এই উপন্যাসের ভাষা শৈলী। এবং পরবর্তীকালেও তিনি যে উপন্যাসগুলো লিখেছেন, সেখানেও তার অনন্য ভাষা শৈলী আমরা লক্ষ্য করেছি। সুতরাং ব্যক্তি জীবনে তিনি যতই নিভৃতচারী হোন না কেন, সাহিত্যে ছিল তার সরব উপস্থিতি।’

নাট্যকার মামুনুর রশীদ বলেন, ‘মূলধারার লেখক, প্রকাশক এবং যারা এখানে শিল্প-সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত তারা যেভাবে শওকত আলীকে আজীবন মূল্যায়নে অবহেলা করেছেন, তেমনি তার মৃত্যুর পরও আমি একটা স্পষ্ট অবহেলা লক্ষ্য করেছি। এর কারণ, অনেক থাকতে পারে। কিন্তু তার যে সাহিত্য শক্তি, সেই শক্তিতে তিনি যথাযথ মূল্যায়িত হননি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমি প্রবলভাবে বিশ্বাস করি তার লেখনির যে শক্তি, সেই শক্তি— বিশেষ করে প্রদোষে প্রাকৃতজনের মতো উপন্যাস সারা বাংলা সাহিত্যে লেখা হয়নি। একটি উপন্যাসের জন্য একটি ভাষা নির্মাণ করা এবং সেই ভাষাটির মধ্য দিয়েই আমরা একটি কালকে, একটা যুগকে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি। এটা কিন্তু একটা বিরাট ব্যাপার।’

সারাবাংলা/এজেড/আইজেকে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন