বিজ্ঞাপন

ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেল পরিবারটি

February 27, 2018 | 12:18 am

জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিচতলায় অবস্থিত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সার্ভিস। তার কিছুটা সামনেই দুইটি টুলে বসে রয়েছে জিন্স, নীল-সাদা রঙা ফ্রক পরা এক কিশোরী। পাশের টুলে লাল-কালো রঙের ফ্রক পরা একটি শিশু। পাশে বোরকা পরে দুই নারী। তাদের মধ্যে একজন ৫শ’ টাকার একটি নোট নিয়ে সবার কাছে খুচরা টাকা চাইছেন।

এ প্রতিবেদক এগিয়ে যেতেই নোটটি এগিয়ে ধরে বলেন, ‘আপা ভাংতি দেন- ডাক্তাররা বলছেন সিটি স্ক্যান করাতে, কিন্তু টাকাতো খুচরা করতে পারতেছি না। কেমনে কী করুম।’

কোথায় থেকে আসছেন জানতে চাইতেই বলেন, ‘বাস অ্যাক্সিডেন্ট থেকে বাঁচছি আপা-আল্লা নিজ হাতে বাঁচাইছে আমাগো, কিন্তু আমার স্বামীরতো গুরুতর অবস্থা, তার সিটিস্ক্যান করতে হইবো, কিন্তু কই যামু, খুচরা টাকা কই পামু-কেউতো দিতে পারতেছে না।’

বিজ্ঞাপন

এই বাস অ্যাক্সিডেন্টের রোগীদের কোনো খরচ লাগবে না-সব খরচ হাসপাতালের। কোনো পরীক্ষা করাতে টাকা লাগবে না। সিটি স্ক্যানের ওখানে গিয়ে বলেন-আপনারা বাস অ্যাক্সিডেন্টের রোগী আপনারা- তাইলেই হবে। কথা শেষ না হতেই তিনি আরেকজনকে নিয়ে ছুটলেন সিটিস্ক্যানের ওখানে।

তখন কথা বাকি তিনজনের সঙ্গে। ২৩ বছরের বর্ষা সারাবাংলাকে বলেন, তিনি গর্ভবতী। শ্বশুড়বাড়িতে ছিলেন এতদিন। মামা, মামী, মামাতো বোন আর মামার ভাগ্নি তাকে আনতে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে মোগরাপাড়া এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লরিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন, পরে মারা যান আরও পাঁচজন। এতে আহত হন কমপক্ষে ২৫ জন। তাদের মধ্যে ১৮ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বাস অ্যাক্সিডেন্টের ট্রমা থেকে তখনও মুক্ত হননি বর্ষা। থেমে থেমে কথা বলছিলেন। বলেন, আমরা পেছনে ছিলাম, মামা ছিল সামনে। পেছনে ছিলাম বলেই আমরা বেঁচে গেছি, মামার অবস্থা খারাপ। চিকিৎসকরা তাকে সিটিস্ক্যান করতে বলছেন। পাশে থাকা মামাতো বোন সুরাইয়াকে দেখিয়ে বলেন, দেখেন ওর জামার হাতার কতো জায়গায় ছিঁড়ে গেছে।

বর্ষা বলেন, বাসটা খুব জোড়ে চালাচ্ছিল ড্রাইভার। তাকে সবাই নিষেধ করছে, কিন্তু সে শোনে নাই। এক সময় দেখলাম, সব থেমে গেছে-আর কিছু দেখি নাই, মনেও নাই। কেমন করে যেন এখানে নিয়ে আসছে সবাই।

‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাঁচপুর থেকে বাসে উঠছি। মুগড়াপাড়া এলাকায় আসতেই এই অ্যাক্সিডেন্ট হয়।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে, দুর্ঘটনার পরপরই আহতদের নিয়ে আসা হয় ঢামেক হাসপাতালে। সেখানে জরুরি বিভাগের সামনে কখনও দাঁড়িয়ে কখনো বা বসে চিৎকার করছিলেন কাজল রানি সাহা। তার পুরো শরীরে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। সারাবাংলাকে বলেন, ‘কতোবার সবাই মিল্যা ড্রাইভাররে আস্তে চালাইতে কইসে। কিন্তু সে কারও কথা শোনে নাই। আমার শুভ মইরা গেল- আমি বাঁইচা রইলাম। পোলাডারে দেখার পর আর মাথা ঠিক নাই।’

‘শুভরে তুই কেন গেলি বাপ-আমি কেন গেলাম না’ বুক চাপড়াচ্ছিলেন কাজল রানি সাহা।

সারাবাংলা/জেএ/এটি

নারায়ণগঞ্জে বাস দুর্ঘটনায় চারজন নিহত
নারায়ণগঞ্জে বাস দুর্ঘটনা, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯
নারায়ণগঞ্জে বাস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০
‘দুর্ঘটনায় আহতদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন