বিজ্ঞাপন

যানজট কমানোর নামে রাস্তায় গাড়ির রাজত্ব, পকেট ভরাচ্ছে ডিএসসিসি

March 11, 2020 | 11:05 am

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাজধানীর ৬টি সড়কে অনস্ট্রিট পার্কিং ইজারা দিয়ে বছরে প্রায় ২৭ লাখ টাকা আয় করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। যানজট নিরসন করা এর মূল উদ্দেশ্য হলেও। উল্টো তা বেড়ে গিয়ে নগরবাসী পড়ছেন সীমাহীন দূর্ভোগে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর মতিঝিলের এ্যালিকো সড়ক, আইডিয়াল কলেজ, গাউছিয়া মার্কেট, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল সড়ক, বাইতুল মোকারমের স্বর্ণ মার্কেট ও নয়াপল্টনের পলওয়েল মার্কেটের সামনের সড়কগুলো অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের জন্য এ বছর ইজারা দেওয়া হয়েছে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ টাকা।

নগরবাসী বলছেন, যানজট কমাতে যে পার্কিং ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটিই এখন যানজট সৃষ্টির জন্য দায়ী। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আগে পার্কিং ব্যবস্থা না থাকলেও গাড়ি ব্যবহারকারীরা রাস্তার পাশে গাড়ি রাখতে ভয় পেতেন। কিন্তু সেই একই জায়গায় এখন টাকা দিলেই গাড়ি রাখা যায়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে যে জায়গায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে সে জায়গাটা তো বড় করা হয়নি। জায়গাটি আগের মতই আছে। এতে বরং এখন গাড়ি ব্যবহারকারীরা ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় গাড়ি রেখে যাচ্ছে। ফলে যানজটে তৈরি হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গাউছিয়া মার্কেটের সামনে দেখা যায়, সড়কের দক্ষিণ পাশে পার্কিং জোন হিসেবে সাদা রং দিয়ে মার্কিং করা হয়েছে। কিন্তু ওই মার্কিং করা জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন হকারদেরও বসতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, অনেকেই টাকা দিয়ে পার্কিং না করে পার্কিং জোনের বাইরে সড়কের অন্য পাশেও গাড়ি রাখে। এতে সড়কের দুই দিকেই সংকুচিত হয়ে যাওয়া এবং হকারদের ভিড়ে যানজটের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুন।

রিফাত হাসান। একটি বেসরকারি কোম্পানীতে মার্কেটিংয়ের চাকরি করেন। তাই চাকরির কারণে মাঝে মাঝেই তাকে গাউছিয়া মার্কেটের সড়কে আসতে হয়। তাই, টাকা দেওয়া থেকে বাঁচতে গাড়ি রাখেন পার্কিং জোনের বাইরে।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এই যে পার্কিং ব্যবস্থা চালু করে টাকা নিচ্ছে, সেই একই জায়গাই তো আগে টাকা না দিয়ে গাড়ি রাখতাম। আবার এখনও একই জায়গা। নতুন কোনো সুযোগসুবিধা নেই, কিংবা রাস্তাও বাড়ায়নি, তাহলে টাকা নেওয়ার মানে কি? তাই আমি ওই পার্কিংয়ে গাড়ি রাখি না।

বিজ্ঞাপন

নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য ইকবাল হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, ঢাকার সড়কে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা একটা অসভ্য কাজ হয়েছে। অসভ্য কাজ এ কারণে বলছি, যেসব বিপনি বিতান বা ভবন মালিক পার্কিংয়ের জায়গা রাখলো না বা নগরজুড়ে নিয়ন্ত্রনহীনভাবে প্রাইভেটকারের দৌড়াত্ম বেড়ে যাওয়া, বাড়তি গণপরিবহনের ব্যবস্থা না করা, এসব কিছুকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য এই অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা।

‘অনস্ট্রিট পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার মানে হল, আরও গাড়ি কিনুন, আপনার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকলেও চলবে, রাস্তার ওপরে পার্কিং করা যাবে। কিন্তু এভাবে হলে সাধারণ মানুষ চলবে কোথায়? সবার তো গাড়ি নাই। ১০ শতাংশ মানুষের বেশি যেখানে গাড়ি নেই, সেখানে ৯০ শতাংশ মানুষের কথা ভাবতে হবে না? সুতরাং এটা একটা অসভ্য মানসিকতা। তাই এ পুরো প্রক্রিয়াটাই ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করি।’ যোগ করেন ইকবাল হাবিব।

ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে তিনি আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের কাজ কি টাকা আয় করা? নাকি জনগণের সেবা দেওয়া? যদি সেবা দেওয়াই তাদের কাজ হয় তাহলে টাকা আয়ের মানসিকতায় যাচ্ছে কেন? যারা এমন মানসিকতার তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করতে চাই। আমি নিশ্চিত, যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত তারা কেউ এসব সড়ক দিয়ে গাড়ি ছাড়া হাঁটেন না। তাই তারা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জনগনের কথা ভুলে গিয়ে। একবারও নগর পরিকল্পনাবিদদের মতামত নেওয়ার দরকার মনে করেন নি।

একই কথা বললেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামছুল হক। তিনি বলেন, সড়কে জায়গার সংকট আর মানুষের চলমান যে চাপ তাতে কোনোভাবেই অনস্ট্রিট পার্কিং করার কথা কল্পনাও করা যায় না। এটি শুধুমাত্র টাকা আয়ের উৎস বের করা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে শহরে যে অবস্থা তাতে অনস্ট্রিট পার্কিং নয়, প্রয়োজন ছিল অফস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন, রাজউকসহ যারা বহুতল ভবনে পার্কিং নিশ্চিতের সিস্টেমের সঙ্গে জড়িত তারা অভিভাবক হিসেবে নিজেরাই নিজেদের বিল্ডিংয়ে পার্কিংয়ের নিয়মগুলো মানেন না। ডিএসসিসির যতগুলো মার্কেট আছে প্রত্যেকটিরই কিন্তু বেজমেন্ট রয়েছে। কিন্তু সে জায়গাগুলোও কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। সুতরাং অভিভাবকের জায়গায় যদি এমন অবৈধ কাজ হয়, তাহলে তারা যদি অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় তা কখনও সফল হবে না। ব্যর্থই হবে। তাই আগে এসব অভিভাবকদেরই কারেকশন করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন সারাবাংলাকে বলেন, অনস্ট্রিট পার্কিং গুলোর মাধ্যমে সড়কে যানবাহনের জট এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। তবে এটি যদি জনসাধারণের সমস্যার কারণ হয় তাহলে সেটিও বিবেচনা করা হবে। অনস্ট্রিট পার্কিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। তারা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে পরামর্শ করে ডিএমপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

তবে এ বিষয় জানতে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ের কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

আরও পড়ুন –
ডিএসসিসি মার্কেটে পার্কিং স্পেসে দোকান, খালি নেই কোনো জায়গা
ডিএসসিসির ‘অনস্ট্রিট পার্কিং’ চলছে ইজারাদারদের নিয়মে

সারাবাংলা/এসএইচ/জেএএম

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন