বিজ্ঞাপন

কাপ্তাই হ্রদে ‘ঠান্ডা’য় কমেছে মাছ আহরণ

March 14, 2020 | 7:47 am

প্রান্ত রনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রাঙ্গামাটি: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ। দেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়ের মধ্যেও এটিই সবচেয়ে বড়। তবে চলতি মৌসুমের (২০১৯-২০২০) প্রথম তিন মাসের তুলনায় পরের চার মাসে এই হ্রদ থেকে মাছের আহরণ কমেছে। ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে শুরু হওয়া মৌসুমের প্রথম তিন মাসে যেখানে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭৭১ টন, সেখানে পরের চার মাসে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৩৪৭ টন। কেবল মাছ আহরণ নয়, মাছ অবতরণের পরিমাণও একই সময়ে কমেছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই হ্রদে মে থেকে জুলাই পর্যন্ত তিন মাস মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। ফলে আগস্টে মাছ ধরা শুরু হলে আহরণের পরিমাণ বেশি থাকে। অন্যদিকে শীত মৌসুমে ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে মাছ ধরার জন্যে জেলেরা সময় ব্যয় করেন কম। তার ওপর এ বছর রাঙ্গামাটিতে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় জেলেরা খুব কমই নামতে পেরেছেন হ্রদে। ফলে মাছের আহরণ অন্য বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমেছে।

মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হ্রদের আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর, যা বাংলাদেশের সব পুকুরের প্রায় ৩২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। ১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এ হ্রদ তৈরি করা হলেও এটি রাঙ্গামাটিতে মৎস্য উৎপাদন ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে আসছে। অন্যদিকে মৎস্য উৎপাদনের মধ্য দিয়ে রাজস্ব আদায়েও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এই হ্রদটি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশ বিস্তার, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতকরাসহ হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছরের পহেলা মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। বছরের আগস্ট থেকে শুরু হয় নতুন মৌসুম, যা চলে পরবর্তী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৯ মাস ধরে।

বিএফডিসি রাঙ্গামাটি কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, হ্রদে মাছ আহরণের চলতি মৌসুমের প্রথম তিন মাস আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৭১ টন মাছ আহরিত হয়েছে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চার মাসে মাছ আহরিত হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ টন। অর্থাৎ প্রথম তিন মাসের তুলনায় পরের চার মাসে মাছ আহরণ কমেছে ১ হাজার ৪২৪ টন। আবার প্রথম তিন মাসে বিএফডিসির বিভিন্ন কেন্দ্রে অবতরণ হয়েছে ৪ হাজার ৩৯১ টন মাছ। আর পরের চার মাসে অবতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫৩২ টন, যা প্রথম তিন মাসের তুলনায় ১ হাজার ৮৫৯ টন কম।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লেফট্যানেন্ট কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দিনগুলোর তুলনায় গত কয়েক মাসে কাপ্তাই হ্রদে মাছের আহরণ কিছুটা কমেছে। তবে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মাছের আহরণ কিছুটা বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় শীত বেশি পড়েছিল। ফলে জেলেরা ঠাণ্ডায় মাছ কম আহরণ করেছে, তাই ঠান্ডার সময়ে আহরণ কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। আমরা আশাবাদী, কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। এমনকি অন্যান্য বছরের চেয়ে মাছ আহরণ আরও বাড়বে।

স্থানীয়রা জানান, কাপ্তাই হ্রদের পাঁচটি চ্যানেলে মাছ উৎপাদন হলেও বর্তমানে লংগদুর কাট্টলী-মাইনী চ্যানেলে মাছের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। তবে অন্য চারটি চ্যানেলে মাছের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। কাপ্তাই হ্রদের নাব্য সংকটের কারণে শুষ্ক মৌসুমে জেলার নৌপথের ছয় উপজেলা বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি ও নানিয়ারচরের সঙ্গে নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে নৌযানের পাখায় আঘাত পেয়ে অনেক মাছকে মৃত অবস্থায় ভেসে থাকতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, কাপ্তাই হ্রদে দুই প্রজাতির চিংড়িসহ ৭৫ প্রজাতির মাছের আবাসস্থল। এর মধ্যে ৬৭টি প্রজাতির মাছ দেশীয় এবং আট প্রজাতির মাছ বিদেশি। তবে বর্তমানে অনেক মাছই বিলুপ্তির পথে, বিলুপ্ত হয়েছে কিছু প্রজাতির মাছও। হ্রদে উপস্থিত মাছের প্রজাতিগুলো নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন