বিজ্ঞাপন

‘নির্বাচন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আত্মসমালোচনার প্রয়োজন ছিল’

March 16, 2020 | 7:44 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ‘‘মাত্র চার দিন আগে গত ১২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ‘কান্ট্রি রিপোর্টার্স অন হিউম্যান রাইটস প্রাকটিসেস’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ‘২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও মুক্ত বলে বিবেচিত হয়নি। ব্যালটবাক্স ভরা বিরোধীপ্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও রয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণার সময় বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হয়রানি, নির্বিচারে গ্রেফতার ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে।’’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে আয়োজিত এক বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।

মাহবুব তালুকদার আরও বলেন, ‘স্বভাবতই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এই প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর এ সকল অভিযোগ সম্পর্কে কমিশনের ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আত্মসমালোচনার প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের একটি বাণী স্মরণ করি ভালোমন্দ যাহাই আসুক, সত্যরে লও সহজে।’

তিনি বলেন, ‘গত সিটি করপোরেশন নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে সে সম্পর্কে নিজেদের বিবেকই উত্তর বলে দেবে। নির্বাচনি আইনের অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারিত্ব। নির্বাচনকালে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা কমিশনের নিয়ন্ত্রণে কাজ করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি আবশ্যক। নির্বাচনকালে নির্বাচন অবশ্যই কমিশনের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, কারণ স্বনিয়ন্ত্রণই নির্বাচন কমিশনের মূলকথা।’

বিজ্ঞাপন

গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতিষ্ঠা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। সুতরাং সংবিধানে প্রদত্ত স্বাধীনতা ও ক্ষমতা দিয়ে সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের বাছাই করা কমিশনের কর্তব্য। এ দায়িত্ব পালনে আপনারা কমিশনের সহযোগী। অবাঞ্চিত অঙ্গুলিহেলনে নির্বাচন কমিশন হেলে পড়লে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সেই পবিত্র দায়িত্ব যথাযোগভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রকে বিপন্ন করতে চাই না। বিপন্ন গণতন্ত্র নিয়ে কোনো জাতি আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের তিন বছরের কার্যকালে এই প্রথম প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিগত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচনি প্রচারের বিকল্প ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে এই উপনির্বাচনের প্রার্থীগণ নতুন পদ্ধতিতে প্রচারাভিযান চালাতে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর দিয়েছেন। এই সমঝাতোয় আছে নির্বাচনি এলাকার যত্রতত্র পোস্টার না টানানো, শব্দদূষণ রোধে নিয়ন্ত্রিতভাবে মাইক বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পদযাত্রা ও শোভাযাত্রা সীমিত রাখা, রাস্তায় কোনো পথসভা থেকে বিরত থাকা, তোরণ নির্মাণ বা ফুটপাতে ক্যাম্প না করা ইত্যাদি। এই সমঝোতা স্মারক একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এর বাস্তবায়ন সাফল্যমণ্ডিত হলে দেশের অন্যান্য নির্বাচনগুলোতে এই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনি আচরণবিধি সংশোধনের প্রয়োজন হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচনটি উপনির্বাচন হলেও এটি কেবল রাজধানীবাসী নয়, দেশবাসী, এমন কি বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টির সম্মুখে রয়েছে। আমরা কি এই নির্বাচনটিকে একটি আদর্শ নির্বাচন হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরতে পারি না? যদি তা করতে হয়, তবে আপনাদের সহযোগিতায়ই তা করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘এবছর পুলিশ বাহিনী ‘জনতার পুলিশ’ হওয়ার অঙ্গীকার করেছে। অন্যান্য বাহিনীও একই আদর্শে অনুপ্রাণিত হলে এই উপনির্বাচনের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন ভাবমূর্তি নির্মাণ করতে পারি। অবাধ ও সুষ্ঠ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা আমরা বারবার বলি। আসুন একটি সুস্থ সুন্দর ও শুদ্ধ নির্বাচন করে আমরা মুজিববর্ষে জাতির জনকের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন করি।’

সারাবাংলা/জিএস/এমআই

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন