বিজ্ঞাপন

গো-মূত্র, ভারতে করোনা সারানোর সূত্র!

March 18, 2020 | 10:35 am

সারাবাংলা ডেস্ক

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। এরপর মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি এই ভাইরাস। একে একে বিশ্বের শতাধিক দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেশী ভারতেও শনাক্ত হয় এই ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগী। এমন রোগী পাওয়া যায় বাংলাদেশেও। এ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি বা pandemic ঘোষণা করতে বাধ্য হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এখন পর্যন্ত প্রতিষেধক বা ওষুধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে শঙ্কায় গোটা বিশ্ব।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রাথমিক পর্যায় থেকেই ভারতে গো-মূত্র নিয়ে চলছে মাতামাতি। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং তাদের মদতপুষ্ট সংগঠন হিন্দু মহাসভা করোনাভাইরাসের অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে গো-মূত্র ও গোবরের কথা প্রকাশ্য জনসভায় প্রচার করে বেড়াচ্ছেন।

ভারতের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বড় অংশের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। সঙ্গত কারণেই সেখানে শিক্ষা ও সচেতনতার হার কম এবং কুসংস্কারের দাপট বেশি। সেরকম বাস্তবতায় গত ৩০ জানুয়ারি ভারতের হিন্দু মহাসভার প্রধান স্বামী চক্রপাণি মহারাজ ঘোষণা করেন, গো-মূত্র ও গোবর গ্রহণ করলে সংক্রামক করোনাভাইরাসের প্রভাব বন্ধ হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি ‘ওঁম নমঃ শিবায়’ বলবেন এবং গোবর গায়ে মাখবেন, তিনি রক্ষা পাবেন। করোনাভাইরাস মারতে শিগগিরই বিশেষ যজ্ঞ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

তার ওই ঘোষণার পর থেকেই ভারতের নাগরিকদের একটি অংশ গো-মূত্র নিয়ে মাতামাতির চূড়ান্ত শুরু করেন। খোদ রাজধানী দিল্লিতেই হিন্দু মহাসভার সদস্যদের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় ‘গো-মূত্র পার্টি’। স্বামী চক্রপাণি নিজেও ওই আয়োজনে অংশ নিয়ে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সাধারণ নাগরিকদের গ্লাসে গ্লাসে গো-মূত্র পান করান।

রাজধানী দিল্লির অনুকরণে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি ও কলকাতায়ও সম্মিলিত গো-মূত্র পানের আয়োজন করা হয়। ওই আয়োজনগুলোতে মানুষের উপস্থিতিও ছিল লক্ষ করার মতো।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, চক্রপাণির ওই ঘোষণার সূত্র ধরেই ক্ষমতাসীন বিজেপি’র কয়েকজন শীর্ষ নেতা করোনাভাইরাসের ওষুধ হিসেবে গো-মূত্রের কথা প্রচার করেন। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি প্রধান দিলীপ ঘোষ এক জনসভায় ঘোষণা দেন, বাঙালি আগেও গো-মূত্র খেয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে তিনিও গো-মূত্র খাবেন।

কিন্তু, উগ্র হিন্দুত্ববাদী দর্শনের মারপ্যাঁচে অনেক সাধারণ মানুষকে গো-মূত্রের ফাঁদে ফেলতে পারলেও এ ব্যাপারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন ভারতের সচেতন নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গো-মূত্র পানে উপকারিতা কম, ভয়াবহতা বেশি। মানুষের মতোই দেহের দূষিত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে ত্যাগ করে গরু। তাই সেটা আর যাই হোক উপকারী হতে পারে না। বাইরের আবহাওয়ায় কীটনাশক হিসেবে কাজ করলেও মানবদেহে প্রবেশের পর গো-মূত্র ক্ষতিকর এক বিষে পরিণত হয় বলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সাংসদ মানস ভুঁইয়া তো গো-মূত্র খাওয়াকে সমর্থন করায় বিজেপির রাজ্যপ্রধান দিলীপ ঘোষকে সরাসরি উন্মাদ বলে আখ্যা দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া, ভারতজুড়ে গো-মূত্র নিয়ে একপক্ষের মাতামাতিতে একদল অসাধু ব্যবসায়ী লিটারপ্রতি গো-মূত্র ৪০০ রূপি দামেও বিক্রি করতে শুরু করে। করোনাভাইরাসের আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ তাদের সেই ফাঁদেও পা দিয়েছে কিছু না ভেবেই। অনলাইন ও অফলাইন থেকে কোনো বাছবিচার না করেই সমানে অর্ডার করেছেন গো-মূত্র।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভারতে তিন জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত শতাধিক। আশঙ্কা রয়েছে, এই ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে দেশটিতে। এ অবস্থায় সুনির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়াই গো-মূত্র নিয়ে মাতামাতি কতদিন চলবে দেশটিতে, সে প্রশ্ন রাখছেন দেশটির সচেতন মহলই।

সারাবাংলা/একেএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন