বিজ্ঞাপন

পুলিশের তাগিদে কাউন্সিলরদের মাঠে নামাচ্ছেন চসিক মেয়র

March 29, 2020 | 9:09 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশের পক্ষ থেকে তাগিদ দেওয়ার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাঠে নামানো হচ্ছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সোমবার (৩০ মার্চ) সকাল ১১টায় চসিকের সম্মেলন কক্ষে কাউন্সিলরদের বৈঠকে ডেকেছেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৯ মার্চ) নগরীর দামপাড়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে সমন্বয় সভা হয়েছে। এতে উপস্থিত সিটি মেয়রকে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান কাউন্সিলরদের মাঠে নামানোর তাগিদ দেন। সভায় চট্টগ্রাম নগরীতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, সিএমপি, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সব সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে আরও কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেনটাইনের ক্ষেত্রে আমরা কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখাব না। আমরা কঠোরভাবে এটা দেখব। আর আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে, তার চিকিৎসা, ওই এলাকা লকডাউন করা, মারা গেলে যার যার ধর্মীয় রীতিতে সৎকার করাসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে যে বিষয়টাতে জোর দিয়েছি, কাউন্সিলরদের দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ এলাকার বিষয়ে খোঁজখবর আমার চেয়ে উনাদের কাছে বেশি আছে। উনারা সহযোগিতা করলে আমাদের পক্ষে অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। এজন্য মেয়র মহোদয়কে বলেছি যে- আপনি আপনার কাউন্সিররদের মাঠে নামিয়ে দেন।’

দুপুরে সভা শেষ হওয়ার পর বিকেলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো বার্তায় কাউন্সিলরদের নিয়ে মেয়রের বৈঠক আহ্বানের বিষয়টি জানানো হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর অন্তত দুজন কাউন্সিলর সারাবাংলাকে জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এই প্রথম কাউন্সিলরদের বৈঠকে ডেকেছেন মেয়র। এর আগে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের ৪১ জন পুরুষ ও ১৪ জন নারী কাউন্সিলরের কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকার লোকজনের পাশে দাঁড়ালেও সিটি করপোরেশনের মেয়রের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করা হয়নি। এমনকি নগরীতে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর কাজেও তাদের যুক্ত করা হয়নি। পুলিশের তাগাদার পর অবশেষে কাউন্সিলরদের পাশে নিচ্ছেন মেয়র নাছির।

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আবু বক্কর সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে করোনাভাইরাসের বিষয়ে তিনজন মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন। এর মধ্যে বিভাগীয় বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, জেলার বিষয়ে সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী এবং মহানগরীর বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা মুখপাত্র নিযুক্ত হয়েছেন।’

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে- লকডাউন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক তদারকি অব্যাহত রাখবে। করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে পুলিশের হটলাইনে ফোন করলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হবে। করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার যদি জরুরি প্রয়োজনে সিএমপির হটলাইনে (০১৪০০৪০০৪০০) ফোন করেন, তাহলে তাকে মহানগরীর এলাকায় সিএমপির গাড়িতে হাসপাতালে পৌঁছানো হবে। সভায় সিটি করপোরেশন, সিএমপি, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে নগরীতে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এছাড়া সভায় করোনায়ার আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তার সৎকারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার আরেফিননগরে একটি খালি জায়গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফন করা হবে। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিষয়ে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

বিজ্ঞাপন

সভায় নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় আইসিইউ সুবিধাসম্বলিত একটি বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জাননো হয়েছে। সিভিল সার্জনকে টেলিমেডিসিন সুবিধায় দক্ষ চিকিৎসকদের নিয়ে টিম গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারসহ সংশ্লিষ্টদের থাকা-খাওয়ার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সাধারণ ছুটি চলাকালীন সাধারণ মানুষের সুবিধায় হোটেল-রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে সেক্ষেত্রে কেউ বসে খেতে পারবেন না, কিনে বাসায় নিয়ে যেতে হবে।

সভায় সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, মোস্তাক আহমেদ খান ও শ্যামল কুমার নাথ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি মিয়া, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলমসহ সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ছিলেন।

চট্টগ্রামে ২২ জনের করোনা পরীক্ষা, একজনকে সন্দেহ

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাটে ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজেজ- বিআইটিআইডিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে গত চারদিনে ২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জনের নমুনায় করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তাদের নমুনা প্রতিবেদন ঢাকায় রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিআর) পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিআইটিআইডি’র চিকিৎসক শাকিল আহমেদ সারাবাংলাকে জানান, শনিবার পর্যন্ত ১৫ জনের নমুনা প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল, যার মধ্যে একজনও সংক্রমিত হননি। রোববার আরও সাতজনের নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে চারজন চট্টগ্রামের ও তিনজন কক্সবাজারের। সাতজনের মধ্যে একজন কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নাগরিক। এদের মধ্যে ছয়জনের নমুনা প্রতিবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, যাতে সংক্রমণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একজন কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত এক নারীর সংস্পর্শে ছিলেন। তার নমুনা সন্দেহজনক হওয়ায় সেটি পরীক্ষা করে ফের সোমবার ঢাকায় পাঠানো হবে। এছাড়া আরও দুজনের নমুনা পরীক্ষা চলছে বলে জানান তিনি।

এদিকে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে নতুন করে কেউ প্রবেশ না করায় নতুন করে কাউকে হোম কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়নি। বর্তমানে ৯৪৭ জন হোম কোয়ারেনটাইনে রয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন