বিজ্ঞাপন

টেস্টে ৩শ উইকেট চান তাইজুল

April 12, 2020 | 4:05 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

লাল সবুজের জার্সিতে অভিষেকেই চমকে দিয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। সময়টা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ। কিংস্টনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ঘূর্ণি জাদু চালিয়ে শিকার করেছিলেন ৫ ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানকে। ওই যে শুরু। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক দক্ষ হাতে উইকেট শিকারে হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের নির্ভরতার প্রতীক ও নিয়মিত মুখ। গেল বছরের সেপ্টেম্বরে বাঁ হাতি এই স্পিনার আফগানদের বিপক্ষে গড়েছেন দ্রুততম শত উইকেটের গর্বিত রেকর্ড। ২৫ টেস্টে ছাপিয়ে গেছেন অগ্রজ মোহাম্মদ রফিক ও এদেশের রেকর্ডের বরপুত্র সাকিব আল হাসানকে (২৮তম ম্যাচে ১শত উইকেট পেয়ছিলেন সাকিব, রফিক ৩৩ ম্যাচে)। ২৯ টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ১১৪। ক্যারিয়ার সায়াহ্নে সাদা পোষাকে নামের পাশে দেখতে চান ৩শটি উইকেট।

বিজ্ঞাপন

চারিত্রিক বৈশিষ্টে একেবারেই চুপচাপ গোছের তাইজুল। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কারো সঙ্গেই কথা বলেন না। যাও বলেন একেবারে মেপে। নিজের কাজের বাইরে আর যেন কিছুই বোঝেন না বা বুঝতে চানও না। মাঠের লড়াইয়েও তিনি এমনই । বোলিংয়ে ততটা ক্ষিপ্রতা নেই বললেই চলে। উইকেট শিকারের পরেও থাকেন ভাবলেশহীন। স্রেফ হাইফাইভের মধ্যেই যা সীমাবদ্ধ থাকে। কখনো সখনো করে থাকেন কিন্তু নিয়মিত নন।

তবে এই জায়গাটিতে নিজেকে শোধরাতে চাইছেন ২৮ বছর বয়সী এই স্পিনার। বোলিংয়ের সময় আনতে চাইছেন ক্ষিপ্রতা ও উইকেট শিকার করে উদযাপনের মাত্রাটাও বাড়াতে চাইছেন।

বিজ্ঞাপন

চলতি বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা করে নিয়েছেন ১৭ জন ক্রিকেটার। তন্মধ্যে লাল ও সাদা বলে তিন ফরম্যাটের জন্য রাখা হয়েছে ৭ জনকে। উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো টেস্ট স্পেশালিস্টের তকমা গায়ে মেখেও সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন তাইজুল। বিষয়টি তাকে দারুণ আপ্লুত করেছে ও হাতছানি দেয় এক ফরম্যাটের দেওয়াল ভেঙে নতুন নতুন ফরম্যাটে নিয়মিত হওয়ার।

মুঠোফানে সারাবাংলার সঙ্গে একান্তে আলাপ কালে কথাগুলো জানাচ্ছিলেন তাইজুল। এছাড়াও ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন। করোনার সময় পুরোদস্তুর গৃহবন্দী এই বাঁ হাতি স্পিনার জানিয়েছেন তার করোনাকালের প্রাত্যহিক কর্মসূচীও। সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো-

সারাবাংলা: আপনাকে টেস্ট স্পেশালিস্ট বলা হলেও বিসিবি’র তিন ফরম্যাটের চুক্তিতেই আপনি আছেন। এটা আপনার জন্য কতটা সুখকর?

বিজ্ঞাপন

তাইজুল: অবশ্যই ভালো লেগেছে যে নির্বাচকেরা আমাকে তিন ফরম্যাটের জন্যই উপযুক্ত মনে করছে। আমি হয়তবা তিন ফরম্যাটেই খেলতে পারব। হয়তবা তারা পরিকল্পনা করছেন যে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিও খেলাবেন। এজন্যই সম্ভবত রেখেছেন।

তাইজুল

সারাবাংলা: ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আপনাকে নিয়ে যে কাজগুলো করেছেন যদি বলতেন সেগুলো কী কী?

তাইজুল: আমি যখন তার সঙ্গে কাজ শুরু করি তিনি প্রথমেই বললেন, একই রকম বোলিং দিয়ে তুমি সব ফরম্যাটে খেলতে পারবে না। তো উনি আমাকে বললেন গতির বৈচিত্র (পেস ভেরিয়েশন) নিয়ে কাজ করতে। এছাড়াও আমার বলের বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যান কোন দিকে শক্তিশালী সে বিষয়েও বলে দিতেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: আপনি বলছেন গতি বৈচিত্র আপনাকে ওয়ানডে ফরম্যাটে সাহায্য করবে। সেটা কীভাবে?

তাইজুল: আমরা যখন টেস্টে বল করি তখন গতির বৈচিত্রটা খুব কম থাকে। একই জায়গায় বল করতে চেষ্টা করি। দেখা যাচ্ছে ৪-৫টা বল একই গতিতে এবং একই জায়গায় হয়। কেননা এই ফরম্যাটে আমার মূল লক্ষ্যই থাকে একই জায়গায় বল ফেলা। কিন্তু ওয়ানডেতে তো আর সেটা সম্ভব না। একই গতিতে দুই তিনটা বল করলে দেখা যায় ব্যাটসম্যান মেরে দিল! আর যেহেতু ক্রিকেট এখন অনেক আধুনিক সেহেতু ব্যাটসম্যানের মারাটাও স্বাভাবিক। কারণ সেও রান করতে চায়। তো গতি বৈচিত্রটা এজন্যই যেন প্রত্যেকটা বল একই গতিতে না যায়। পেস ওঠা নামা করলে ব্যাটসম্যানেরও খেলতে অসুবিধা হবে। গতি বৈচিত্রটা এজন্যই গুরুত্বপূর্ণ।

সারাবাংলা: ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ও সুনীল যোশি দুজনের সঙ্গে আপনি কাজ করেছেন। তাদের মধ্যকার কাজের পার্থক্যটা যদি বলতেন।

তাইজুল: সুনীল যোশি যখন ছিল তখন তো আমি টেস্টই খেলতাম। ওই সময় আমি ভাবতাম টেস্টেই কী করে ভালো করা যায়। আমি ওর সাথে টেস্টের লাইন লেংথ নিয়ে কাজ করতাম। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে কী করে খেলা যায় সেগুলো নিয়ে ওর সাথে কাজ করিনি বললেই চলে। আর ভেট্টোরির সঙ্গে আমি কাজ করেছি পেস ভেরিয়েশনসহ আরো কিছু দিক নিয়ে যা সংক্ষিপ্ত সংস্করণেও কাজে আসবে।

তাইজুল

সারাবাংলা: নিজের ব্যাটিং নিয়ে কিছু ভাবছেন? কেননা ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে ‍শুধুই স্পিন দিয়ে দলে থাকাটা বেশ কঠিন।

তাইজুল: তাতো অবশ্যই! আসলে ক্রিকেট খেলাটা এমন হয়ে গেছে যে সব দিকেই পারদর্শী হতে হয়। শুধু ব্যাটিং বা বোলিং দিয়ে দলে থাকাটা কঠিন। যদি বোলিংয়ের পাশাপাশি কিছু রানও করা যায়। অবশ্য একেকটা ফরম্যাটের জন্য ব্যাটিংটা একেক রকম হওয়া উচিৎ। যেমন আমি যখন টেস্টে নামি তখন আমার সঙ্গে একজন ব্যাটসম্যান থাকে। তো তাকে সাহয্য করাই আমার কাজ। আবার যখন ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলি তখন হয়ত দুই এক ওভার থাকে। ওই সময় ১০-১৫ রান করা কিন্তু আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এটা যখন পারব সবাই তখন আমার ওপর আস্থা রাখবে।

সারাবাংলা: টি-টোয়েন্টিতে আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

তাইজুল: টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলে না খেললেও বিপিএলে কিন্তু খেলেছি। সৃষ্টি কর্তার রহমতে ভালোই হয়েছে। খারাপ বলব না। আমি যদি জাতীয় দলে এই ফরম্যাটে সুযোগ পাই অবশ্যই ভালো করার ও লম্বা সময় দলের সঙ্গে থাকার চেষ্টা থাকবে।

সারাবাংলা: প্লেয়ার হিসেবে আপনি অদ্বিতীয়। কিন্তু আপনার মধ্যে আগ্রাসী ভঙ্গিটা অনুপস্থিত। খেয়াল করেছেন?

তাইজুল: উইকেট পাওয়ার পরে অন্যরা যেভাবে উদযাপন করে আমি হয়ত ওটা করি না বা বোলিংয়ের সময় যে আগ্রাসী শরীরী ভঙ্গি থাকা উচিৎ সেটা হয়ত আমার মধ্যে নেই। আমি আপনার সাথে একমত। আমার আসলে আসে না। তবে আপনি যেহেতু বললেন, চেষ্টা করব মাঠে আরো আগ্রাসী থাকতে।

সারাবাংলা: মাঠে সাকিব থাকাকালীন তাইজুলের ভূমিকা ও সাকিবহীন তাইজুলের ভূমিকা নিয়ে যদি বলতেন।

তাইজুল: সাকিব ভাই যখন থাকে তখন আমাকে চাপ কম নিতে হয়। বোলিংটাও কম করতে হয়, সিদ্ধান্ত নিতেও সমস্যা হয় না। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে উনি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। কারণ উনি বুঝে যান ব্যাটসম্যান কখন কী করবে বা কী করলে ভালো হবে। আর সে না থাকলে চাপ বেশি থাকে, বোলিংও বেশি করতে হয়।

তাইজুল

সারাবাংলা: আপনি কী মনে করেন টি-টোয়েন্টিতে স্পিনাররা প্রভাব বিস্তার করতে পারে? যেহেতু এখনকার টি-টোয়েন্টির উইকেটগুলো ব্যাটিং বান্ধব হয়ে থাকে।

তাইজুল: আমি আপনার সঙ্গ একমত। তবে এটাও তো ঠিক বর্তমান বিশ্বে যারা স্বনামধন্য স্পিনার তারা টি-টোয়েন্টিতেও ভালো করে। আইপিএল, বিগব্যাশ, সিপিএল; সব জায়গাতে তারা ভালো খেলেই নিজ নিজ দলে থাকতে হয়। আমার কাছে যেটা মনে হয়, আমি যখন বড় কোনো আসরে খেলতে যাব তখন আমার দক্ষতা, বুদ্ধি ও ব্যাটসম্যানকে পড়ার সামর্থ্য থাকলে মনে হয় না আমার জন্য উইকেট পাওয়াটা সমস্যা হবে। সব ধরনের উইকেটেই খেলা যাবে।

সারাবাংলা: ভবিষ্যতে কোথায় থামতে চান?

তাইজুল: আমোদের দেশের যে অবস্থা আমি আসলে টেস্টে ৩শ উইকেট পেলেই খুশি। তবে এটা হওয়া খুবই কঠিন। তারপরেও এটাই আমার লক্ষ্য এবং এজন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব।

সারাবাংলা: করোনার সময়টা কী করে পার করছেন?

তাইজুল: জীবনে প্রথম এমন একটি পরিস্থিতিতে পড়েছি। আসলে সময়টা খুব কঠিন। খারাপ লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে দুয়া করতে হবে।

সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।

তাইজুল: আপনাকেও।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন