বিজ্ঞাপন

লাশ ঘরে ছেলে, ১০ গজ দূরে অচেতন মা

March 1, 2018 | 7:20 pm

জাকিয়া আহমেদ ও সোহেল রানা

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দুপুর দেড়টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে তখন ১৭ বছরের রওনকের মৃতদেহ। রওনকের মা হেনা বেগম সন্তানের মৃত্যুর কথা তখনও জানেন না। কিন্তু ছেলের রক্তাক্ত হওয়ার খবর শুনেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে ছেলের কথা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যান মা হেনা বেগম।

হাসপাতালে এসে মা হেনা বেগম বলতে থাকেন, ‘আমার একটাই ছেলে-আমারে কেউ একটু ওরে দেখতে দেন-আপনারা কেউ কিছু বলেন কেন? আমার ছেলে বাঁচব তো? অথচ তখন ছেলে রওনকের নিথর দেহ পড়েছিল মর্গে। আর হেনা বেগমের বিলাপে জরুরি বিভাগে উপস্থিত অন্য রোগীদের স্বজনরাও চোখ মোছেন।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালে রওনকের মায়ের আহাজারি

বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় ছুরিকাঘাতে রওনক হোসেন নামে এক কলেজছাত্র খুন হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। রওনক আজিমপুর নিউ পল্টন লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। আগামী এপ্রিল মাসেই তার পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

বিজ্ঞাপন

ছুরিকাঘাতে নিহত রওনক

রওনকের মা হেনা বেগম জানান, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে কোচিং করে রওনক। তারপর বাসায় এসে আবার বের হয়। কিন্তু সেসময় তাকে পরীক্ষার কথা মনে করিয়ে দিয়ে রওনক মাকে বলেছে, কিছুক্ষণের ভেতরেই সে ফিরে আসবে। কিন্তু রওনক আর ফেরেনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্তাক্ত রওনককে নিয়ে আসেন বন্ধু মামুন, ফাহিম, অমিতসহ আরও কয়েকজন। ফাহিম সারাবাংলাকে জানান, পুরান ঢাকায় বাসা হওয়ায় প্রতিবছরই আবির উৎসবে অংশ নেন তারা। আজও আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে যান।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু তার মাঝ থেকে হঠাৎ করেই কয়েকজন তরুণ রওনককে নিয়ে উধাও হয়ে যান। অনেকক্ষণ তাকে দেখতে না পেয়ে বন্ধুরা তার খোঁজ করেন। কিছু সময় তারা রক্তাক্ত রওনককে দেখতে পান পার্ক থেকে কিছুটা দূরে। তারপরই সাড়ে ১২টার দিকে রওনককে নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসেন তারা। জরুরি বিভাগে রওনককে অক্সিজেন দেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।  অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণেই রওনক মারা যান।

তবে হাসপাতালে আনার পথেই রওনকের মা হেনা বেগমকে ছেলের আহত হবার খবর জানানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে রওনকের ইসিজি সম্পন্ন হয়েছে, কর্তব্যরত চিকিৎসকর তাকে মৃত ঘোষণা করার পর মৃতদেহ রাখা হয় মর্গে।

হেনা বেগম বলেন, এক মেয়ে এবং এক ছেলের মধ্যে রওনক ছোট।

হেনা বেগম বলেন, ‘কেউ তো কিছু আমারে বলতেছে না-বাচ্চাটাতো কোনো গ্যাঞ্জামে যায় না-ওর কী বেশি কিছু হইছে, আমারে দেখতে দিতাছে না কেন, কেউ কিছু আমারে বলে না কেন? আমারে ভেতরে নিয়া যান। আমি কেমনে বাঁচুম-কে করছে এই কাজ, আমার ছেলেরে আমি সকালে বিদায় দিলাম’-বলেই চুপ হয়ে যান হেনা বেগম।

‘আল্লাহ আমার ছেলেরে বাঁচাও, আমি বাঁচুম না নাইলে। আমার ছেলের কিছু হইলে আমি মইরা যামু। এ সময় রওনকে বন্ধু আরিফকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাকে মিথ্যা বলিস না-ওর কী হইছে?’

তিনি বলেন, ‘আমারে একটু ঢুকতে দেয় না কেন, আমার ছেলে কথা কয় না কেন?’

হতবিহ্বল মা হেনা বেগম

আমারে তো বলছে, একটু চোট পাইছে ঢাকা মেডিকেলে আসেন-সেই ছেলেরে আমারে কেউ দেখতে দেয় না কেন-এসব কথা বলতে বলতে হাতজোড় করে কাঁদছিলেন।

ওখানে কী আইনের লোক ছিল ছিল বলে প্রশ্ন করতেই পাশে দাঁড়ানো রওনকের বন্ধুরা সামনেই পুলিশ ছিল। অথচ তখন কেউ সামনে আসেনি। এ কথা শুনে হেনা বেগম বলেন, ‘তারা কেন আসবে না। ওইখানে আইনের লোক কী পুজা করতেছিল’ বলেও প্রশ্ন করেন তিনি।

রওনক পরীক্ষার জন্য সারাদিন বাসায় থাকত, কেবল কোচিং এর দিনগুলোতে বাড়ির বাইরে যেত বলেও জানান তিনি।

পরে হাসপাতালে আসেন কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জানে আলম মুন্সী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা তদন্ত করছি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যারা রওনককে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে, তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান জানে আলম মুন্সী।

রওনকের মরদেহ রাখা হয়েছে হাসপাাতালের মর্গে। আগামীকাল তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। তবে চিকিৎসকের দেওয়া ‘ডেড সার্টিফিকেটে’ রওনকের মৃত্যুর কারণ ‘স্টেপ ইনজুরি’ বলা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেএ/একে

আরও পড়ুন : আবির উৎসবে কলেজছাত্র খুন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন