বিজ্ঞাপন

প্রবল বিক্রমে ফেরার প্রত্যয় রুবেলের

April 16, 2020 | 3:14 pm

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ওয়ানডে ফরম্যাটে মাশরাফির পর এদেশে ১শ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা পেসার আছেন আর মাত্র একজন। তিনি রুবেল হোসেন। ৮১ ম্যাচে অনন্য মাইলফলকটি ছুঁতে পেরেছিলেন ডান-হাঁতি এই পেসার। মাশরাফি অবশ্য ৭৮ ম্যাচেই তা স্পর্শ করেছিলেন। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ১০১ ম্যাচে রুবেলের উইকেট সংখ্যা এখন ১২৬টি। যা তাকে এদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তকমা উপহার দিয়েছে। লাল সবুজের দলে এই ফরম্যাটে রুবেলকে মহীরুহ হিসেবেই ধরা হয়। বছর খানেক আগেও তার কাঁধে অগাধ আস্থা রেখেছে টাইগার ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু গেল বছরের জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার এই ফ্রন্ট লাইন ফাইটার।

বিজ্ঞাপন

টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও এখন জাতীয় দলে জায়গা মিলছে না। বাদ পড়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকেও। বিষয়টি তার মর্যাদায় দারুণভাবে আঘাত করেছে। তাই অনতিবিলম্বেই এখান থেকে বেরিয়ে এসে প্রবল বিক্রমে মাঠের লড়াইয়ে ফিরতে চাইছেন ২০১০ ও ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশের এই কারিগর। ক্রিকেটিং ক্যারিয়ারও আরো লম্বা করার ইচ্ছে তার মধ্যে প্রবল। শেষ করার আগে নামের পাশে ওয়ানডেতে নুন্যতম আড়াইশ উইকেট দেখতে চাইছেন।

রুবেল

স্রেফ একজন ক্রিকেটার বৈ রুবেলের আর কোনো পরিচয় নেই। জনপ্রতিনিধি বা সরকারের আমলা তিনি নন। তাও আবার জাতীয় দলের তিন ফরম্যাটে স্থায়ী আসন গেঁড়ে বসতে পারেননি। একটি ফরম্যাটেই তার বসতি। ইদানিং সেই জায়গাটিও নেই। বিষয়টি স্পষ্ট যে তার আর্থিক সামর্থ্য নিয়মিতদের মতো নয়। অথচ সেই তিনিই প্রাণঘাতী করোনায় দেশের ক্রান্তিকালে নিজ উদ্যোগে রেখে যাচ্ছেন মানবতার উজ্জ্বল এক একটি দৃষ্টান্ত!

বিজ্ঞাপন

কখনো মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে রাস্তায় নেমে নিজ হাতে দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন, কখনো দিচ্ছেন আর্থিক সহায়তা, কখনো বা নিজের ফেইসবুক পেইজে সচেতনামুলক পোস্ট দিয়ে ভক্তদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন করোনাকালে করণীয়। সবশেষ তিনি নিজ জেলা বাগেরহাটের মানুষের জন্য শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের যন্ত্র থার্মাল স্ক্যানার কিনে দিয়েছেন। যা কিনা খুব সহজেই শরীরের তাপমাত্রা জানাতে সক্ষম হবে। আর এসবই তিনি করছেন দায়িত্ববোধ ও মানবতাবোধে তাড়িত হয়ে।

মুঠোফোনে সারাবাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কথাগুলো জানিয়েছেন লাল সবুজের দলে আবারো নিয়মিত হতে মুখিয়ে থাকা এই পেসার। কথা বলেছেন প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিসহ সমসাময়ীক নানান প্রসঙ্গেও। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো-

সারাবাংলা: করোনাকালে আপনার বেশ কিছু কর্মসূচী আমরা দেখেছি। এর পেছনে ভাবনাটি কী ছিল?

বিজ্ঞাপন

রুবেল: ভাবনা বলতে এটা আমি দায়িত্ববোধ থেকেই করেছি। যেহেতু আমি এদশের সন্তান সেহেতু মানবতার বিষয়টি মাথায় রেখেই করেছি। আসলে এই সময়টি আমার কাছে খুবই সংকটময় মনে হয়েছে। প্রধানত মানবতার বিষয়টি মাথায় রেখেই কাজগুলো করা। আমি আমার সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়েই চেষ্টা করেছি।

সারাবাংলা: বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিশেষ করে ওয়ানডেতে আপনার অবস্থান সবসময়ই সুদৃঢ়। কিন্তু এবার বিসিবি’র চুক্তি থেকে বাদ পড়লেন। তিন ফরম্যাটের কোনোটিতেই আপনাকে রাখা হয়নি। এটা আপনার জন্য কতটা কষ্টের?

রুবেল: এটা সম্পূর্ণ নির্বাচকদের ব্যাপার। হয়তবা তারা আমার চাইতেও ভালো কাউকে পেয়েছেন। এটা নিয়ে আমি আসলে চিন্তিত নই। সৃষ্টিকর্তা যা করেন তা আমাদের ভালোর জন্যই করেন। তবে থাকতে পারলে খুবই ভালো হত। কেননা একজন ক্রিকেটার যখন বোর্ড থেকে নিয়মিত বেতন পায় তখন তার মনোবল ভীষণ চাঙ্গা থাকে। সবকিছুই সে ইতিবাচকভাবে ভাবতে পারে। অবশ্য আমি এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখছি না। কারণ আমরা ক্রিকেটাররা বিশেষ করে আমি অনেক কষ্ট করে এখানে এসেছি। অবশ্যই আমি এখান থেকে নিচে নামতে চাইব না। কেননা আমি অনেক দিন ক্রিকেট খেলব। সেজন্য আমি কঠোর পরিশ্রম করে যাব। আপনি জানেন হয়ত গেল বিপিএলে আমি ভালো পারফর্ম করলাম, সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও হলাম। এই পারফরম্যান্সের কারণেই আমি পাকিস্তানে সিরিজ খেলতে গেলাম। একটা টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেলাম কিন্তু বৃষ্টির কারণে ম্যাচটা হলো না। টেস্ট খেললাম। তবে আমি অবশ্যই আরো কঠিন ভাবে ফিরতে চাই। সামনে যত খেলা আছে সেখানে ভালো খেলে আবার নির্বাচকদের নজরে আসতে চেষ্টা করব।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা: ওয়ানডেতে আপনি দলের স্ট্রাইক বোলার। কিন্তু ইদানিং আপনাকে নিয়মিত দলে দেখা যাচ্ছে না। এটা আপনাকে কতটা ভাবায়?

রুবেল: ভাবনা তো অবশ্যই আছে। কেননা ওয়ানডেতে আমার রেকর্ডটা মোটামুটি ভালো। আমি ওয়ানডেতে অনেক পারফর্ম করেছি। যেটা হয়েছে, আমি দলের সাথে যাই ঠিকই কিন্তু ম্যাচ খেলতে পারিনি। । তো আমি যখন ম্যাচ খেলতে না পারব তখন তো আর পারফরম্যান্স দেখানোর সুযোগ থাকে না। এমন এমন অনেক প্লেয়ার আছে যাদের জন্য একটা ম্যাচও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পারফরম্যান্স না করলে দল থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। দেখবেন ভালোভাবেই আবার দলে ফিরব।

সারাবাংলা: সম্প্রতি দলে বেশ কয়েকজন তরুণ পেসার এসেছে। এতে করে আপনার চ্যালেঞ্জটা কী বেড়ে গেল? মানে প্রতিযোগিতাটা বেড়ে গেল কী না?

রুবেল: না! না!, আমার কাছে ওমন কিছুই মনে হয় না। কারণ আমি সবসময় চ্যালেঞ্জ নিতে খুব পছন্দ করি। আমার মনে হয় যত পেস বোলারই আসুক না কেন সেটা বাংলাদেশ দলের জন্যই ভালো। জাতীয় দলে যদি প্রতিযোগিতাই না থাকে তাহলে কিন্তু আবার সমস্যা। যদি কেউ সহজেই জায়গা পেয়ে যায় তখন কোনো কিছুই ভালো লাগে না। হয়ত বা সে সহজে খেলছে কিন্তু মানুষ তো সেটা দেখছে। আমি যদি প্রতিযোগিতার ব্যাপারটা অনুভব না করি তাহলে তো আর পারফর্ম করতে চাইব না। এতে করে দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তো প্রতিযোগিতা থাকলে আমি পারফর্ম করতে মরিয়া থাকব। তাই আমার মনে হয় পেসারদের প্রতিযোগিতা থাকটা ভালো।

সারাবাংলা: এই মুহুর্তে আপনার ঘাটতিটা কোথায় দেখছেন?

রুবেল: ঘাটতি ওভাবে বলব না। আমি মূলত আমার শক্তির জায়গাটিতেই বল করি। দেখেন আমি বহুদিন ক্রিকেট খেলছি। এই সময়ে এসে ঘাটতি মনে হয় না প্রভাব ফেলছে। তবে হ্যাঁ, তারপরেও আমার কিছু দূর্বল দিক আছে। আমাকে ডেথ বোলিং নিয়ে কাজ করতে হবে। এটা নিয়ে কাজ করছি। হয় কি যখন আপনি টানা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে যাবেন তখন আপনার জন্য আত্মবিশ্বাস পাওয়াটা সহজ হয়ে যায়। সেটা না হলে কঠিন। তারপরেও যেহেতু আমি পেশাদার ক্রিকেটার সবকিছুর সাথেই খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

সারাবাংলা: টেস্টে আপনার জায়গা আরো স্থায়ী হতে পারত। কেন হয়নি?

রুবেল: ইচ্ছে তো অবশ্যই আছে। আমি কিন্তু পাকিস্তানে একটি টেস্টে খেলেই এসেছি। এটা সত্যি একজন প্লেয়ার যত নিয়মিত খেলবে সে তত উন্নতি করবে। তবে আমার টেস্টের রেকর্ড খুবই খারাপ। ভালো না। তারপরেও আমি তো শিখতে পারি। শেখার তো শেষ নেই। ভালো হয়নি হতেও তো পারে। তাছাড়া আমি তো চেষ্টা করেই যাচ্ছি। এমন না যে বসে আছি। তবে উন্নতি করতে নিয়মিত ম্যাচের মধ্যে থাকা চাই। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রে না সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সারাবাংলা: অনেকেই বলে রুবেল হোসেনের টেস্টের প্রতি আগ্রহ কম। কথাটা কতটা সত্যি?

রুবেল: এইগুলো যারা বলে তাদের বলতে দিন। আমরা কিন্তু মজা করে অনেক কথাই বলি। কিন্তু সেটাকে রং লাগিয়ে কারো কাছে উপস্থাপন করাটা দুঃখজনক। আমি টেস্ট খেলব না এটা কখনোই বলিনি। টেস্টে আমি উইকেট পাই না সবাই জানে। আমি অনেক বোলিং করছি কিন্তু উইকেট নাই। আমার জন্য বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। আমি হয়ত ২৭-২৮ ম্যাচ খেলেছি, উইকেট নেই, গড়টাও খুবই বাজে। এটাই। আর তো কিছু না। কে কি বলছে সেটা নিয়ে আমি চিন্তিত না।

রুবেল

সারাবাংলা: আরো কত বছর খেলতে চান?

রুবেল: খেলতে তো চাই আরো দীর্ঘ্য সময়। এখনো আমার ফিটনেস অনেক ভালো। বল ও খারাপ করি না।

সারাবাংলা: ক্যারিয়ার শেষে নামের পাশে কতগুলো উইকেট দেখতে চান?

রুবেল: মনে রাখার কিছু করতে চাই। আমি চাই মানুষ আমাকে মনে রাখবে যে, রুবেল হোসেন যতদিনই খেলেছে দেশের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। ওর কাছ থেকে ভালো ভালো ম্যাচ পেয়েছি। আমি চেষ্টা করব আরো ভালো ভালো ম্যাচ উপহার দিতে। ওয়ানডেতে আড়াইশ উইকেট পেতে চেষ্টা করব।

সারাবাংলা: ক্রিকেটে আপনার বর্তমান অবস্থাটা নিশ্চয়ই দ্রুত কাটিয়ে উঠতে চাইবেন।

রুবেল: অবশ্যই! আমি দলে নিয়মিত খেলছি না, পাকিস্তান সিরিজে থাকলেও সাম্প্রতিক সিরিজে ছিলাম না, চুক্তিতে নেই। অথচ অনেক বছর ধরে আমি কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ছিলাম। এবারই বাদ পড়লাম। অবশ্যই এগুলো দুঃখজনক। বেতনটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন তো দেশের অবস্থা ভালো নেই, যখনই খেলা শুরু হবে ওখানে পারফর্ম করে নির্বাচকদের নজরে আসতে চেষ্টা করব। নিশ্চয়ই খারাপ সময়টা দ্রুতই কেটে যাবে।

সারাবাংলা: করোনার সময়ে বাসায় কী করে কাটছে?

রুবেল: পরিবারের সাথে বিশেষ করে আমার একটি সন্তান আছে, ওর সাথেই বেশি সময় কাটে। বাসায় টিভি দেখি। তবে করোনা নিয়ে সচেতনতামুলক অনুষ্ঠান ও সংবাদই বেশি দেখি। এগুলো আমার পরিবার, বন্ধুবন্ধবের সাথে শেয়ার করছি। আপনি জানেন যে আমি ফেইসবুকে খুবই সক্রিয়। সেখানেই সচেতনতামুলক পোস্ট দেই। এভাবেই চলছে।

সারাবাংলা/এমআরএফ/এসএস

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন