বিজ্ঞাপন

করোনা মোকাবিলায় ‘জাতীয় টাস্ক ফোর্স’ গঠনের দাবি বিএনপির

April 17, 2020 | 4:33 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: করোনাভাইরাস ‘মহাদুযোর্গ’ মোকাবিলায় ‘জাতীয় টাস্ক ফোর্স’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘চারদিকে অন্ধকার ও হতাশা। করোনা দুযোর্গের নানামুখী প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় এ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে সুসমন্বিত ও সুবিবেচিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহন, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সেক্টারে প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজ বণ্টনের ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্যে একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব আমরা করছি।’

শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক  অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে এই টাস্ক ফোর্স গঠন করা যেতে পারে। এ ধরনের একটি টাস্ক ফোর্স গঠন, অর্থবহ ও গতিশীল করা এখন সময়ের দাবি।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘বডি ল্যাংগুয়েজে মনে হয় না, তারা করোনাকে সিরিয়াসলি নিয়েছেন’

ফখরুল বলেন, ‘টাস্কফোর্স গঠন করলে সুসমন্বিত, সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায়, কোনো খাদ্যের ঘাটতি নয়, খাদ্য বণ্টনে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিদ্ধান্তহীনতা, সুশাসনের অভাব দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে। তাই এখনই খাদ্য ও ত্রাণ বণ্টনে এবং করোনার পরবর্তী পুনর্বাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।’

কারোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অগ্রাধিকার বিষয়গুলো কী হতে পারে?— এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবার আগে এখন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং টেস্ট টেস্ট টেস্ট প্রয়োজন। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দেওয়াটা সবচেয়ে আগে।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দিনমজুরদের বলা হচ্ছে ঘরে থাকো। ঘরে থাকলে তো খাওয়া আসছে না। এদের কাছে খাদ্য পৌঁছানো, তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এটার জন্য উপযুক্ত হচ্ছে সামরিক বাহিনী। তারা স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে এই কাজটা সহজে করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঐক্যের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাম গণতান্ত্রিক জোট বা বাম মোর্চার ঐক্যের একটি পরামর্শসভায়ও আমি যুক্ত হয়েছিলাম। আমরা কোনো রকমের সংকীর্ণতায় ভুগতে চাই না। আমরা মনে করি যে এখন জাতীয় ঐক্যটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।’

গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ৭২ হাজার ৫শ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ এবং ১৩ এপ্রিলের ভাষণে ঘোষিত প্যাকেজসহ সর্বমোট ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্যাকেজটি কলেবরে বড় হলেও এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি, লোক দেখানো আইওয়াশ মাত্র।’

তিনি বলেন, ‘প্যাকেজটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রণোদনা বলা হলেও মূলত অধিকাংশই ব্যাংক নির্ভর ঋণ প্যাকেজ, যা বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী মহলকে দেওয়া হবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। এতে সরকারের প্রণোদনা নিতান্তই অপ্রতুল।’

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গার্মেন্টস মালিকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ, শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের মালিকদের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মালিকদের জন্য ২০ হাজার কোটি ঋণ, কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি ঋণ, ইডিএফ সম্প্রসারণ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট ফিন্যান্স স্কিমে ৫ হাজার কোটি ঋণসহ সর্বমোট ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও এর মধ্যে সরকারের ভুর্তকি বাবদ দেবে ৩ হাজার কোটি টাকা মাত্র।’

‘অর্থাৎ ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ঋণ প্যাকেজের মধ্যে মূলত সুদ ভুর্তকির ৩ হাজার কোটি টাকাই হচ্ছে সরকারি প্রণোদনা। অবশিষ্ট অর্থ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্বাভাবিক ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে বিতরণ করা করবে। এতে সরকারের খরচ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। বাদ বাকি অর্থ আসবে ব্যাংক সূত্র থেকে,’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ব্যাংকগুলোর দুরবস্থা, প্রবাসী রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এবং চলমান তারল্য সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকসমূহ কিভাবে ৭৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজের জন্য অর্থ সংকুলান করবে?— প্রশ্ন রাখেন বিএনপি মহাসচিব।

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন