বিজ্ঞাপন

সপ্তাহের ব্যবধানে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ, আক্রান্ত ৩ গুণের বেশি

April 22, 2020 | 7:58 am

সারাবাংলা ডেস্ক

সংক্রমণ শুরুর সপ্তম সপ্তাহে এসে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা কেবল বাড়ছেই। করোনা উপসর্গ নিয়ে নমুনা পরীক্ষা যতই বাড়ছে, ততই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বেশিরভাগ দিনই আগের দিনের চেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কোভিড-১৯ রোগী। সবশেষ এক সপ্তাহে যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে, তা আগের ছয় সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। একই সময়ে মৃত্যুর ঘটনা আগের ছয় সপ্তাহের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে তিন গুণেরও বেশি, মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই গুণে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সবশেষ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৩৪ জন। এই সময়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সে হিসাবে দেশে বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮২ জন। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ জনে।

করোনা: লাইভ আপডেট

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শেষ এক সপ্তাহে সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২,৩৭০ জন। আর এর আগের ছয় সপ্তাহে আক্রান্তের এই সংখ্যা ছিল ১,০১২ জন। অর্থাৎ এই এক সপ্তাহেই আক্রান্তের সংখ্যা আগের ছয় সপ্তাহের দ্বিগুণেরও বেশি। অর্থাৎ এই এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে তিন গুণ ছাড়িয়েছে।

ঠিক একই সময়ে, অর্থাৎ শেষ এক সপ্তাহে সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৬৪ জন মারা গেছেন। সেখানে আগের ছয় সপ্তাহে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী মারা গিয়েছিলেন ৪৬ জন। অর্থাৎ প্রথম ছয় সপ্তাহের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ কোভিড-১৯ রোগী মারা গেছেন কেবল গত সপ্তাহে। অর্থাৎ এই এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় আড়াই গুণ।

বিজ্ঞাপন

শেষ সপ্তাহের পরিসংখ্যান

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, শেষ সপ্তাহের সাত দিনে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। একইসঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিনই।

বিজ্ঞাপন

সপ্তাহের প্রথম দিন ১৫ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১,৭৪০টি। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ ২১৯টি নমুনা ছিল করোনা পজিটিভ। এদিন মারা যান ৪ জন। পরদিন ১৬ এপ্রিল মারা যান ১০ জন। প্রথমবারের মতো একদিনে এত বেশি মারা যান এই দিনটিতে। এদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪১ জনে, যা ছিল এদিন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। আর এদিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ২,০১৯টি। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

১৭ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষা বাড়লেও সংক্রমণের সংখ্যা ছিল কিছুটা কম। এদিন ২,১৯০টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ২৬৬টি নমুনা করোনায় সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। এদিন সংক্রমণের সংখ্যা কমলেও মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয় ১৫। এখন পর্যন্ত একদিনে এটিই কোভিড-১৯ আক্রান্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু।

১৮ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষা কিছুটা কমলেও করোনা শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়ে। ২,১১৪টি নমুনার বিপরীতে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ৩০৬ জন (১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ)। এদিন মারা যান ৯ জন। পরদিন ১৯ এপ্রিল ২,৬৩৪টি নমুনার বিপরীতে ৩১২ জন শনাক্ত হন কোভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে (১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ)। এদিন মারা যান আরও ৭ জন।

সপ্তাহের ষষ্ঠ দিন ২০ এপ্রিল আগের সব রেকর্ড ছাড়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। ৪৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন এদিন। নমুনা পরীক্ষাও হয় আগের সব দিনের চেয়ে বেশি ২,৭৭৯টি। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। এদিন আরও ১০ জন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়। এতে করে মৃতের সংখ্যা একশ পেরিয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

সপ্তাহের শেষ দিনে ২,৯৭৪টি নমুনা পরীক্ষার (এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ) বিপরীতে শনাক্ত হন আগের দিনের চেয়ে কিছুটা কম, ৪৩৪ জন (১৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ)। মারা যান আরও ৯ জন।

এপ্রিলের সপ্তাহের পরিসংখ্যান

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হলেও মূলত এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে গতি পায় এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার। প্রথম সপ্তাহ থেকেই অবশ্য ইঙ্গিত ছিল ধারাবাহিকভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধির।

পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহটিতে সারাদেশে ১১৩ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়। আর এই সময়ে মারা যান ১২ জন। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে করোনায় আক্রান্ত পাওয়া যায় ৮৪৮ জনকে, যা প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৭ গুণ! এ সপ্তাহে মারাও যান আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ— ২৯ জন। আর শেষ সপ্তাহের পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয় সপ্তাহের আড়াই গুণেরও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে এ সপ্তাহে, যার পরিমাণ ২,৩৭০ জন। এ সপ্তাহে মারাও যান আগের সপ্তাহের দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ— ৬৪ জন।

পরীক্ষা বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্তের হার

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে তথ্য পাওয়া যায়, তা বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট— নমুনা পরীক্ষা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এপ্রিলের তিন সপ্তাহের পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকেও এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ২,৪৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১১৩টি নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ।

প্রথম সপ্তাহের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি পরীক্ষা করা হয়। এই সপ্তাহে মোট ৮,৮৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায় ৮৪৮টি নমুনা। শনাক্তের হার ছিল ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

শেষ সপ্তাহের পরিসংখ্যান বলছে, দ্বিতীয় সপ্তাহের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ নমুনা পরীক্ষা করা হয় এ সপ্তাহে। মোট ১৬ হাজার ৪৫০টি নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া যায় ২,৩৭০টি। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার আগের সপ্তাহের প্রায় দেড় গুণ— ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ।

কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের পর গতি পেয়েছে সংক্রমণ

যখন কোনো ব্যক্তির করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার উৎস শনাক্ত করা যায় না, তখনই মনে করা হয় এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, এ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। অন্যান্য দেশের মতো ঠিক সেটিই ঘটেছে বাংলাদেশেও।

দ্বিতীয় সপ্তাহের ষষ্ঠ দিন ১৩ এপ্রিল কোভিড-১৯ বুলেটিনে উপস্থিত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বীকার করে নেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এরপর যে আট দিন পেরিয়ে গেছে, এর মধ্যে তিন দিনই নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক— ২০৯, ২১৯ ও ২৬৬। বাকি পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই এই সংখ্যা ছিল তিনশ’র বেশি— ৩৪১, ৩০৬ ও ৩১২। আর শেষ ‍দুই দিন নতুন সংক্রমণ ছিল ৪৯২ ও ৪৩৪ জন। এই আট দিনে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৫৭৯। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের মোট সংক্রমণের ৭৬ শতাংশই এই আট দিনে শনাক্ত হয়েছে।

অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রবণতার সঙ্গে মিল থাকলে আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হলে করোনাভাইরাসের নতুন সংক্রমণ আরও বেশি পরিমাণেই হয়তো পাওয়া যাবে। কাজেই এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি এবং সারাদেশকে করোনাভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার মাধ্যমে সবাইকে ঘরে থাকার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সংক্রমণের গতি কমাতে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণের বিকল্প নেই।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন