বিজ্ঞাপন

করোনা নিয়ে মোশাররফের ডাকে সমন্বয় সভা, যাননি মেয়র নাছির

April 22, 2020 | 8:14 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের ডাকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে চট্টগ্রামে সমন্বয় সভা হয়েছে। এতে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছিলেন। তবে মোশাররফের আহ্বানে সাড়া দেননি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

বিজ্ঞাপন

সভায় মোশাররফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এছাড়া মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন। সভায় লকডাউন পরিস্থিতি শিথিল করার পক্ষেও মত এসেছে।

বুধবার (২২ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধি ছাড়াও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন ও সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি মিয়া উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামালের উপস্থিতিতে সার্কিট হাউজে আরেকটি সমন্বয় সভা হবে বলে জানানো হয়।

সমন্বয় সভা আহ্বানের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর আমি কোয়ারেনটাইনে চলে গিয়েছিলেন। অনেকদিন ধরে নেতাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। সেজন্য তাদের ডেকেছিলাম। মন্ত্রী-এমপিরা এসেছিলেন, নেতারাও ছিলেন। ডিসি ও সিভিল সার্জনও এসেছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

সভায় আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লকডাউন শুরুর পর সরকারিভাবে এবং আমাদের নেতারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ দিচ্ছেন। এর মধ্যে যেন সমন্বয় থাকে, সেটা বলেছি। সরকারি ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন জেলায় কিছু অভিযোগ পাওয়া গেলেও আমাদের জেলা এবং মহানগরীতে আল্লাহর রহমতে এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, ত্রাণ নিয়ে কেউ যেন কোনো অনিয়ম করতে না পারে। দেখতে বলেছেন, বিন্দুমাত্র অভিযোগও যেন না ওঠে। আমি মন্ত্রী-এমপি এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বলেছি, এটা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। মানুষ যেন কষ্টে না থাকে, অভুক্ত না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় প্রশাসনের সঙ্গে দলের দূরত্ব আছে। আবার প্রশাসনের ভেতরেও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে কিছু কিছু জায়গায় সমন্বয়হীনতা আছে। দলীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের মধ্যে যেন কোনো ভুল বোঝাবুঝি না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে বলেছেন মোশাররফ ভাই। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কথা উঠেছিল। চট্টগ্রামে যে আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটর নেই, হাসপাতাল নির্ধারণ নিয়ে একটা সমস্যা চলছে— এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। মন্ত্রীরা গিয়ে বলার পর প্রধানমন্ত্রী জেনেছেন। এতদিন তাকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনকে এ ব্যাপারে আরও মনযোগী হওয়ার কথা বলা হয়েছে।’

সভায় উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ লকডাউন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শিথিল করে কিভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনার কথা বলেছেন। সভায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তবে আস্তে আস্তে সীমিত পর্যায়ে মানুষকে কিভাবে কাজে ইনভলভ করা যায়, সেটা চিন্তা করা যায়।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, ‘এক কামরার ঘরে ৫-৬টা মেয়ে (পোশাক শ্রমিক) গাদাগাদি করে থাকে। বাস্তবে তাদের আলাদা করে রাখা যাচ্ছে না। একটা ঘরের মধ্যে এই গরমের দিনে ২৪ ঘণ্টা তারা কিভাবে বন্দি হয়ে থাকবে?’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মন্ত্রী জাবেদ সাহেব ও এমপি লতিফ সাহেব লকডাউন শিথিল করা নিয়ে কিছু কথা বলেছেন। আসলে ১৮ কোটি মানুষকে কিভাবে মাসের পর মাস ঘরে বেঁধে রাখা সম্ভব? চাল-ডালের বাইরেও তো মানুষের চাহিদা আছে। একটা বিকল্প উপায় বের করা উচিত। বিদেশে দেখছি স্প্রে করে বাস চালানো হচ্ছে। কল-কারখানা আস্তে আস্তে চালু করা হচ্ছে। এই বক্তব্যগুলো সভায় এসেছে। কাল (বৃহস্পতিবার) স্বরাষ্ট্র সচিব আসবেন। সেখানেও আলোচনা হবে।’

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল কিছু ভূঁইফোড় অনলাইন পোর্টালের সংবাদ এবং ফেসবুক লাইভে এসে দলের পদধারী নেতাদের সরকারের সমালোচনা নিয়ে একহাত নেন। নওফেল বলেন, ‘সরকারি ত্রাণ আমাদের মন্ত্রী-এমপি, নেতাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটি সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী জনগণের জন্য পাঠিয়েছেন। কেউ যেন সরকারের ত্রাণ নিজের নামে বিলি না করেন। এখন দেখছি অনেক মিডিয়া সরকারের সমালোচনায় মুখর। অথচ তারা দেখছেন না, প্রতিবেশী দেশের চাইতেও আমাদের প্রস্তুতি ভালো। নামসর্বস্ব কিছু ভূঁইফোড় অনলাইন মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।’

নওফেল চট্টগ্রামের এক চিকিৎসক নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘দলের পদে থেকে কেউ কেউ পেশাজীবী নেতা পরিচয় দিয়ে সরকারের সমালোচনা করছেন। ফেসবুক লাইভে এসে সরকারের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করছেন। আবার নামসর্বস্ব ডটকমেও নিজের বক্তব্য প্রচার করছেন। আমাদের কথা থাকলে দলীয় ফোরামে বলব। কিন্তু দলের পদ-পদবিতে থেকে সরকারের সমালোচনা এভাবে করব কেন? আর একজন চিকিৎসক নেতা সবার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে পারেন না। আমরা সবাই মিলে করোনা জয় করব। কিন্তু দলের পদে থেকে যারা পেশাজীবী নেতা পরিচয় দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।’

বিজ্ঞাপন

এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা সভায় থাকলেও মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী সভায় ছিলেন।

জানতে চাইলে সমন্বয় সভা আহ্বানকারী মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে আমি নিজে ফোন করেছিলাম। উনারা থাকবেন বলেছিলেন। কিন্তু আসেননি। কেন আসেননি, জানি না। তবে আমাদের মেয়র প্রার্থী রেজাউল, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ছিলেন। সুন্দরভাবে সভা হয়েছে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলাা।

গত ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতিতে সেটি স্থগিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রেজাউল করিম চৌধুরী। বঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এরপর থেকে চট্টগ্রামে দলের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত প্রবীণ নেতা মোশাররফের সঙ্গে নাছিরের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে প্রচার আছে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন