বিজ্ঞাপন

রোজার সুস্থতা।।পর্ব ৩।। পিসিওএস আক্রান্তদের রোজার খাদ্যাভ্যাস

May 2, 2020 | 10:00 am

মহামারির কারণে এবছরের রোজা অন্যান্য বারের চেয়ে একটু ভিন্ন আমেজে শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপি চলছে সাধারণ ছুটি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া মানা। তাই অন্যান্য বছরের মত রোজা পালন করা সম্ভব হবে না। তাই রোজায় সুস্থতার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস।

বিজ্ঞাপন

রোজার মাসজুড়ে সারাবাংলার পাঠকদের জন্য  মাসজুড়ে পুষ্টিবিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ আজমেরি রহমান সিন্থীয়া।

আজকের আলোচনা সাজানো হয়েছে পিসিওএস  বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম আক্রান্ত নারীদের খাদ্যাভ্যাস কেমন হবে তা নিয়ে। একে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে  একজন নারীর শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। যার ফলে বিশেষ কিছু শারীরিক কিছু পরিবর্তন এবং ওভারিতে বিশেষ ধরণের কিছু সিস্ট দেখা যেতে পারে। পিসিওএস যদিও একটি সাধারণ সমস্যা তবে অবহেলা করলে তা বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তাই আজ জেনে নেবো পবিত্র রমজানে কীভাবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস পিসিওএস আক্রান্তদের দিতে পারে মুক্তি।

বিজ্ঞাপন

পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণ:

১. অতিরিক্ত মেদ জমা।

২. ঠোঁটের নিচে, গালে বা চিবুকে এবং কখনও কখনও বুকে, পেটে এবং পিঠে পুরুষদের মত পশম গজায়। এগুলো ওভারি থেকে মাত্রাতিরিক্ত পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন নির্গমনের ফলে হয়।

বিজ্ঞাপন

৩.পিরিয়ডের গোলমালের সূত্রপাত হয়, শুরুতে দুই-তিন মাস পরপর পিরিয়ড হয়। কখনওবা হরমোনের তারতম্য বেশি হলে বছরে দুই-তিনবার বা তারও কম পিরিয়ড হয়। কারও আবার অতিরিক্ত ব্লিডিং হয়। বিবাহিতাদের সন্তান ধারণে সমস্যা হয় অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য।

৪.অনেক ক্ষেত্রেই ইনফার্টিলিটির এক অন্যতম কারণ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম।

এই রোগে খাদ্যাভাসে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়। সেই সঙ্গে ঘরোয়া ব্যায়াম আবশ্যক। তবে যারা রোজায় বিশ রাকআত তারাবী নামাজ পড়েন তাদের হালকা ব্যায়াম করলেই হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবারে অনেকে কার্বোহাইড্রেট একেবারে বাদ দিয়ে দেন। তা করা যাবেনা। কারণ, মস্তিষ্কের খাদ্য গ্লুকোজ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে।

তাই Simple Carbohydrate যেমন- চিনি, কোল্ড ড্রিংকস ইত্যাদি বাদ দিয়ে Complex Carbohydrate যাতে ফাইবার কনটেন্ট বেশি যেমন- ব্রাউন ব্রেড, গমের রুটি, ওটস, ব্রাউন রাইস খেতে হবে। তবে উচ্চমাত্রার আঁশজাতীয় খাবার (High fibre) বেশি খেলে ক্যালসিয়াম শোষণে (Calcium Absorb) বিঘ্ন ঘটবে। সেক্ষেত্রে পরিমাণমত খেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন, রোজার সুস্থতা।।পর্ব ২।। রাতের খাবার ও সেহরি

পিসিওএস আক্রান্তের খাদ্যাতালিকায় কার্বের থেকে বেশি পরিমাণ প্রোটিন রাখতে হবে। ডিম, দুধ হতে পারে আদর্শ খাবার।সপ্তাহে ৪ দিন কুসুমসহ ও ৩ দিন কুসুমছাড়া ডিম খেতে পারেন। হাই প্রেশার থাকলে গরুর মাংস বাদ দিয়ে ভেজিটেবল স্যুপ এর সাথে এক পিস মুরগির মাংস খান। তবে খেয়াল রাখতে হবে ডিপ ফ্রাইড এবং অতিরিক্ত তেলের খাবার যেন না খান।

সবুজ শাকসবজি যেমন-ব্রকলি, সবুজ শাক, লেটুস ইত্যাদি বেশি করে খাবেন। তবে থাইরয়েড যাদের রয়েছে তারা ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম খাবেন না। কারণ, এসব খাবার থাইরয়েড হরমোনের আয়োডিনকে ব্যবহারের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

এরপর আসে ফল। ফল হচ্ছে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। যেসব ফলে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম সেসব ফল খাবেন। যেমন- আম, কলা, খেজুর, আঙুর, চেরি, পেয়ারা, লেবু, কমলা, মাল্টা, নাশপাতি ইত্যাদি। তবে পাকা আম, খুব মিষ্টি কলা, লাল আপেল জাতীয় ফল পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে।

সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ওমেগা ৩ জাতীয় খাবার। যেমন-বাদাম, অলিভ ওয়েল, আ্যভোকাডো, পিনাট বাটার, সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, হ্যালিকাট, টুনা, সারডিন্যাস, মাকেরেল, হেরিং ইত্যাদি)। তাছাড়াও ইলিশ, রূপচাঁদা ও পাঙ্গাশ মাছে অল্প পরিমান পাওয়া যায়।

সবার যেহেতু বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাজের ধরণ ও রোগ ইত্যাদি ভিন্ন তাই সবার খাবারের চাহিদাও ভিন্ন। তাই পিসিওএস আক্রান্তরা যেকোনো একজন পুষ্টিবিদকে (Expert Dietitan) দিয়ে খাদ্যতালিকা করে নেবেন। এই রোজায় খাবারের তালিকা বোঝার সুবিধার্থে একটি উদাহরণ দেয়া হল।

ইফতার (যেকোনো একটি)

  • টকদই+চিড়া+কলা (স্যুপের বাটি সাইজের ১ বাটি)
  • ফলের শরবত চিনি ছাড়া। সঙ্গে ২-৩ টি খেজুর
  • সবজি স্যুপ

রাতের খাবার (যেকোনো একটি)

  • এক গ্লাস দুধ ননী তোলা (তবে যাদের দুধ হজমে সমস্যা হয়, তাদের না নেয়াই উত্তম)
  • ১ টি সবুজ আপেল
  • পাকা পেঁপে ২ পিস

সেহেরি ( যেকোন ১ টি)

  • ১-২ টি গমের রুটির সঙ্গে সবজি ২ কাপ ও মাছ/মাংস এক পিস
  • ১ টি সিদ্ধ ডিম, এক কাপ (১২৫এমএল) কর্ণফ্লেক্স বা ওটস
  • এক কাপ কর্ণফ্লেস্ক বা ওটসের সঙ্গে একটু পাতলা দুধ মিলিয়ে খাবে।

সবশেষে বলবো পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম কোনো রোগ নয়, এটি হরমনজনিত সমস্যা। এই সমস্যায় সুস্থ থাকতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই এটি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মানসিক শক্তি আপনার লড়াইকে দ্বিগুন শক্তিশালী বানাবে। তাই সুস্থ থাকতে সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।

সারাবাংলা/আরএফ

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন