বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জে অসহায়দের বাড়িতে খাবার নিয়ে হাজির র‍্যাব

May 15, 2020 | 4:55 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) থাবায় নারায়ণগঞ্জে অভাবগ্রস্ত মানুষের বাড়িতে রাতের বেলায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে র‍্যাব-১১। সংক্রমণের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবারের কাছে তারা পৌঁছে দিয়েছে সহায়তা। আর এ সহায়তার জন্য কাউকে কোথাও যেতে হচ্ছে না। বরং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এই এলিট বাহিনীই।

বিজ্ঞাপন

নভেল করোনাভাইরাসের আক্রমণে শুরুতেই হটস্পটে পরিণত হয় নারায়ণগঞ্জ। গত ৮ এপ্রিল এ জেলা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েন প্রচুর মানুষ। আর এই জেলাতে ভাসমান ও শ্রমিক শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বেশি থাকায় তারা খাদ্য সংকটের মুখে পড়েন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানবিক সংকটে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন র‌্যাব সদস্যরা। শুরুতে ব্যাটালিয়নের সদস্যদের আর্থিক সহায়তায় এই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করে র‍্যাব-১১। পরে স্থানীয় বিত্তশালীদের সহায়তায় এ কার্যক্রমর পরিসর আরও বড় হয়। গত ৮ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত একমাস তিন দিনে সাড়ে ৬ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে র‍্যাব-১১।

প্রথমে নিজস্ব লোকবল দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের অভাবগ্রস্ত মানুষের একটি তালিকা করেছে র‍্যাব-১১। পরে সেই তালিকা অনুযায়ী ওই লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

একেকটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৫ থেকে ১০ কেজি চাল, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ লিটার তেল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলা, আধা কেজি মুড়ি, ১ কেজি লবণ, ১ থেকে ২ কেজি চিনি, দুইটি সাবান।

এসব পরিবারের বাইরেও ১৭২ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারকে এবং ৭৩০টি শিশুর জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে র‍্যাব-১১। অভাবগ্রস্ত তিন প্রবাসীর পরিবারের কাছ থেকে ফোন পেয়ে তাদের বাড়িতেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে র‍্যাব। এ ছাড়া সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার যেসব মানুষ আত্মমর্যাদার জন্য কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না, তারা যোগাযোগ করলে তাদেরও সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন র‌্যাব-১১ সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে বেকার হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকেই। সবকিছু বন্ধ থাকায় তাদের কাজ নেই। কাজ না থাকার কারণে উপার্জনও নেই, ঘরে খাবার নেই। কিন্তু অনেকেই আত্মসম্মানের কারণে কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। ফলে তারা সরকারি ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে সহায়তায় এগিয়ে এসেছে র‍্যাব। রাতের বেলায় র‍্যাব সদস্যরা তাদের বাড়িতে গিয়ে খাবার দিয়ে আসছেন।

অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর এই কর্মযজ্ঞ পালনে নেতুত্ব দিচ্ছেন র‌্যাব-১১ এর পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। দিনভর নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সেরে রাত হলেই খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছুটে চলেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। এ তালিকায় বাদ যাচ্ছেন না সমাজের পিছিয়ে থাকা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ কিংবা অন্ধ-পঙ্গু ছিন্নমূলের মানুষও।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।

আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘সারাদিন অফিসের কাজ শেষে আমরা রাতের বেলা ছিন্নমূল-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। দিনের বেলায় সাধারণত আমাদের নিয়মিত অফিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ ছাড়া রাতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি ভালোভাবে মেনে চলা যায়। যাদের ঘরে খাবার থাকে, তারাতো আর না খেয়ে রাত জেগে রাস্তায় বসে থাকছেন না। যার আসলেই খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছাতেই সবকিছু বিবেচনায় রাতকে বেছে নিয়েছি কোনো পেশাগত অর্পিত দায়িত্ব নয়, বরং নিজের মানবিক বোধ থেকেই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।’

বিজ্ঞাপন

আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যতটা সম্ভব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। করোনাভাইরাসের কারণে অচলাবস্থা যতদিন থাকবে, ততদিন চেষ্টা করব এই উদ্যোগ চালিয়ে নিতে।’

র‍্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার জানান, ‘দুর্যোগের এ কালে মানবিক দিক বিবেচনা করেই এগিয়ে এসেছে র‍্যাব। সংস্থাটির সদস্যরা দিনের বেলায় সরকারি দায়িত্ব পালন করছে আর রাতের বেলায় অভাবগ্রস্ত মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব ও র‍্যাব সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, ‘আর্তমানবতার সেবায় সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের অনাহারী ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য র‍্যাব এগিয়ে এসেছে। দিনের বেলায় সরকারি দায়িত্ব পালন শেষে রাতে বিশ্রামের সময় তাদের এ সহায়তা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’

সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন