বিজ্ঞাপন

করোনা সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

May 21, 2020 | 8:22 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর ১১ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আশঙ্কা করছেন, এখনো বাংলাদেশ সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছেনি। বরং করোনা সংক্রমণের ‘পিক টাইমে’র দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে দেশে সংক্রমণ এখনো বাড়লেও সেটি ‘লাফিয়ে লাফিয়ে’ বাড়ছে না বলেও মন্তব্য তার।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী বলেন, আমরা করোনা সংক্রমণের ৭০ দিন পার করেছি। আমি মনে করি, আমরা এখন করোনা সংক্রমণের পিক টাইমের দিকে যাচ্ছি। যেদিন থেকে দৈনিক শনাক্তের হার কমতে শুরু করবে, তখন আমরা বলতে পারব যে পিকে ছিলাম, এখন নামছি। এখন সংক্রমণ বাড়ছে। তারপরও এখন আমি মনে করি, তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে না, ঠিকই আছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মে) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে কোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদিত ওষুধ বেমসিভির গ্রহণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে বেমসিভির তুলে দেন।

বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসের তৈরি বেমসিভির বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ রোগের ভ্যাকসিন বা ওষুধ এখনো তৈরি হয়নি। বেশকিছু ওষুধ বাজারে এসেছে। এসব ওষুধ কিছু কিছু মাত্রায় কাজ করে, কিন্তু শতভাগ কাজ হচ্ছে না। আমেরিকায় এটা ইমার্জেন্সি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। আমাদের দেশেও খুবই মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে এই ওষুধটি দেওয়া হবে। সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেবেন। বেক্সিমকো প্রথম কোম্পানি, যারা দেশে এই ওষুধটি তৈরি করেছে। আশা করি, এটি দিয়ে মানুষের উপকার হবে, হয়তো জীবন রক্ষা হবে।

বিজ্ঞাপন

জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্বের বহুদেশ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশ থেকেও দেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ছয়টি কোম্পানিকে কোভিড-১৯ চিকিৎসা ওষুধ প্রস্তুত করতে প্রাথমিকভাবে অনুমতি দিয়েছে। এই ওষুধগুলো আরও ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই বাজারজাত করতে হবে। উপযুক্ত পরীক্ষা ছাড়া উৎপাদিত ওষুধগুলো এখনই বাজারজাত করা যাবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও অনেক ধরনের ওষুধের নাম এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ এখন পর্যন্ত বিশ্বের কোনো দেশই শতভাগ কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, একটি মৃত্যুও কাম্য নয়। তবু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। তবে আমরা সাধ্যমতো কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। আর বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই রোগী বাড়ছে। তুলনামূলকভাবে আমরা অন্য দেশের তুলনায় এখনো ভালো আছি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রতিনিয়তই এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন এবং পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে আমরা কোভিড আক্রান্তদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতাল করেছি। নতুনভাবেও আমরা বেশ কিছু হাসপাতাল নিয়েছি। দুই হাজার বেডের বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারও রেডি হয়ে গেছে। নর্থ সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৩০০ বেডের আইসোলেশন সেন্টারও প্রায় রেডি হয়ে গেছে। টেস্টেও সফলতা আমরা পেয়েছি। আমাদের কমিটমেন্ট ছিল, মে মাসে প্রতিদিন ১০ হাজার টেস্ট করার, দু’দিন আগেই সেটা হয়ে গেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে বরাবারের মতো সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। শপিংয়ে যেতে ও একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে নিরুৎসাহিত করেন তিনি। তিনি বলেন, মায়েরা কাপড়-চোপড় কিনতে যাচ্ছেন, ছোট বাচ্চাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি অনুরোধ করব, আপনারা যাবেন না, বাচ্চাদের নিয়ে যাবেন না। নিজেরাও আক্রান্ত হবেন, শিশুরাও আক্রান্ত হয়ে যাবে। ঈদ তখন আর আনন্দের থাকবে না, নিরানন্দের হবে। দেখা যাবে একটা বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে নাজমুল হাসান পাপন বলেন, সব সরকারি হাসপাতালে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ কারণে আমরা সরকারি হাসপাতালের গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য বিনামূল্যে বেমসিভির দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ওষুধ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, সিএমএসডির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শহিদুল্লাসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় আমেরিকায় জিলিড বায়োসায়েন্স তৈরি করে রেমডিসিভির। দেশে এই ওষুধটিই বেমসিভির নামে উৎপাদন করছে বেক্সিমকো ফার্মা। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই ওষুধ আপাতত সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগীদের শরীরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োগ করা হতে পারে। একইসঙ্গে এই ওষুধ এখনই বাজারজাত করা হবে না বলেও জানান বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন