বিজ্ঞাপন

২৩ মে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা চাই

May 23, 2020 | 6:55 pm

সুমন শামস

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব ইতিমধ্যে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছে, দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী সকল নৌযান বন্ধ থাকার কারণে এ বছর ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে নদীতে একটি নৌযানো ভাসবে না। এ বছর নদীপথে দূর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। নদী এখন শতভাগ নিরাপদ।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাসের লকডাউনে দেশের নদ-নদী ও পরিবেশ-প্রকৃতি নতুন রূপে সেজে আছে। নদীর জলে কল-কারখানার দূষিত বর্জ্য পড়েনি তাই মরা নদীর জলে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে মাছের আনাগোনা বেড়েছে, বুড়িগঙ্গা নদী এবং তুরাগ নদীতে শুশক খেলা করছে, কারণ দুর্গন্ধ কমে গেছে। কারখানা এবং মোটরগাড়ি বন্ধ থাকার কারণে বায়ূদুষণ হয়নি তাই গাছপালা, লতাগুল্ম আগের চেয়ে অনেক বেশী সবুজ রঙে সেজেছে এবং মনুষ্যসৃষ্ট দূষণ কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশ তার আপন গতি ফিরে পেয়েছে।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিরল প্রজাতির ডলফিনের মনোমুগ্ধকর নৃত্য, হাজার হাজার কচ্ছপ সমুদ্রের তীরে উঠে এসে ডিম পাড়ছে আবার বালিয়াড়িতে লাল কাঁকড়াদের ঝাঁক! এসব দৃশ্য আমাদের আনন্দিত করে। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে এই সময়ের নদী নিরাপত্তা, দূষণমুক্ত নদী, সবুজ পরিবেশ, আবর্জনামুক্ত সমুদ্রসৈকত আমরা ঠিক রাখতে পারবো তো?

আধুনিক নৌবাণিজ্য প্রতিষ্ঠা পেতে হলে এখনই সমগ্র দেশের নৌপথ নিরাপদ করার উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশের নদ-নদী এবং সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজ নির্মাণে বিশেষ করে বাংলাদেশের নৌ-স্থপতিদের ভুমিকা জরুরী। সারাবিশ্বের মধ্যে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে বাংলাদেশ অনেক সুনাম অর্জন করেছে। তবুও কেন নদীমাতৃক দেশের নৌপথের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো নির্মাণে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করা হয় না?

বিজ্ঞাপন

বিশেষ করে বাংলাদেশের নৌযানগুলোতে কোন ধরণের বর্জ্য পরিশোধনাগার নেই। তাই জাহাজের সকল ধরণের তরল বর্জ্য এবং কঠিন বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে দেয়া হয়। যাত্রীবাহী জাহাজ বা লঞ্চে মল-মূত্র শোধন না করেই নদীর পনিতে ছেড়ে দেয়া হয়। আবার নদীর পানি শোধন করা ছাড়াই ব্যবহার করা হয়। প্রতিবছর মে মাস বা বর্ষা আসলেই আমাদের মনের মধ্যে এক ভয় কাজ করে। ঘুমের মধ্যে ভেসে ওঠে মেঘনা নদীর উত্তাল দৃশ্য। মেঘনা নদীর তীরে কতশত মানুষের কান্নার শব্দে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। মেঘনা নদীর জলে কচুরিপানার সাথে ভেসে যাচ্ছে নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরীর মৃতদেহ। কেউ নদীর পাড়ে গগণবিদারি চিৎকার করে মা বলে কাঁদছে। কান্নাজড়ানো চোখে শতশত মানুষ ভীড় করে জমাট হয়ে নিরুপায় চোখে
তাকিয়ে আছে মেঘনা নদীর দিকে। বলছিলাম ২০০৪ সালের ২৩ মে গভীর রাতে মেঘনা নদীতে ডুবে যাওয়া লঞ্চ এম ভি লাইটিং সান নামের একটি যাত্রীবাহী অথচ চলাচলের অযোগ্য লঞ্চ দূর্ঘটনার কথা।

সেদিন আমার গর্ভধারিনী মা আছিয়া খাতুন মাদারীপুর আড়িয়াল খাঁ নদীবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে গ্রামের ফসল তোলা শেষে ঢাকার পথে ফিরছিলেন মা আছিয়া খাতুন। মাদারীপুরের খাসেরহাট বন্দর থেকে এম ভি লাইটিং সান নামের লঞ্চটিতে কেবিনের যাত্রী ছিলেন তিনি। আড়িয়াল খাঁ নদীতে চলন্ত অবস্থায় মেঘলা আকাশের মধ্যে লঞ্চটি ছেড়ে আসার সময় নদীতে উত্তাল ঝড় শুরু হয়। যাত্রীদের মধ্যে লঞ্চটি ডুবে যাবার ভয় সৃষ্টি হলে লঞ্চের মাস্টারকে নোঙর করতে বলে কাজ হয়নি। লঞ্চটি এই বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে আড়িয়াল খাঁ নদী পার হয়ে মেঘনা নদীতে পৌঁছালে ঝড় আরো বেড়ে যায়।
যাত্রীদের চিৎকার থামাতে বরং লঞ্চস্টাফরা লাঠিপেটা করে চুপ করিয়ে লঞ্চটি চালাতে থাকে।

মেঘনা নদীর বাঁকে চাঁদপুরের কাছে আনন্দবাজার এলাকার কাছাকাছি যেতেই শুরু হয় আরো ভয়ঙ্কর ঝড়। দেড়তলা লঞ্চে একশ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার ছোট লঞ্চটি সেদিন তিনশতাধিক যাত্রী নিয়ে প্রায় একঘন্টা প্রবল স্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল। লঞ্চের যাত্রীরা সেদিন নিজের জীবন বাঁচাতে উত্তাল নদীর স্রোতের মধ্য লাফিয়ে পড়ে, কেউ অজ্ঞান হয়ে যায়, কেউ আল্লাহর নাম নিতে থাকেন তারপর রাত ২:২০ মিনিটের সময় লঞ্চটি মেঘনার ঘুর্ণিস্রোতে উল্টে যায়। মেঘনা নদীর পাড়ে তিনশতাধিক যাত্রীসহ ডুবে যাওয়া সেই লঞ্চটি উদ্ধার করার মতো তখন কেউ ছিল না। আমার জননী এবং সহোদর মিলন আকন একটি ক্যাবিনের যাত্রী ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতি দেখে ঘুমন্ত ছেলেকে ডেকে মহাবিপদের কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, নদীতে অনেক ঝড় উঠেছে মনে হয় লঞ্চটি ডুবে যাবে। ঘুমন্ত ভাই আমার জানালায় গিয়ে নদীর ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে ভাবছে এখন কি করা যায় ঠিক তখন আমার জননী নিজের জীবনের চেয়ে ছেলের জীবনের কথা ভেবে আমার ভাইকে রক্ষা করার জন্য নদীতে ফেলে দেয়। তার পরেই উল্টে যায় আমার মায়ের সকল স্বপ্ন, নিভে যায় জীবন প্রদীপ আর অন্ধকার হয়ে আসে সমগ্র পৃথিবীর আলো।

সেই রাতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা একটি লবনবাহী জাহাজ ঠিক সেই সময় মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছিলো। নদীর মধ্যে মানুষের আর্তনাদে কাছাকাছি গিয়ে জাহাজের নোঙর বাধা শেকল নদীতে নিক্ষেপ করলে আমার সহোদর সেকল ধরে রাখলে জাহাজের শ্রমিকরা সেকলের সাথে তাকে টেনে তোলে। একই সময় লাইফ বয়া ধরে কেউ কেউ ভেসে থাকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল।

একটি সকাল আমাকে এমন সংবাদ দিয়ে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ছিল। তারপর থেকে আর ঘুম আসে না দুই চোখের পাতায়। জেগে থেকে ভাবছিলাম যে, বাংলাদেশ নদীমাতৃক অথচ এই নদীপথের নিরাপত্তা নেই কেন?

সেই থেকে নদীপথের যাত্রী নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার শপথ গ্রহণ করে নোঙর নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তোলার চেষ্টা করি। আমাদের অনুসন্ধানে দেখেছি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে বিভিন্ন নদীতে লঞ্চ দূর্ঘটনায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো শতশত মানুষ। পরিবারের প্রিয় মা-বাবা, ভাই-বোন হারিয়ে আজ পর্যন্ত আমার মতো অনেকেই দিশাহারা হয়ে বেঁচে আছেন যারা; তাদের জন্য আমার সমবেদনা জানাই।

বিজ্ঞাপন

কেন এই নৌ-দূর্ঘটনা? প্রতি বছর ঈদে ঘরমুখী দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য স্পেশাল সার্ভিসের নামে প্রস্তুত করা হতো চলাচলের অযোগ্য, লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা, তালি দেয়া শতাধিক লঞ্চ। ত্রুটিপূর্ণ নকশায় নির্মাণ করা আর অদক্ষ চালকের এসব আনফিট লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন হতো অধিক মুনাফার জন্য। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের ৮০ ভাগ লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে ত্রুটিপূর্ণ নকশার নৌযান ও অদক্ষ চালকের কারণে।

লঞ্চ মালিকরা বিআইডব্লিউটিএ থেকে লঞ্চ নির্মাণের জন্য নকশা পাস করিয়ে নিলেও ডকইয়ার্ডে গিয়ে নিজেদের মতো করে লঞ্চ তৈরি করেন। দেড়তলার অনুমোদন নিয়ে তৈরি করেন তিন থেকে সাড়ে তিনতলা লঞ্চ। ত্রুটিপূর্ণ এসব লঞ্চ সামান্য দুর্যোগে একটু কাত হলেই ডুবে যায়। গত ১৫ বছরে ত্রুটিপূর্ণ নকশায় নির্মাণ করা আর অদক্ষ চালকের কারণে শতাধিক লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় সহস্রাধিক মানুষ। বাংলাদেশের ১৩ হাজার লঞ্চের মধ্যে যাত্রীবাহী নৌযান ২ হাজার ২২৫টি। যাত্রীবাহী নৌযানের মধ্যে বছরে ফিটনেস পরীক্ষা বা সার্ভে করা হয় মাত্র ৮৫০ থেকে ৯০০টির। সার্ভে না করার কারণে ফিটনেসবিহীন নৌযান চলাচল করায় প্রতিবছরই ঘটে নৌদুর্ঘটনা, মৃত্যু হয় হাজার মানুষের। ফলে সারাবছরই নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা থাকেন চরম ঝুঁকির মধ্যে।

প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে আনফিট লঞ্চগুলোকে জোড়াতালি দিয়ে রং করার মাধ্যমে চাকচিক্যের কাজ শেষ করে প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু ঈদের আনন্দে ঘরমুখী দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ঘরে ফেরা কতটা নিরাপদ হয় তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

১৯৯১ সালে তৈরি এমএল পিনাক-৬ লঞ্চটি শান্ত পানিতে চলাচলের জন্য সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর সনদ দেয়। এতে যাত্রী ওঠার কথা ছিল সর্বোচ্চ পঁচাশিজন। কিন্তু দুর্ঘটনার দিন এতে তিন থেকে চার গুণ যাত্রী উঠানো হয়। ২০১৪ সালের ৪ আগষ্ট অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং প্রবল স্রোতের কারণে লঞ্চটি ডুবে যায়। গত ২০১৪ সালের ১৫ মে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার দৌলতপুরের কাছে মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে এমভি মিরাজ-৪ নামে একটি লঞ্চ ডুবে যায়৷ ঐ ঘটনায় নদী থেকে মোট ৫৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়৷ এছাড়াও গত বছরের ৩০শে জুলাই সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় যমুনা নদীতে নৌকাডুবে আট জনের মৃত্যু হয়৷ তার ঠিক দুদিন আগেই কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীতে নৌ-ভ্রমণে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন৷

২০০০ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ১৩ বছরে দেশে লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ৷ এর মধ্যে শুধু এমভি নাসরীন-১ দুর্ঘটনায় ৩৬ শিশুসহ আট শতাধিক প্রাণ হারায়৷ ২০০৩ সালের ৮ই জুলাই রাতে চাঁদপুরে মেঘনার মোহনায় ঘূর্ণিতে পড়ে দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছিল ধারণক্ষমতার প্রায় তিনগুণ যাত্রী নিয়ে চলা ওই লঞ্চ৷

নোঙরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০১ সাল থেকে ২০১৪ সালের ১৫ মে পর্যন্ত লঞ্চ দূর্ঘটনা ঘটে ৪৪১টি। এর মধ্যে ২০০১ সালে ৭টি দুর্ঘটনায় মারা যায় ৪০ জন, ২০০২ সালে তিনটি দুর্ঘটনায় ৬০ জন, ২০০৩ সালে তিনটি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ১ হাজার ১০৫ জন, ২০০৪ সালের ২৩ মে একরাতেই তিনটি লঞ্চু ডুবিতে ৩০০ যাত্রী নিহত হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১১টি দুর্ঘটনায় ৫০৩ জন, ২০০৭ সালে ১০টি দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন, ২০০৮ সালে তিনটি দুর্ঘটনায় ১১২ জন, ২০০৯ সালে চারটি দুর্ঘটনায় ২৩২ জন মারা যায়। এর মধ্যে ২০০৯ সালের ২৭ নভেম্বর ভোলার তেঁতুলিয়া নদীতে এমভি কোকো-৪ দুর্ঘটনায় শতাধিক যাত্রী নিহত হন।

২০১০ সালের ১২ মে বাজিতপুর উপজেলার ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদী মোহনায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে ১৭ জনের লাশ উদ্ধার করতে পারলেও ২৫ জন নিখোঁজ হন। ২০১১ সালে লঞ্চডুবিতে মারা যায় ৩৩ জন, ২০১২ সালের ১২ মার্চ রাত ২টার সময় ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যাওয়ার পথে মেঘনা নদীর মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় একটি কার্গোর সাথে ধাক্কা খেয়ে এমভি শরীয়তপুর-১ লঞ্চটি ডুবে যায়। এতে শতাধিক যাত্রীর মৃত্যু হয়।

২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ-মতলব মাছুয়াখালগামী এমএল সারস লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে সকাল পৌনে ৮টার দিকে মেঘনা নদীর মুন্সিগঞ্জের ইস্পাহানিরচর নামক স্থানে বালুবাহী কার্গোর সাথে ধাক্কা খেয়ে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। এতে অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যু ঘটে।

নদীপথে নিয়মনীতি মেনে না চলায় প্রতি বছরই ঘটছে এমন নৌদুর্ঘটনা। মেঘনা নদীর মোহনায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে একটি মহল অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। নদীতে এলোপাতাড়িভাবে বাল্কহেড ও ড্রেজার চলাচল ও রাখায় দেশের প্রধান নৌ-রুটটির এ স্থানটিতে নৌযান চলাচলে মারাত্মক হুমকি দেখা দিয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী সরঞ্জামাদি ও জনবল না থাকায়, গাফেলতির কারণে প্রাণহানি ও সলিল সমাধির সংখ্যা বাড়ছে। এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও অধিকাংশ সময়ই এসব কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। ১২ বছরের লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রায় ২০০টি তদন্ত কমিটি করা হলেও মাত্র ৫/৭টি কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

নোঙর গত ১৫ বছর ধরে বহুবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে ২৩ মে দিবসটি নৌ-নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করছে। নদীমাতৃক দেশে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ নৌপথে নিহত হয়েছেন তাদের স্মরণে একটি জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা করা জরুরী। কারণ সমগ্র পৃথিবীর কোন দেশে নৌ-নিরাপত্তা দিবস পালন করা হয় না। ২৩ মে তারিখে নোঙরের জন্য একটি মাইলস্টোন হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম আন্দোলন শুরু।

এই দিনটিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন এই যে, গত ৪৮ বছরে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌপথে দূর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে ২৩ মে কে জাতীয় নৌ-নিরাপত্তা দিবস ঘোষণা করে আগামী দিনের নৌপথের যাত্রীদের মধ্য স্থায়ী সচেতনতা গড়ে তোলার ব্যবস্থা করে দিলে একদিন সারা বিশ্বে এই দিবস পালিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক: সভাপতি, নোঙর (নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন)

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন