বিজ্ঞাপন

করোনা প্রতিরোধ-নিয়ন্ত্রণে কারাগারে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে

June 2, 2020 | 7:55 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের বা কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ এড়াতে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ৩০ মে। এরপর ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস ও কলকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সময় থেকে গণপরিবহনও চালু থাকতে পারবে বলে জানানো হয়েছে। তবে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

বিজ্ঞাপন

সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে গেলে অফিস-আদালত বা গণপরিবহনসহ বাসাবাড়িতেও যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, সে বিষয়ে কারিগরি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কারাগারে স্বাস্থ্য বিধি মানার বিষয়ে অধিদফতর যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো তুলে ধরা হলো-

কম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল-

১. কারাগারের অবস্থা অনুযায়ী প্রত্যেকটা ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় মহামারী প্রতিরোধক জিনিসপত্র যেমন- মাস্ক, গ্লাভস, জীবাণুনাশক সরবরাহ করা, প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। সেই সঙ্গে কারারক্ষীদের প্রশিক্ষণ জোরদার করতে হবে এবং কয়েদিদের মাঝে মহামারি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

২. কারারক্ষী (পুলিশ), কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কয়েদিদের স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ প্রতিনিধির (স্বাস্থ্যকর্মী) ব্যবস্থা করতে হবে। যাদের সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা যাবে- যেমন জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি তাদের অবশ্যই স্ক্রিনিং করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।

৩. মানুষের প্রবেশ বা বের হওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। কারাগারে কারারক্ষী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থ নিশ্চিত হলে কারাগারে প্রবেশ করতে পারবেন। নতুন কয়েদিরা ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে থাকার পর শারীরিক পরীক্ষা, শরীরের তাপমাত্রা এবং ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে সুস্থতা নিশ্চিত হলে হেফাজতে নেওয়া যাবে। মহামারীর সময় মুখোমুখি সাক্ষাৎ বন্ধ রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করতে হবে।

৪. নিয়ন্ত্রিত এলাকা এবং প্রশাসনিক ভবনে দৈনিক ২-৩ বারের জন্য ২০-৩০ মিনিট করে অবাধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এয়ারকন্ডিশনারের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে নিশ্চিত করুন, বিশুদ্ধ বাতাস চলাচল বৃদ্ধি করুন এবং সকল এয়ার সিস্টেমের (all air system) ফিরে আসা বাতাসকে বন্ধ রাখুন।

বিজ্ঞাপন

৫. আবাসন, কাজের এলাকা, ক্যান্টিন, গোসলখানা, গণ শৌচাগার, জনসমাগমের এলাকার মেঝেসমূহ এবং বারবার ধরতে হয় এমন জিনিসপত্র যেমন দরজা এবং সিঁড়ির হাতল জীবাণুনাশক দ্বারা বারবার পরিষ্কার করতে হবে।

৬. থালাবাসন এবং গ্লাস প্রতিবার ব্যবহারের পর সাবান পানি দ্বারা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

৭. খাবার গ্রহণ করার সময় দূরত্ব বজায় রেখে বসতে হবে এবং নিজস্ব থালাবাসন ব্যবহার করতে হবে।

৮. ক্যান্টিন এবং গণ শৌচাগারে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং পর্যাপ্ত সাবানের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৯. দৈনিক ময়লা পরিষ্কার করতে হবে এবং ময়লা সংগ্রহ করার স্থান জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে। নিষ্কাশন নল, বেসিন এবং ঝর্ণা ঘনঘন পরিষ্কার করতে হবে যাতে এদের কার্যকারিতা অব্যাহত থাকে।

১০. বিচ্ছিন্নভাবে বিনোদন এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করা যেতে পারে তবে সবার মাঝে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং দেখা-সাক্ষাত হ্রাস করতে হবে।

১১. জমায়েত এবং দলগত কাজ বন্ধ রাখতে হবে।

১২. কারাগারে কারারক্ষী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি নজর রাখতে হবে। হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় মুখ ও নাক টিস্যু অথবা কনুই দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং সাথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।

১৩. স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শগুলো এমনভাবে রাখতে হবে যেন সহজে দৃষ্টিগোচর হয়। কোভিড-১৯ কীভাবে প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে হবে।

১৪. একটা জরুরি অঞ্চল গঠন করতে হবে যেখানে কারারক্ষী, কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং কয়েদির কোভিড-১৯ সম্পর্কিত উপসর্গ দেখা দিলে (যেমন জ্বর-কাশি) তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে পৃথক রাখার ব্যবস্থা করা যায় এবং সময়মত চিকিৎসা দেওয়া যায়।

১৫. যদি নিশ্চিত কোভিড-১৯ রোগী থাকে তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুসারে সর্বত্র জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং একই সময়ে এয়ারকন্ডিশনিং ও ভেন্টিলেশন সিস্টেমকে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে এবং হাইজেনিক বা স্বাস্থ্যগত মূল্যায়ন হওয়ার আগে পুনরায় চালু করা উচিত না।

মাঝারি ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল-

উপরের নির্দেশিত পদক্ষেপ ছাড়াও নিচে বর্ণিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করতে হবে:

১৬. মানুষের প্রবেশ বা বের হওয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ডাইনিং (খাবার) পরিসেবা বন্ধ রাখতে হবে।

১৭. কারারক্ষী, কর্মকর্তা, কর্মচারী অথবা কয়েদি যিনি কোন মেডিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকে ফিরে এসেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি কোভিড-১৯-এর টেস্ট দ্বারা সুস্থ বলে বিবেচিত না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত কারাগারে প্রবেশ করতে পারবেন না।

১৮. কারাগারে কেউ কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে কারারক্ষীসহ সকল কয়েদিদের কারো মধ্যে কোভিড-১৯-এর উপসর্গ আছে কি না সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে সেখানকার সকল কয়েদিকে স্থানান্তর করা এবং রোগীদের জন্য আলাদা অঞ্চল, কোয়ারেনটাইন পর্যবেক্ষণ অঞ্চল এবং একটি সাধারণ অঞ্চল তৈরি করতে হবে। প্রশাসনিক কর্মকর্তার অধীনে একটি দল নিযুক্ত করতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করানোর জন্য বায়ু চলাচল ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। যেখানে রোগী শনাক্ত হয়েছে সে স্থান জীবাণুমুক্ত করা এবং কারাগার পরিপূর্ণভাবে জীবাণুমুক্ত করার জন্য বিশেষ লোকবল নিয়োগ করতে হবে।

১৯. যদি কারাগারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে যায় তাহলে শনাক্ত রোগী এবং যাদের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ আছে তাদেরকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কারাগারে কোয়ারেনটাইন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে মুমূর্ষু রোগীকে যথাসময়ে কোভিড-১৯ এর জন্য স্বীকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে, যাদের মধ্যে উপসর্গ লক্ষণীয় তাদেরকে স্বীকৃত হাসপাতালে স্থানান্তর করা এবং কড়া নজরদারী ও পরিপূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে রোগী বসবাস করছে সে স্থানকে বিশেষ লোকবলের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকার বিষয়ে জানানো হয়েছে।

সারাবাংলা/এসবি/এমআই

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন